|
|
|
|
কালীপুজোতেও থিম, খুশির হাওয়া দুই শহরে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
কালীপুজোতেও এ বার ‘থিমে’র দাপট। দুর্গাপুজোর মতোই কালীপুজো ঘিরেও মেতে উঠছে খড়্গপুর-মেদিনীপুর। পুজো উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বস্ত্র বিতরণ থেকে বিসর্জনের শোভাযাত্রা--সবই প্রায় দুর্গাপুজোর ধাঁচে।
বাঙালির সব চেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজো। সে পুজো ঘিরে সাধারণ মানুষের উন্মাদনার সঙ্গে বোধহয় আর কিছুরই তুলনা চলে না। মাত্র ক’দিন হল শেষ হয়েছে দুর্গাপুজো। কিন্তু বাঙালির যে বারো মাসে তেরো পার্বণ। তাই কালীপুজো নিয়েও উন্মাদনার খামতি নেই। কালীপুজোর রাতেও শহর জুড়ে চলবে প্রতিমা দর্শন। রাত জাগবে দুই শহর। পুজোকে আকর্ষণীয় না করলে চলে!
খড়্গপুরের ইন্দার মহামায়া কালীপুজো কমিটি এ বার খাজুরাহোর মন্দিরের আদলে প্যান্ডেল তৈরি করেছে। পুজোর দিনগুলিতে থাকছে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতা। নাচ, গান, অঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে শহরের বহু কচিকাঁচা। ৩৮ বছর ধরে চলে আসা এই পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “দুর্গাপুজোর মতোই কালীপুজোকেও আকর্ষণীয় করতে শুধু আমরা নয়, এখন সবাই চেষ্টা চালাচ্ছেন।” আসলে কালীপুজো ঘিরেও যে ক্লাবে-ক্লাবে এখন ঘোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা। খড়্গপুর ইয়ুথ কর্নার অ্যান্ড সেভেন স্টারের পুজোও এ বার জমজমাট। জমিদার বাড়ির নাটমন্দিরের আদলে মণ্ডপ। আর তা তৈরি করা হচ্ছে বাঁশের ঝুড়ি দিয়ে। ঝুড়ির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে নানা ধরনের পুতুল, দুর্গা ও কালীর মূর্তি। থাকছে রথ, যে রথ টেনে নিয়ে যাচ্ছে ঘোড়া। ৩৯ বছর ধরে এই পুজো হচ্ছে। পুজো কমিটির এক উদ্যোক্তা মিলন চক্রবর্তী জানান, প্রতিবারই নতুন কিছু করার চেষ্টা হয়। এ বারও সে চেষ্টার ত্রুটি নেই। মেদিনীপুর শহরের পঞ্চুরচকেও দীর্ঘদিন ধরে কালীপুজো হচ্ছে। উচ্ছন্ন ক্লাবের উদ্যোগে এই পুজো। এ বার এখানে মন্দিরের আদলে প্যান্ডেল। বস্তুত মেদিনীপুর ও খড়্গপুরদুই শহরেই বাড়ছে কালীপুজোর ঘটা। বাড়ছে পুজোর সংখ্যাও।
|
|
বল্লভপুরের একটি মণ্ডপে গাছ বাঁচানোর বার্তা। নিজস্ব চিত্র। |
মেদিনীপুর শহরের বটতলাচকে কালীমন্দির রয়েছে। হবিবপুরেও রয়েছে কালীমন্দির। এই দু’টি স্থায়ী মন্দিরের পুজোও খুবই ঐতিহ্যবাহী। শহরের হাজার হাজার মানুষ এই সব মন্দিরে ভিড় জমান। এর বাইরেও রয়েছে কাঁথকালী, মোটাকালী, ফটককালী বা লচি পোদ্দারের কালীপুজো। কালীর এ সব নানা নামের সঙ্গে জড়িয়ে নানা কাহিনি। দেওয়ালের মধ্যে কালীর মূর্তি তৈরি করে মিয়াবাজারে পুজো শুরু হয়েছিল অনেক আগে। সেই থেকেই এই কালী কাঁথকালী নামে খ্যাত। মানিকপুরে বৃহৎ বড় মাপের কালী তৈরি করা হয়। সে কারণেই নাম হয়ে গিয়েছে মোটাকালী। আর বাড়ির দরজায় বা ফটকে কালীর প্রতিমা বানিয়ে পুজো হয় পটনাবাজারে। তাই এই কালী ফটককালী নামে খ্যাত।
ঐতিহ্যের এই পুজোর পাশাপাশি শহরের একাধিক পুজোয় রয়েছে থিমের আকর্ষণ। বল্লভপুরের ইন্ডিয়ান ক্লাবের ২০তম বর্ষের পুজোয় থাকছে গাছ বাঁচানোর বার্তা। মণ্ডপ থেকে প্রতিমা, সবই তৈরি হয়েছে নারকেল গাছের বিভিন্ন অংশ দিয়ে। নারকেল গাছ নানা কাজে লাগে। অথচ শহরের বুকে অনেকে এই গাছ কেটে ফেলছেন। পুজো কমিটির সদস্য আকাশ ভট্টাচার্য বলেন, “সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা আমরা ভুলতে পারি না। এই ভাবনা যদি একজনকেও সচেতন করে, সেটাই বড় প্রাপ্তি।” কেরানিতলার মহাবীর ক্লাবের পুজো মণ্ডপ জুড়ে আবার বিশালাকায় এক রাক্ষস। দেখে মনে হবে, রাক্ষসের মুখের মধ্যেই রয়েছে কালী প্রতিমা। রাক্ষসের মুখের অনুকরণে মণ্ডপ বানিয়েছে বল্লভপুরের নিউ বুলেট ক্লাবও। রাঙামাটির সমাগম ক্লাবের কালীপুজোর এ বার ২৩তম বর্ষ। মণ্ডপে মন্দিরের আদল। প্রতিমায় অভিনবত্ব। রামকৃষ্ণদেবের মাথার উপরে রয়েছে কালী প্রতিমা। টেরাকোটার আদলে তৈরি পুতুল দিয়ে বানানো হয়েছে সুভাষনগরের জীবন সঙ্ঘ ক্লাবের মণ্ডপ। ক্লাব সম্পাদক পার্থজিৎ চক্রবর্তী বলেন, “অল্প বাজেটের মধ্যেই আমরা নতুন কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।”
দুই শহর জুড়েই এ রকম প্রচুর পুজো হয়। পুজোর সঙ্গে এখন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর বস্ত্র বিতরণের চলও বেড়েছে। কোথাও কোথাও আবার পাত বেড়ে প্রসাদ খাওয়ানোরও রেওয়াজ রয়েছে। যেমন খড়্গপুরের গোপালনগরে স্থায়ী কালীমন্দির রয়েছে। পুজোর ক’দিন সেখানে চারদিকে যেমন সুন্দর আলোয় সাজানো হয় তেমনই পুজোর পর দিন দুপুরে প্রসাদ খাওয়ানো হয়। কম করে হাজার দু’য়েক মানুষ প্রসাদ নেন। তারই সঙ্গে বিসর্জনের শোভাযাত্রাও হয় ভীষণ সুন্দর। দুর্গাপুজোর মতোই কালীপুজোতেও শোভাযাত্রা করে বিসর্জনের চল বাড়ছে দুই শহরে। সব মিলিয়ে কালীপুজোও এখন ‘মেগা ইভেন্ট’।
|
|
|
|
|
|