লাল বোম্বেটের সঙ্গে স্পিলবার্গের টিনটিনের টক্কর এ বার থ্রিডি-তে
ব্যাটা লাল বোম্বেটে! এ বার তোকে শিক্ষা দেব।
সেই অতি-পরিচিত গালাগালের তুবড়ি। যাঁর মুখ থেকে বেরোচ্ছে, সেই মোটাসোটা মানুষটার মুখভর্তি দাড়ি, আর মুখ খুললেই হুইস্কির গন্ধ। এক তরুণ সাংবাদিককে সঙ্গে নিয়ে মাঝবয়সী নাবিকটি এর আগে মন ভুলিয়েছেন লক্ষ লক্ষ পাঠকের। এ বার পা ফেলছেন নতুন মাধ্যমে, সিনেমার থ্রি-ডি পর্দায়।
ক্যাপ্টেন হ্যাডক এবং তরুণ সাংবাদিক টিনটিন। ফেলুদা-তোপসে, ব্যোমকেশ-অজিত, জয়ন্ত-মানিকের মতোই বাঙালি পাঠকের আদ্যন্ত প্রিয় বহু দূর দেশ থেকে আসা এই অ্যাডভেঞ্চার-প্রবণ জুটিটি। বেলজিয়ামের লেখক জর্জ রেমি ওরফে হার্জের সেই ‘টিনটিন’-এর নতুন সিনেমা ইউরোপে মুক্তি পাচ্ছে এই শুক্রবার। তার আগেই ইউরোপের বিভিন্ন শহরে প্রিমিয়ার হল ছবিটির। প্রথম প্রিমিয়ারটি হয় গত শনিবার, হার্জের জন্মস্থান ব্রাসেল্সে। আর কাল প্রিমিয়ার হয় লন্ডনে। দু’শহরেই মারকাটারি ভিড় প্রমাণ করে দিল, পটার-প্রজন্মের কাছে এখনও জনপ্রিয়তা হারায়নি টিনটিন।
এর আগেও টিনটিনের গল্প নিয়ে সিনেমা হয়েছে। প্রথম ছবিটি তৈরি হয় আজ থেকে ৬৪ বছর আগে, বেলজিয়ামে। ‘দ্য ক্র্যাব উইথ দ্য গোল্ডেন ক্লজ’ (১৯৪৭)। তার পর একে একে ‘টিনটিন অ্যান্ড দ্য গোল্ডেন ফ্লিস’ (১৯৬১), ‘টিনটিন অ্যান্ড দ্য ব্লু অরেঞ্জেস’ (১৯৬৪), ‘টিনটিন অ্যান্ড দ্য টেম্পল অফ দ্য সান’ (১৯৬৯) এবং ‘টিনটিন অ্যান্ড দ্য লেক অফ শার্কস’ (১৯৭২)। এর মধ্যে ‘গোল্ডেন ফ্লিস’, ‘ব্লু অরেঞ্জেস’ ও ‘লেক অফ শার্ক’-এর মূল কাহিনী হার্জের নয়। তবে তাঁর তৈরি করা টিনটিন, ক্যাপ্টেন হ্যাডক, অধ্যাপক ক্যালকুলাস ইত্যাদির চরিত্র নিয়েই নতুন গল্প-নির্ভর সিনেমা সেগুলি।
এত দিন বাদে টিনটিনের যে নতুন অ্যাডভেঞ্চার সিনেমার পর্দায় আসছে, সেখানে চমক অনেক। প্রথমত, সিনেমাটি তৈরি হয়েছে আদ্যন্ত থ্রি ডি প্রযুক্তি ব্যবহার করে। কোনও আউটডোর শু্যটিং হয়নি, সম্পূর্ণ শু্যটিং হয়েছে স্টুডিওতে। তার পর সেই দৃশ্য কম্পিউটারে বিশেষ প্রযুক্তির সাহায্যে ত্রিমাত্রিক সিনেমায় রূপান্তরিত করা হয়েছে। এই একই পদ্ধতিতে বানানো হয়েছিল জেমস ক্যামেরনের ‘অবতার’।
