যাত্রী টালায় যাইতে চাহিলে ট্যাক্সিচালক টালিগঞ্জ ভিন্ন আর কোথাও যাইতে রাজি হইবেন না, এই অভিজ্ঞতা কলিকাতার ট্যাক্সিযাত্রীমাত্রেই হইয়াছে। বস্তুত, কোনও গন্তব্য শুনিয়া ট্যাক্সিচালক রাজি হইলে তাহাকে পূর্বজন্মের পুণ্যের ফল ভাবাই এখন কলিকাতাবাসীর অভ্যাস। এই অবস্থা কেন? ট্যাক্সিচালক এবং তাঁহাদের সংগঠনের নেতারা বলিবেন, তেলের দাম যতখানি বাড়িয়াছে, ট্যাক্সির ভাড়া সেই অনুপাতে বাড়ে নাই। ফলে, ট্যাক্সির গ্যারাজ যে দিকে, যাত্রীর গন্তব্য তাহার কাছাকাছি না হইলে ট্যাক্সিওয়ালার পড়তায় পোষায় না। কথাখানি সম্পূর্ণ উড়াইয়া দিবার নহে। বেশ কিছু দিন হইল, কলিকাতায় মিটার-ট্যাক্সির ভাড়া বাড়ে নাই। পূর্বে যখন ভাড়া বাড়ানো হইয়াছিল, তখন যদি তাহা তৎকালীন ডিজেলের দামের সহিত সঙ্গতিপূর্ণ হইয়া থাকে, তাহা হইলে এখন ভাড়া অনুপাতে কম। কত ভাড়া হইলে যথেষ্ট হয়, সেই হিসাবটি আরও এক বার কষিবার সময় আসিয়াছে। ট্যাক্সিতে কোনও ভর্তুকি নাই। থাকিবার কথাও নহে। কাজেই, তাহার পূর্ণ মূল্য যাত্রীকেই দিতে হইবে। ট্যাক্সি অত্যাবশ্যক গণপরিবহণ নহে। কাজেই, যাহা ন্যায্য ভাড়া, যাত্রীদের তাহা দিতে হইবে বইকি।
কিন্তু, সরকার ভাড়া বাড়ায় নাই বলিয়া যথেচ্ছ অসভ্যতা করিব ট্যাক্সিচালকদের একাংশের এই মানসিকতাও নিন্দনীয় এবং শাস্তিযোগ্য। তাঁহারা পরিষেবা দিতে রাস্তায় নামেন, স্বেচ্ছাচার করিতে নহে। তাঁহাদের যদি পড়তায় না পোষায়, ভাড়া না বাড়া পর্যন্ত গাড়ি বন্ধ রাখিয়া অন্য কাজ করুন। কিন্তু, ট্যাক্সি লইয়া রাস্তায় নামিলে নিয়ম মানিতে হইবে। নিয়ম মানাইবার একটিই রাস্তা কঠোর শাস্তি। সেই শাস্তির ব্যবস্থা করিবে পুলিশ। অভিজ্ঞতা বলিতেছে, ট্যাক্সিচালকরা পুলিশকে মোটে ভয় পান না। ভীতিহীনতার কারণটি সহজ অপরাধ করিলেও পুলিশ শাস্তির ব্যবস্থা করে না। ট্যাক্সিচালক কোনও যাত্রীকে প্রত্যাখ্যান করিলে সেই অভিযোগ নথিভুক্ত করিবার নির্দিষ্ট টেলিফোন নম্বর আছে। কিন্তু, অভিযোগ পাইলে পুলিশ তাহার ব্যবস্থা করে, এমন বলিলে অনৃতভাষণ হইবে। এই অবস্থা চলিতে পারে না। পুলিশকে কঠোর হইতেই হইবে। নির্দিষ্ট অভিযোগ পাইলে যথাযোগ্য ব্যবস্থা করিতে হইবে। প্রয়োজনে চালকের লাইসেন্স বাতিল করিতে হইবে। এবং, এই শাস্তির কথা সম্যক ভাবে প্রচার করা প্রয়োজন। ট্যাক্সিচালকদের মনে ভীতির সঞ্চার হইলে বেআদবিও আপনিই কমিবে।
কেন পুলিশ কঠোর হইতে পারে না, সেই কথাটিও অবশ্য জানা। রাজনীতি তাহার পথে বাধা হইয়া দাঁড়ায়। ট্যাক্সিচালকরা শ্রমিক সংগঠনের সহিত যুক্ত। সেই সংগঠন আবার রাজনৈতিক দলের শাখা। বামফ্রন্ট আমলে যাহা বাস্তব ছিল, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরেও দুর্ভাগ্যক্রমে তাহা বদলায় নাই শাসক দলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকিলে এই রাজ্যে সাত খুন মাফ। প্রশাসনের উপর রাজনীতির এই আধিপত্য বজায় থাকিলে তাহার ফল কী হয়, পশ্চিমবঙ্গ বহু মূল্যে সেই শিক্ষা পাইয়াছে। কিন্তু, শেখে নাই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খেদ প্রকাশ করিয়াছেন যে তাঁহার পাঁচ মাসেরও অধিক মুখ্যমন্ত্রিত্বের সময় তিনি কেন্দ্রের তরফে কিছুই পান নাই। পশ্চিমবঙ্গবাসী তাঁহার নিকট হইতে কী পাইয়াছেন, সেই প্রশ্ন তর্কসাপেক্ষ, কিন্তু কলিকাতার ট্যাক্সিযাত্রীরা এই পাঁচ মাসে কিছুই পান নাই। তিনি বার বার বলিতেছেন, প্রশাসনের কাজে কোনও রাজনৈতিক খবরদারি মানা হইবে না। তাঁহার দলেরও না। এই কথাটি তিনি এই বার প্রমাণ করুন। কলিকাতার ট্যাক্সিযাত্রীরা উপকৃত হইবেন। |