স্রেফ একটা পাসপোর্ট সাইজ ছবির জন্য আটকে গিয়েছিলেন শাহরুখ খান।
ওই একই ছবির জন্য আটকে গেলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও!
কোথায়? আর কোথায়, নিজের মহল্লায়। মানে, ইডেনে ঢুকতে গিয়ে! ক্লাবহাউসে প্লেয়ারদের ড্রেসিংরুমে ঢোকার রাস্তায় আটকে দেওয়া হল প্রাক্তন ভারত অধিনায়ককে। দরজায় তাঁর কোনও ছবি সাঁটা ছিল না (থাকার কথাও না), সৌরভকে তাই ওই রাস্তা দিয়ে মাঠে ঢোকার অনুমতি দিলেন না আইসিসি দুর্নীতিদমন অফিসার! যে ভাবে চার বছর আগে আইপিএলে আটকে গিয়েছিলেন শাহরুখ। বাইরে ছবি না থাকায় সে দিন নাইট মালিককেও ঢুকতে দেওয়া হয়নি তাঁরই টিমের ড্রেসিংরুমে।
কিন্তু ঠিক কী হয়েছিল মঙ্গলবার দুপুরের ইডেনে? ধোনি-কুক তখন টস করতে যাব-যাব করছেন। সৌরভকে ধারাভাষ্যের কাজে মাঠে যেতে হবে। এই মুহূর্তে ধারাভাষ্যকার হিসেবে যথেষ্ট জনপ্রিয় সৌরভ। কিন্তু ইডেনে কোনও ম্যাচে এ দিনই ছিল তাঁর ধারাভাষ্যে আবির্ভাব। প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সোজাসুজি ড্রেসিংরুমের পাশ দিয়ে মাঠে ঢুকতে যান। সে সময় ড্রেসিংরুমের দরজার কাছে হাজির ছিলেন ‘অ্যান্টি করাপ্শন’ অফিসার ধরমবীর সিংহ যাদব। যিনি পত্রপাঠ সৌরভকে বলে দেন, “আপনার ছবি এখানে নেই। তাই আপনি এখান দিয়ে ঢুকতে পারবেন না। অন্য রাস্তা দিয়ে মাঠে যেতে হবে আপনাকে।” |
প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, সৌরভ কথা বাড়াননি। কিন্তু ক্লাবহাউসের একতলায় উপস্থিত সিএবি কর্তাদের কেউ কেউ পুরো ঘটনা দেখে হকচকিয়ে যান। এমনকী ড্রেসিংরুমের বাইরে কর্তব্যরত পুলিশ অফিসাররাও চমকে যান এ জিনিস দেখে। কমেন্ট্রি করার ফাঁকে ক্লাবহাউসে সৌরভকে ধরা হলে তিনি বলেন, “না-না, এ রকম কিছু হয়নি।” ঘরের মাঠে বিতর্ক এড়াতে সৌরভ ব্যাপারটা এড়িয়ে গেলেও, সিএবি কর্তাদের কেউ কেউ মনে করছেন, আইসিসি-র দুর্নীতিদমন শাখার অফিসারের সৌরভকে না চেনার কোনও কারণই ছিল না। তা সে যতই নিয়ম থাক যে, ড্রেসিংরুমের বাইরে যাঁদের ছবি আছে, তাঁরাই শুধু ড্রেসিংরুমে ঢুকতে পারবেন। কয়েক জন সিএবি কর্তা এমনও মনে করছেন যে, ধরমবীর বাড়াবাড়ি করেছেন। ম্যাচ দেখতে আসা বাংলা রঞ্জি জয়ী দলের অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন ঘটনা শুনে বলেই ফেললেন, “আমি তো ভাবতেই পারছি না এ জিনিস ইডেনে ঘটতে পারে। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। যখন পাক ক্রিকেটাররা লন্ডনে বসে অক্রিকেটীয় কাজকর্ম করছিল, তখন কোথায় ছিল অ্যান্টি করাপ্শন ইউনিট?” দুর্নীতিদমন শাখার অভিযুক্ত কর্তাকে রাতের দিকে ফোনে ধরা হল। মিনিট দু’য়েক চুপ করে থেকে ধরমবীর বললেন, “দেখুন, সাংবাদিকদের সঙ্গে আমার কথা বলা বারণ আছে। আইসিসি-র ওয়েবসাইটে যান। আমার বসের নম্বর নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করুন, রেসট্রিকটেড জোন দিয়ে ঢোকার নিয়মগুলো ঠিক কী?”
এই বিতর্কটুকু বাদ দিলে, দেওয়ালির আগের রাতে ইডেনে কিন্তু খোশমেজাজেই পাওয়া গেল সৌরভকে। ফাঁক পেলেই নেমে এসে সিএবি কর্তাদের সঙ্গে আলাপচারিতা সেরে যাচ্ছেন। ইডেনে কমেন্ট্রির অভিজ্ঞতা নিয়ে এক উচ্চপদস্থ সিএবি কর্তার সঙ্গে কথা বলার সময় বলেও ফেললেন, “ম্যাচ খেলার উত্তেজনাটা আরও বেশি ছিল। এটা তার তুলনায় কিছুই নয়।” গ্রেগ চ্যাপেলের নতুন বইতে করা বিতর্কিত মন্তব্য---‘সচিন মানসিক ভাবে ভঙ্গুর’ নিয়ে প্রশ্ন উঠল। আর সৌরভ সেটা স্টেপ আউট করে ‘বাপি বাড়ি যা’ ভঙ্গিতে উড়িয়ে দিলেন। “ধুর, গ্রেগ চ্যাপেলকে নিয়ে আর কত বলব? ওকে নিয়ে কথা বলারই মানে হয় না।” ঘরের ছেলে মনোজ তিওয়ারি এ দিন সুযোগ পেয়েও বড় রান করতে ব্যর্থ। সৌরভ কিন্তু ‘দাদা’-র মতো মনোজের পাশে দাঁড়ালেন। কমেন্ট্রি বক্সে ঢুকে যাওয়ার ফাঁকে বলে গেলেন, “ভালই তো খেলছে ও। একটা আউট এ রকম হতেই পারে।” |