ডানলপ কর্তৃপক্ষের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ রাজ্য সরকার এ বার পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে। মঙ্গলবার শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু স্পষ্ট ভাবেই এই ইঙ্গিত দিয়েছেন।
২০০৬ সালে ডানলপ কেনার সময় রুইয়া গোষ্ঠীর সঙ্গে আগের মালিকপক্ষের (মনু ছাবারিয়া গোষ্ঠী) কী চুক্তি হয়েছিল, কোন পথে এগিয়েছে তাদের ব্যবসা, কোথায় কত দেনা আছে তার রেকর্ড দেখে একটি রিপোর্ট তৈরি করতে বলা হয়েছে শিল্প পুনর্গঠন দফতরকে। সেই রিপোর্ট হাতে এলেই কড়া পদক্ষেপ করার পথে হাঁটতে পারে রাজ্য। শ্রমমন্ত্রীর কথায়, “আমরা সব পথ খোলা রাখছি।”
পাশাপাশি রাজ্য চায়, আংশিক ভাবে নয়, ধোঁয়াশা কাটিয়ে কারখানা চালু করুন ডানলপ কর্তৃপক্ষ। এ দিন মহাকরণে পূর্ণেন্দুবাবু আরও এক ধাপ এগিয়ে সাফ জানান, “হয় তাঁরা কারখানা চালু করুন। অথবা না পারলে সরে দাঁড়ান।”
ডানলপে কাজ বন্ধের নোটিস জারির পর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রাজ্যের এক দফা আলোচনা হয়েছিল। সেখানে কয়েক দফা শর্ত দেন ডানলপ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সরকার জানিয়ে দেয়, আগে কারখানা খুলতে হবে। তার পর যাবতীয় আলোচনা হবে। সরকারের মনোভাব বুঝে গত ২১ অক্টোবর সংস্থার বোর্ড মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, বন্ধ কারখানা আংশিক চালু করা হবে। সরকারকে তাদের এই সিদ্ধান্ত লিখিত ভাবে জানানোর পাশাপাশি বেশ কয়েকটি দাবিও পেশ করেন ডানলপ কর্তৃপক্ষ। আর সেই চিঠির বক্তব্য দেখেই সংস্থার সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে রাজ্য।
শ্রমমন্ত্রী বলেন, “ওরা একটা চিঠি দিয়েছে। কিন্তু তাতে অনেক কিছু স্পষ্ট নয়। কারখানা খোলার কোনও ইচ্ছা দেখছি না। আমরা পরিষ্কার বলছি, আংশিক নয়। পুরো মাত্রায় কারখানা খোলার পরেই লাভজনক কোনও প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হতে পারে।” চিঠির বক্তব্যের কোন দিকগুলি অস্পষ্ট, সেই প্রসঙ্গে তিনি জানান, প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ প্রকল্পের ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট করার জন্য গঙ্গা থেকে জল নিতে হবে। কিন্তু এ জন্য কোনও সমীক্ষা হয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। ওরা বলেছে, বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করলে কারখানা আংশিক ভাবে চালু হবে। কিন্তু ঘটনা হল, কারখানার বকেয়া বিদ্যুৎ বিল কিস্তিতে শোধ করার কথা ছিল। তা ওরা করেনি। আংশিক চালু হলে সেখানে কত জন শ্রমিক কাজ পাবেন, তাঁরা কারা সেই ছবিও স্পষ্ট নয়। ক্ষুব্ধ মন্ত্রী বলেন, “এই চিঠির অর্থ কী, তা জানতে ওদের ডেকে পাঠাব। তার আগে ওদের সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছি।”
ডানলপের পরিস্থিতি নিয়ে শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে শ্রমমন্ত্রীর বৈঠকে শিল্প পুনর্গঠন দফতরের অফিসাররাও ছিলেন। ডানলপ নিয়ে একটি ‘নোট’ তৈরি করে দ্রুত জমা দিতে বলা হয়েছে তাঁদের। শ্রমমন্ত্রীর কথায়, “২৬৫ একর জমি নিয়ে তৈরি কারখানার মধ্যে ফাঁকা জমি রয়েছে ১০০ একর। কোনও ক্ষেত্রে কোনও স্বচ্ছতা নেই। কী ভাবে তাঁরা ওই জমি পেয়েছে, শেয়ারের অংশ কার কতটা, সব দেখা হবে।” তিনি বলেন, “সম্পত্তি ও দেনা মিলিয়ে ওরা কারখানাটা কিনেছে। অথচ দেনার অনেকটা পরিশোধ করেনি বলে খবর পাচ্ছি। একই ভাবে, রাজ্যের বিদ্যুৎ দফতর, পুরসভার কর বাবদ বেশ কয়েক কোটি টাকা পাওনা হয়েছে। তা সত্ত্বেও ওরা রাজ্যের কাছে আর্থিক সাহায্য চাইছে।”
ডানলপ কর্তৃপক্ষের এ-হেন আচরণে ক্ষুব্ধ শ্রমমন্ত্রী এ বার রুইয়া গোষ্ঠীর আর এক সংস্থা জেসপ-এর দিকে নজর দেবেন বলে জানিয়ে দেন। তাঁর কথায়, “আমি ওখানে গিয়ে মিটিং করব। ওরা যেখানে পারে অভিযোগ জানাক।” |