ক্রিকেটীয় অভিধান থেকে ‘বদলা’ শব্দটা তুলে দেওয়ার দাবি তুলেছিলেন মোহালিতে সিরিজ জিতে উঠেই। ইডেনে কুক-বাহিনীকে ৫-০ উড়িয়ে দেওয়ার পরেও মহেন্দ্র সিংহ ধোনির গলায় প্রতিশোধ নিয়ে ওঠার উচ্ছ্বাস নেই। নেই এতটুকু বাড়তি আবেগ। ‘ম্যান অব দ্য সিরিজ’-এর মোটরবাইক নিয়ে মাঠে পাক খেলেন ঠিকই। কিন্তু মাঠের আবেগ মাঠে রেখেই সাংবাদিক সম্মেলন করতে এলেন ‘ক্যাপ্টেন কুল’। ইংল্যান্ডকে ব্রাউনওয়াশ করার দিনেও বেশি করে বলে গেলেন নিজের দলের এখনও থেকে যাওয়া ফুটোফাটাগুলোর কথা!
“সিরিজ জিতলেই নেতিবাচক সব ব্যাপারগুলোকে কার্পেটের তলায় ঠেলে দেওয়া হয়। কিন্তু সেটা করলে চলবে না। আমাদের নিজেদের দুর্বলতা নিয়েও ভাবনাচিন্তা করতে হবে,” বলে দিলেন ভারত অধিনায়ক। কী দুর্বলতা? “প্রথম দশ ওভারে আমাদের পেসাররা খুব ভাল বল করতে পারেনি। স্পিনাররা সব ম্যাচে টার্ন না-ও পেতে পারে। সুরেশ রায়না প্রতি দিন ভাল বল না-ও করতে পারে। সেখানে পেসারদের সাফল্য পাওয়াটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। বোলিং বিভাগকে আরও ধারাবাহিক হতে হবে।” |
ইংল্যান্ড সফরের বিপর্যয়ের বদলা নয়, দেশের মাঠে কুকদের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজ খেলতে নামার আগে ধোনির টিম ইন্ডিয়া-র লক্ষ্য ছিল নিজেদের কাছে নিজেদের প্রমাণ করা। “আমরা প্রত্যাবর্তন নিয়ে খুব একটা ভাবিনি। আমাদের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল এই সিরিজ থেকে আমরা কী পেতে পারি। বদলার কোনও ব্যাপার নেই। আমাদের নিজেদের কাছেই নিজেদের প্রমাণ করার একটা তাগিদ ছিল। এই সিরিজটায় ভাল খেলা আমাদের নিজেদের জন্যই খুব দরকার ছিল,” বলছেন ধোনি। ব্রাউনওয়াশের আনন্দে তখন ধুয়েমুছে গিয়েছে ইংল্যান্ড সফর চলাকালীন টিম ইন্ডিয়া-র দিকে ছোড়া ব্রিটিশ মিডিয়ার যাবতীয় ব্যঙ্গ। ভারতীয় প্রাক্তনদের কড়া সমালোচনা নিয়েও আর ভাবছেন না ধোনি। বরং হেসে বলে দিচ্ছেন, “ও রকম সমালোচনা আমি খোলা মনে নিতে পারি। মানুষের কাজই তো অন্যের সমালোচনা করা। অবসর নেওয়ার পর আমি নিজেও হয়তো আরাম করে বসে সমালোচনা করব!”
ভারতে এই নিয়ে পরপর এগারোটা ম্যাচ হারল ইংল্যান্ড। ইংরেজ ক্রিকেটারদের কোনও পরামর্শ দেবেন? “এই ব্যাপারে আমি কিছু বললে সেটা বড্ড অভদ্রতা হয়ে যাবে। তবে হ্যাঁ, এটুকু বলতে পারি যে, ওদের সঠিক মনোভাব নিয়ে ভারত সফরে আসতে হবে। ব্যাটিং ইউনিট হিসেবে আরও জমাট হতে হবে। আগের ইংল্যান্ড দলে যেমন অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ ছিল, এই দলটারও সে রকম কাউকে দরকার। যে কি না সময় মতো ‘পাঞ্চ’ দিতে পারবে। এমনিতে কুকের এই দলটা যথেষ্ট ভাল,” জবাব ধোনির। |
গোটা সিরিজে ছ’নম্বরে নেমে অপরাজিত থেকে গিয়েছেন ভারত অধিনায়ক। ‘ফিনিশার’ হিসেবে ক্রমশ দুর্দান্ত হয়ে উঠছেন। শেষের দিকে ব্যাট করতে নামার জন্য কী কী প্রস্তুতি নিয়েছিলেন? “আমি সব সময় মনে রাখি, ছয় বা সাত নম্বরে নামলে আমার পরে বড় জোর আর এক জন ব্যাটসম্যান থাকছে। যার জন্য খুব সাবধানে খেলতে হয়। স্ট্রাইক রোটেট করার দিকে নজর রাখতে হয়। আমি নিজের ব্যাটিং-ধরন অনেক পাল্টে ফেলেছি। তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ঝুঁকি নিয়ে খেলা যায়। ছ’নম্বরে সেটা সম্ভব নয়।”
আঙুলে চোট নিয়েই পরপর সিরিজ খেলে যাচ্ছেন। অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে দেশের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে কি বিশ্রাম নেওয়ার কথা ভাবছেন? “দেখা যাক। এখন প্রত্যেকটা সিরিজ নিয়ে আলাদা আলাদা করে ভাবছি।” |