গত বছর থেকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এক নাগাড়ে তেরো বার সুদের হার বাড়ানোর পরে মনমোহন সিংহ সরকারের ‘অভিসন্ধি’ নিয়ে প্রশ্ন তুলল বিজেপি। তাদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মনমোহন মন্ত্রিসভার কিছু সদস্যের ‘যোগসাজশ’-এর খেসারত দিতে হচ্ছে মধ্যবিত্তকে।
দশ দিন আগে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা যশবন্ত সিনহা। প্রণববাবুকে তিনি বলেন, সুদের হার আর বাড়ানো ঠিক হবে না। কিন্তু আজ ফের সুদের বাড়ানোর সিদ্ধান্তে ‘বিস্মিত’ বিজেপি কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগল। যশবন্ত সাংবাদিক বৈঠক করে অভিযোগ করেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের কিছু সদস্যের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের অসাধু যোগসাজশের ফলেই মজুত শস্য বাজারে ছাড়া হচ্ছে না। যার ফলে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিও ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। সরকার নিজের দায়িত্ব পালন না করে মূল্যবৃদ্ধি কমানোর গোটা দায়টাই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঘাড়ে ঠেলে দিয়েছে। আর বেচারা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বাধ্য হয়ে সুদের হার বাড়িয়ে চলেছে।”
অর্থ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান যশবন্ত আগেই সরকারকে বলেছিলেন, মুদ্রাস্ফীতির একটি বড় কারণ খাদ্যপণ্যের দাম বাড়া। অথচ এই মুহূর্তে সরকারের কাছে সাড়ে ছয় কোটি টন খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে। এর মধ্যে দেড় বা দু’কোটি টন খাদ্যশস্য যদি বাজারে ছাড়া হয়, নিদেনপক্ষে বাজারে ছাড়ার ঘোষণাও করা হয়, তা হলেই বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম হু-হু করে কমতে থাকবে। বিজেপি-র অভিযোগ, এই খাদ্যশস্য মজুত রেখে কৃষকদের কোনও সুবিধা হচ্ছে না। লাভ করছে ব্যবসায়ীদের একটি গোষ্ঠীই। আর সেই লাভের অঙ্কের ভাগ নিচ্ছেন সরকারের কিছু ব্যক্তিও।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আজ জানিয়ে দিয়েছে ডিসেম্বরে আর সুদের হার বাড়ানো হবে না। যদিও যশবন্ত সিনহার বক্তব্য, সেই প্রতিশ্রুতিও শর্ত সাপেক্ষে। ধরে নেওয়া হচ্ছে, খরিফ শস্য ওঠার পর ডিসেম্বর থেকে মূল্যবৃদ্ধির হার কমতে শুরু করবে। কিন্তু পরিস্থিতি যদি প্রতিকূল হয়, তা হলে ফের সুদের হার বাড়ানো ছাড়া আর কোনও গতি থাকবে না।
সুদের হার বাড়ানো নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে এ ভাবে সরব হওয়ার পিছনে বিজেপি-র অবশ্য এক ঢিলে তিন পাখি মারার কৌশল রয়েছে। প্রথমত, লালকৃষ্ণ আডবাণীর রথযাত্রার মাধ্যমে ইতিমধ্যেই ভোটের হাওয়া তুলতে শুরু করেছে দল। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়ে তারা এক দিকে যেমন মনমোহন সরকারকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে, তেমনই মূল্যবৃদ্ধি রুখতে সরকারের ব্যর্থতা ও ‘অসহায়তা’র দিকটিও আম-জনতার সামনে তুলে ধরতে চাইছে। দ্বিতীয়ত, ‘সুশাসন ও দক্ষ প্রশাসন’-এর স্লোগান নিয়ে আডবাণী যখন অটলবিহারী বাজপেয়ী জমানার ‘সাফল্যকে’ দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরছেন, তখন মনমোহন জমানায় মূল্যবৃদ্ধি তাঁকে প্রচারে বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে। বিজেপি-র দাবি, বাজপেয়ীর আমলে জিনিসের দান নিয়ন্ত্রণে রেখেই আর্থিক বৃদ্ধির হার সুনিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছিল। এখন মূল্যবৃদ্ধিও নিয়ন্ত্রণে আসছে না, আর্থিক বৃদ্ধিও ক্রমশ মুখ থুবড়ে পড়ছে। তৃতীয়ত, বিজেপি-র একটি বড় ভোটব্যাঙ্ক মধ্যবিত্ত। বারবার সুদের হার বাড়ানোর ফলে বাড়ি ও গাড়ির সুদের হারও বাড়ছে। মধ্যবিত্তের আক্রোশও বাড়ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। সুদের হার নিয়ে প্রচারে নেমে সেই ভোটব্যাঙ্কেও অটুট রাখতে চাইছে বিজেপি। |