স্বপ্ন আর বিষাদের ডানায় ভর করে ওড়ে সুবীরবাবুর ফানুস
বগ্রাম, ঝিলপাড়, হিন্দমোটর, উত্তরপাড়া...। ঘাড় উঁচিয়ে দূরত্ব আন্দাজ করার চেষ্টা করেন সকলে। নারকেলপাতার ছায়াঘেরা একটা ছোটখাট ছাদ থেকে কাল্পনিক দূরত্ব মাপতে মাপতে আকাশের কোল ছুঁয়ে ক্রমশ ছোট হতে হতে কখন চোখ থেকে হারিয়ে যায় জিনিসটা। দূরত্ব যত বাড়ে, ততই খুশির ঝিলিক উপছে পড়ে প্রৌঢ়ের চোখেমুখে। ফি-বছর কালীপুজোর সময় এলেই প্রতিবেশিরাও মুখিয়ে থাকেন, কখন আকাশে উড়বে সুবীর বসুর তৈরি হরেক রকম ফানুসের সারি। সেগুলো আকাশে উড়লে সুবীরবাবুর মনে হয়, যেন পাখা মেলে স্বপ্ন উড়ছে।
হুগলির কোন্নগর নবগ্রামের অর্জুনতলায় সুবীরবাবুর বাড়ি। একসময়ে পরিবারের বাস ছিল উত্তর কলকাতার হাতিবাগানে। সেখানে ঠাকুর্দা ফানুস ওড়াতেন। তারপরে বাবা। তাদের কাছ থেকেই ফানুষ ওড়ানোর হাতেখড়ি। সুবীরবাবু বলেন, “ছোটবেলায় দেখেছি, আকাশে প্রচুর ফানুস উড়ত। যে পাড়ায় থাকতাম, সেখানে যেন ঘুড়ির সঙ্গে টক্কর হত ফানুসের। রং-বেরঙের ফানুস। কিন্তু, ঘুড়ির কদর বাড়লেও ফানুস যেন ক্রমশ যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। এখন হাতে গোনা কয়েকজন ফানুষ তৈরি করেন।” এই হারিয়ে যাওয়া থেকেই ফানুসের অস্তিস্ব সগৌরবে টিঁকিয়ে রাখতে চান সুবীরবাবু। গত ৩৮ বছর ধরে তিনি কালীপুজোর সময় ফানুস উড়িয়ে আসছেন।
ছবি: প্রকাশ পাল।
ছোট বেলায় ঘুড়ির পোকা ছিলেন। বাড়িতে বেশ কয়েকটা লাটাই রয়েছে। তবে, এখন আর ঘুড়ি ওড়ান না। তার বদলে ভাবনাচিন্তা করেন নিত্যনতুন ফানুস তৈরি নিয়ে। গত তিন দশকে হরেক রকম ফানুস তৈরি করেছেন সুবীরবাবু। কখনও ঘড়ি, কখনও তারা, কখনও ফুটবল। আবার কখনও পাখি হয়ে আকাশে উড়ে গিয়েছে তাঁর তৈরি পাঁচ-ছ’ফুট লম্বা এক-একটা ফানুস। গত বছর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধ-শতবর্ষে কবিকে শ্রদ্ধা জানাতে তাঁকে নিয়ে বিশেষ ফানুস তৈরি করেছিলেন। তাঁর কথায়, “আসলে ছেলেবেলা থেকেই আকাশ আমাকে খুব টানে। আমি আকাশপ্রিয়। আকাশে ঘুড়ি উড়ুক বা এরোপ্লেন আমি ঠায় তাকিয়ে থাকি। আমার তৈরি ফানুসগুলো আকাশে উড়লে দারুণ একটা অনুভূতি হয়।” ফানুস তৈরি আর ওড়ানোর সময় সুবীরবাবুকে সাহায্য করতেন স্ত্রী রিনাদেবী। ২০০৪ সালে তিনি মারা যাওয়ার পরে এখন ছেলে শুদ্ধসত্ত্ব এবং মেয়ে রিমিতা সাহায্য করেন সুবীরবাবুকে। সাহায্য করেন দিলীপ ঘোষ, সৃজা দাস, দুর্বার বন্দ্যোপাধ্যায়, সুভাষ দাসের মতো প্রতিবেশিরাও। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রিমিতা নিজেও রপ্ত করে ফেলেছে ফানুস ওড়ানোর কায়দা।
এ বারে এখন পর্যন্ত ১৫টি ফানুস বানিয়েছেন সুবীরবাবু। এগুলোর মধ্যে পাখি রয়েছে, তারা আছে। আছে তেরঙ্গা পতাকার ঢঙে তৈরি ফানুস। তবে, ফানুসে কি শুধুই আনন্দ মিশে থাকে?
সুবীরবাবু বলেন, “না। নিজের মনের রঙের অনেক বিষাদও মেশানো থাকে আমার ফানুসে। সেগুলোও নিজের মতো করেই অনুভব করি। সব ধরনের অনুভূতি মিশে থাকে বলেই তো ফানুসকে হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে চাই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.