শব্দের টুঁটি টিপে আলোর দীপাবলির অপেক্ষা আজ
পুলিশি তল্লাশি চলছে প্রায় প্রতি দিনই। আর, তার জেরে শব্দদানবের হাতে-পায়ে অনেকটাই বেড়ি পড়েছে বর্ধমানে।
দোকানে দোকানে আপাতত থরে থরে সাজানো হাউই, তুবড়ি, চরকি, ছড়রা, ধানিপটকা। কিন্তু চকোলেট? দোদমা? আলু বোমা? নৈব নৈব চ! অনেক দোকানেই বরং বড় করে লেখা ‘এখানে শব্দবাজি বিক্রয় হয় না’।
রাজ্যে শব্দবাজি নিয়ে কড়াকড়ি শুরু হওয়া ইস্তক ফি বছরই অবশ্য উপরে-উপরে এ রকম একটা আবহ থাকে। কিন্তু তলায়-তলায় বোমা বিক্রিও হয় দেদার। কালীপুজোর রাত ঘনাতেই ইতিউতি তাদের সশব্দ উপস্থিতি টেরও পাওয়া যায়। কিন্তু এ বার অবস্থা যেন একটু আলাদা।
বর্ধমানের তেঁতুলতলা বাজারে। নিজস্ব চিত্র।
মঙ্গলবার, বর্ধমান শহরের তেঁতুলতলা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বিক্রেতারা বাজি নিয়ে কথা বলতেই আগ্রহী নন। শেখ আঙ্গুর নামে এক বিক্রেতার মতে, “রোজই সকাল-বিকেল পুলিশ এসে দোকানে তল্লাশি চালাচ্ছে। প্রায় কোনও দোকানদারই শব্দবাজি রাখতে সাহস পাচ্ছে না। ক্রেতারা চাইলেও পাচ্ছে না।” তবে হরেক রকমের আলোর বাজি দোকানে রয়েছে। পুরনো বাজি ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে কিছু নতুনত্ব আনার চেষ্টাও আছে।
কিন্তু কেউ কেউ এখনও শব্দবাজির জন্যই মরিয়া। কুড়মুন থেকে ক্ষুদ্র বাজি বিক্রেতা অখিল সরকার (নাম পরিবর্তিত) তেঁতুলতলা বাজারে এসেছিলেন শব্দবাজি কিনতে। কিন্তু পাননি। তাঁর কথায়, “প্রতি বারই এখান থেকে শব্দবাজি কিনে নিয়ে যাই। এ বার গ্রামের খদ্দেরদের কী কৈফিয়ত দেব, কে জানে!” শহরেরই বাসিন্দা শেখ আনোয়ার (নাম পরিবর্তিত) বলেন, “বরাবরই পাড়ায় পুজোমণ্ডপের কাছে ফাঁকা জায়গায় আমরা শব্দবাজি ফাটিয়ে আনন্দ করি। কিন্তু সরকারি আইনে সব বন্ধ।”
ঘটনা হল, বহু দোকানদারই তলায় তলায় শব্দবাজির অর্ডার দিয়ে রেখেছিলেন। অনেকেই ভেবেছিলেন, প্রতি বারের মত এ বারও আদালত বা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের শব্দবাজি সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা কাগজে-কলমেই বহাল থাকবে। একটু চাপাচুপি দিয়ে ঢালাও বিক্রি হবে শব্দবাজি। কিন্তু পুলিশের সক্রিয়তা দেখে অনেকেই শেষমেশ অর্ডার বাতিল করতে বা নিদেনপক্ষে কমাতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু আগাম দেওয়া টাকা তাঁরা ফেরত পাননি। এর ফলে অনেকেরই ভাল লোকসান হয়েছে জানালেন বাজি বিক্রেতা শেখ রাজা, রাজেশ গোস্বামীরা।
ইতিমধ্যে যে কোনও ধরনের বাজি বিক্রি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে সোমবার থেকে হাজার হাজার হ্যান্ডবিলও বিলি করেছে একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের যুক্তি, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বাজির উৎপাদন বাড়লে হাজার হাজার নাবালক-নাবালিকাকে স্বল্পকালীন চুক্তিতে কাজে লাগানো হয়। আতসবাজির কাঁচামাল স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর শুধু নয়, সামান্য অসতর্কতায় জীবন সংশয় ঘটাতে পারে। তাই দেশ জুড়েই আতসবাজির ব্যবসা বন্ধ করা উচিত। যদিও অন্য বহু বিপজ্জনক কাজেও যে শিশুশ্রমিক ব্যবহার করা হয়, সে সম্পর্কে ওই হ্যান্ডবিলে কিছু বলা হয়নি।
বর্ধমানের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “আমরা এ বার শব্দবাজি বিক্রি রুখতে বদ্ধপরিকর। জামালপুর, মেমারি, বর্ধমান, কালনা, কাটোয়া, বুদবুদ ইত্যাদি থানা এলাকা থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৩ কুইন্ট্যাল শব্দবাজি আটক করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ১১ জনকে। আমাদের অভিযান চলবে।”
শব্দদানবের শাসন ছাড়িয়ে আলোকময় দীপাবলি আসে কি না, তা জানান দেবে আজ রাতই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.