বলিউডের সবচেয়ে বড় রিলিজ। আজ।
সবচেয়ে বড়? আজ্ঞে হ্যা। শাহরুখ খানের জীবনে তো বটেই, বলিউডেরও সবচেয়ে বড় মাপের ছবি ‘রা-ওয়ান’। ১৫০ কোটি টাকা যার বাজেট। এবং যে ছবির মুক্তির আগে সারা দেশ জুড়ে এমন বিপণনের ব্যবস্থা হালে কেউ দেখেনি।
হাজার হোক, ‘রা-ওয়ানে’র মতো ছবির মুক্তি তো আর যেমন-তেমন ভাবে করা যায় না। করা হচ্ছেও না। মুক্তির সংখ্যাটা দেখলেই তা মালুম হবে। এই প্রথম কোনও হিন্দি ছবি সারা বিশ্বে ৩৫০০টা স্ক্রিনে মুক্তি পাচ্ছে। তার মধ্যে ৫০০টিতে ‘রা-ওয়ান’ দেখা যাবে থ্রি ডি-তে।
এই কয়েক মাস আগেও সলমন খানের ‘বডিগার্ড’ ছিল সবচেয়ে বেশি হলে মুক্তি পাওয়া ছবি। সারা বিশ্বে ২৬০০টি হলে মুক্তি পেয়েছিল ছবিটি। ব্যবসা করেছিল ১০৫ কোটি টাকার। প্রথম দিনই ২১.৫ কোটি টাকার ব্যবসা করে ‘বডিগার্ড’। আমির খানের ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর পর এটাই ছিল বলিউডের সবচেয়ে বড় হিট। ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর ব্যবসা ছিল ১৮৯ কোটির।
কিন্তু ‘রা-ওয়ান’ তৈরির পিছনে খরচের বহর, তার বিপণনের জন্য নিত্য নতুন চমক সব মিলিয়ে শাহরুখ খান কি পারবেন সব রেকর্ড ভেঙে দিতে? এই উত্তরটার দিকেই তাকিয়ে আছে বলিউড। শাহরুখ কিন্তু চেষ্টার কসুর করছেন না। হাজার হোক, তাঁকেও তো ছবি তৈরির বিরাট খরচটা তুলতে হবে। দেশ-বিদেশের কথা ছাড়ুন, কেবল পশ্চিমবঙ্গেই ‘রা-ওয়ান’ হতে চলেছে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক হলে মুক্তি পাওয়া হিন্দি ছবি। ২৫০-রও বেশি স্ক্রিনে দেখানো হবে ছবিটি। |
তা ছাড়া ‘রা-ওয়ান’ ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটা মাইলফলক অতিক্রম করেছে। যেমন দক্ষিণ কোরিয়ায় ছবির ২০০টি প্রিন্ট বিক্রি হয়ে গিয়েছে। এর পরেই আছে তাইওয়ান, যেখানে বিক্রি হয়েছে ২৫টি প্রিন্ট। জার্মান ভাষায় ডাব করে সে দেশেও পাঠানো হয়েছে ১৫-২০টা প্রিন্ট। শাহরুখের প্রযোজনা সংস্থা রেড চিলিজ-এর এক প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, “বিশ্ব বাজারে আমরা প্রায় ৫০০টা প্রিন্ট বিক্রি করেছি। তার মধ্যে হংকং-এর মতো দেশও আছে, আবার ফিজি-ও আছে।”
কেবল বিদেশে ছবির প্রিন্ট বিক্রিতেই থেমে নেই ‘রা-ওয়ান’। মার্কেটিংয়ের বোঝাপড়াতেও একটা নতুন মোড় এনেছে ছবিটি। ২৫খানা আলাদা আলাদা ব্র্যান্ড ছবিটার পেছনে সবসুদ্ধ ৫০ কোটি টাকা খরচ করেছে। তার বদলে ছবির নায়ক প্রত্যেকটা ব্র্যান্ডের জন্য আলাদা আলাদা বিজ্ঞাপন শু্যট করেছেন। ‘রা-ওয়ান’-এর ব্যবসা এখানেও শেষ নয়। শুধুমাত্র টেলিভিশন স্বত্বই বিক্রি হয়েছে ৩৭ কোটির। ১০ কোটি টাকা আয় হয়েছে ডিজিটাল স্বত্ব থেকে, আরও আট কোটি এসেছে গান বিক্রি করে। এমনকী স্টার-এর মতো চ্যানেল প্রায় ১৫ কোটির কাছাকাছি অঙ্কের টাকা খরচ করেছে ‘রা-ওয়ান’-এর মিউজিক লঞ্চের পেছনে।
সুতরাং এটা ঘটনা যে, মুক্তির আগেই অনেকটা ব্যবসা করে ফেলেছে ‘রা-ওয়ান’। কিন্তু তা সত্ত্বেও অস্বীকার করার উপায় নেই যে ,প্রথম দিনে বক্স অফিসে বিরাট সাফল্য না পেলে ছবি তৈরির পুরো খরচটা তোলা শক্ত হবে শাহরুখ খানের পক্ষে। অবশ্য ছবি মুক্তির সময়টা তিনি বেছেছেন বেশ ভালই। প্রথমত দেওয়ালির ছুটির মরসুম। দ্বিতীয়ত বুধবার মুক্তি পাওয়ার ফলে সপ্তাহান্তের ব্যবসাটা চলবে তিন দিনের জায়গায় পাঁচ দিন। এবং এর পরের বড় বলিউডি রিলিজ রণবীর কপূরের ‘রকস্টার’ আসতে বেশ কয়েক সপ্তাহ দেরি।
মুক্তির এক দিন আগে স্বয়ং শাহরুখ খানও এই ছবির বিশালতা এবং তাকে ঘিরে থাকা গগনচুম্বী প্রত্যাশা সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল। “হ্যাঁ, এটা আমার কেরিয়ারের সবচেয়ে বড় রিলিজ। স্রেফ পরিমাপের নিরিখেই এটা বিশাল। মাউন্টিং, স্পেশাল এফেক্টস, প্রিন্টের সংখ্যা, বিপণন সব মিলিয়ে ইট’স ম্যাসিভ,” বলছেন দৃশ্যতই নার্ভাস শাহরুখ। “এ বার দর্শকরা বলবেন কেমন লাগল।” ‘রা-ওয়ান’-এ শাহরুখ খান হয়তো সর্বজয়ী সুপারহিরো। কিন্তু কে বলে সুপারহিরোদের টেনশন হয় না? রিলিজের আগের দিনের ‘জি-ওয়ান’ তো তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ! |