|
|
|
|
মণ্ডপ-প্রতিমার বৈচিত্রে সেজেছে তমলুক |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
কোথাও দেবীর অলঙ্কার কাঁচের, কোথাও আবার জাপানি রানির মতো সেজে উঠছেন দেবী। এ বার কালীপুজোয় মণ্ডপসজ্জায় থিমের পাশাপাশি প্রতিমায় বৈচিত্র্য নজর কাড়বে তমলুকের বাসিন্দাদের। পুজোর দিন দুয়েক আগে থেকেই শহরের বিভিন্ন মণ্ডপে ব্যস্ততা তুঙ্গে। শহরের পুজো উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন ভাবনার প্রকাশ পেয়েছে মণ্ডপসজ্জা ও প্রতিমার অলঙ্কারে।
তমলুক শহরের শালগেছিয়ায় অমর সঙ্ঘের মণ্ডপ যেমন তৈরি হয়েছে রাজস্থানের মাউন্ট আবুর বৌদ্ধ মন্দিরের আদলে। প্রায় ৮০ ফুট উচু এবং অন্তত ৭০ ফুট চওড়া এই বিশাল মণ্ডপ তৈরি হয়েছে কাপড়, সানমাইকা দিয়ে। মণ্ডপে থাকছে পাটের নানা কারুকাজ। চণ্ডীপুরের শিল্পীদের তৈরি এই মণ্ডপের অন্যতম আকর্ষণ এর প্রতিমা। প্রায় ৮ ফুট উচু মাটির প্রতিমার গায়ে থাকছে কাঁচের অলঙ্কার। ক্লাবের সম্পাদক মুকুল মাইতি বলেন, “মণ্ডপসজ্জার পাশাপাশি দেবীর সাজ এ বার সবার নজর কাড়বে।” শালগেছিয়ার সপ্তরথী ক্লাবের পুজোর আবার অন্যতম আকর্ষণ প্রায় ১৬ ফুটের প্রতিমা। মণ্ডপসজ্জায় তেমন চমক না থাকলেও দেবী এখানে দশভূজা। প্রতিমাশিল্পী হারাধন ভট্টাচার্য বলেন, “দেবীর অসুর নিধন যজ্ঞের রূপ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। দেবীর চারিদিকে রয়েছে সাতটি অসুর।” পুজোর উদ্যোক্তারা জানান, প্রতিবারই মণ্ডপসজ্জার চেয়ে প্রতিমায় নতুন কিছু করার চেষ্টা করা হয়। দেবীর নানা রূপ তুলে ধরা হয়।
এ বারও প্রতিমার বৈচিত্র্যে নজর কাড়তে চলেছে তমলুকের দক্ষিণচড়া-শঙ্করআড়ার রিভারপ্লেট ক্লাব। মণ্ডপসজ্জায় তুলে ধরা হয়েছে বিভিন্ন রকমের দাবার বোর্ড। আর তাতে থাকছে বিভিন্ন দেশের নানা ধরনের দাবার ঘুটি। মণ্ডপে থাকছে ভারত, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, চিন ও জাপানের দাবার বোর্ডের অতিকায় রূপ। প্রায় সাড়ে তিন হাজার বর্গফুটের মণ্ডপসজ্জা হয়েছে প্লাইউড ও প্লাস্টার অফ প্যারিস দিয়ে। এখানে দেবীকে দেখা যাবে জাপানের দাবার ঘুটির রানির রূপে। পুরোটাই প্লাস্টার অফ প্যারিস দিয়ে তৈরি। রিভারপ্লেট ক্লাবের সম্পাদক গোপাল সামন্ত বলেন, “দাবা খেলার আকর্ষণ বাড়াতে বোর্ড ও ঘুটির আদলে মণ্ডপ ও প্রতিমা তৈরি হয়েছে।”
এ দিকে, দক্ষিণচড়া-শঙ্করআড়ার রাজদূত ক্লাবের মণ্ডপসজ্জা হয়েছে নেপালের পশুপতিনাথ মন্দিরের আদলে। ৫০ ফুট উচু মণ্ডপ তৈরি হয়েছে টিন দিয়ে। খেজুরির হস্তশিল্পীদের তৈরি এই মণ্ডপে প্রায় ৫ কুইন্টাল টিন ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিমায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে দেবীর আদি রূপ। ক্লাব সম্পাদক আশিস মাইতি বলেন, “পশুপতিনাথ মন্দিরটি টিন দিয়ে তৈরি বলে এখানেও একই ভাবে টিন ব্যবহার করা হয়েছে।”
তমলুক শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে নন্দকুমারের আলেয়া ক্লাবের পুজো মণ্ডপ ও প্রতিমা নিয়েও আগ্রহ তুঙ্গে। নন্দকুমার হাইস্কুল মাঠের মণ্ডপটি তৈরি হয়েছে মন্দিরের আদলে। ৭৫ ফুট উচু মণ্ডপের প্রধান আকর্ষণ তারের জালের কারুকাজ। আর বুলান দিয়ে তারি হয়েছে প্রতিমার সাজ। মণ্ডপের সামনে থাকছে সাজানো বাগান। তমলুক শহরের পুরসভা অফিসের কাছে নবীন সঙ্ঘের মণ্ডপ তৈরি হয়েছে চেন্নাইয়ের বিবেকানন্দ মঠের অনুকরণে। প্রতিমায় তুলে ধরা হয়েছে অসুর রক্তবীজ বধের সময় কালীর রূপ।
নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্ডে জোয়ারভাটা ক্লাবের মণ্ডপ আবার তৈরি হয়েছে লক্ষ্মীর ঝাঁপির অনুকরণে। বাঁশ, কুলো ও কাঠের ছিলা দিয়ে মণ্ডপের কারুকাজ করেছেন খেজুরির শিল্পীরা। গুহাচিত্রের আদলে তৈরি হয়েছে কালীপ্রতিমা। সব মিলিয়ে প্রতিমার সাজ, বৈচিত্র্যময় মণ্ডপসজ্জায় জমজমাট তমলুকের দীপাবলি। |
|
|
|
|
|