টিনটিনের নতুন ছবি, ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার্স অফ টিনটিন: সিক্রেট অফ দ্য ইউনিকর্ন’-এর সব থেকে বড় চমক, এর নির্দেশক স্টিভেন স্পিলবার্গ। ‘ইটি’, ‘ইন্ডিয়ানা জোন্স’, ‘জুরাসিক পার্ক’, ‘শিন্ডলার্স লিস্ট’ রুপোলি পর্দার সঙ্গে নির্দেশক স্পিলবার্গের গাঁটছড়াটা অনেক দিনের। প্রযোজনাও করেছেন বহু সিনেমা। টিনটিনের ছবি বানাতে সেই স্পিলবার্গ আবার ক্যামেরার পিছনে।
হঠাৎ টিনটিন কেন? স্পিলবার্গ জানিয়েছেন, টিনটিনকে নিয়ে তাঁর ছবি বানানোর শখ বহু দিনের। তাঁর ১৯৮১ সালের ‘ইন্ডিয়ানা জোন্স অ্যান্ড দ্য রেডার্স অফ দ্য লস্ট আর্ক’ দেখে অনেকেই বলেছিলেন, ইন্ডিয়ানার সঙ্গে অ্যাডভেঞ্চার-প্রিয় টিনটিনের মিল প্রচুর। তখন থেকেই টিনটিন পড়তে শুরু করেন স্পিলবার্গ, এবং প্রথম বইটা থেকেই হয়ে যান হার্জের এক দম প্রথম সারির ভক্ত।
টিনটিনের ছবি করতে চেয়ে ১৯৮৩ সালে হার্জকে ফোন করেছিলেন স্পিলবার্গ। তাঁর কথায়, “আমার জীবনের সব থেকে মূল্যবান টেলিফোন কলগুলির মধ্যে সেটি।” হার্জ এক কথায় স্পিলবার্গের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। কিন্তু সেই ঘটনার কয়েক মাসের মধ্যেই মারা যান টিনটিন-স্রষ্টা। তাঁর স্ত্রী অবশ্য স্পিলবার্গকে টিনটিনের ফিল্ম-স্বত্ব বিক্রি করতে দ্বিধা করেননি। কিন্তু প্রযোজনার বিভিন্ন অসুবিধার কারণে ২৫ বছর লেগে যায় টিনটিনের শু্যটিং শুরু করতে।
মূলত, ‘বোম্বেটে জাহাজ’ (সিক্রেট অফ দ্য ইউনিকর্ন) এবং ‘লাল বোম্বেটের গুপ্তধন’ (রেড র্যাকহ্যাম্স ট্রেজার্স) এই দু’টি কাহিনী নির্ভর করেই গড়ে উঠেছে স্পিলবার্গের ছবি। তা ছাড়া, নিয়ে আসা হয়েছে ‘কাঁকড়া রহস্য’ (ক্র্যাব উইথ দ্য গোল্ডেন ক্লজ)-এর কাহিনী। সেই গল্পেই প্রথম ক্যাপ্টেন হ্যাডকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল টিনটিনের। ক্যাপ্টেন হ্যাডককে বাদ দিলে টিনটিনের অ্যাডভেঞ্চারগুলো যে ঠিক জমে না, তা স্পিলবার্গও বুঝতে পেরেছিলেন। তাই বেছে নিয়েছেন এমন দু’টি গল্প, যার কেন্দ্রীয় চরিত্র যতটা টিনটিন, ঠিক ততটাই (কেউ বলবেন, তার থেকেও বেশি) ক্যাপ্টেন হ্যাডক। কারণ দু’টি গল্পেরই কাহিনী-কাঠামো তৈরি হয়েছে ক্যাপ্টেনেরই পূর্বপুরুষ স্যর ফ্রান্সিস হ্যাডকের অ্যাডভেঞ্চার দিয়ে।
কলকাতা-সহ ভারতের বিভিন্ন শহরে ‘টিনটিন’ মুক্তি পাচ্ছে ১১ নভেম্বর। তার পর ফিরে যাওয়া সেই ছোটবেলার দুপুরগুলোয়। যেখানে কল্পনার জাহাজে চড়ে পাড়ি অতল সমুদ্রে। সঙ্গী তরুণ সাংবাদিক, মাতাল নাবিক, আর ছোট্ট সাদা কুট্টুস।
 



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.