মহিলাদের পরিচালিত পুজোয় মাতল ভুবনডাঙা |
খানিকটা ঝোঁকের বশে কালীপুজো শুরু হয়েছিল বোলপুরের ভুবনডাঙা সুধাসাগরপাড় পাড়ায়। তাও আবার মহিলাদের দ্বারা। এই পুজো শুরু হওয়রা পিছনে একটি ইতিহাস রয়েছে। এক দিন সন্ধ্যায় তুলসীতলায় প্রদীপ জ্বালাচ্ছিলেন ওই পাড়ার মহিলারা। তাঁরাই ঠিক করলেন পাড়ায় কালী পুজো করলে কেমন হয়! মহিলা মহলের এই কথা ছড়িয়ে পড়তেই ঠিক হয় মহিলারা যখন উদ্যোগী হয়েছেন তখন তাঁরাই পুজো করুক। প্রয়োজনে পুরুষেরা তাঁদেরকে সাহায্য করবে। তার পর থেকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। দেখতে দেখতে ১০ বছর কেটে গেল।
ওই পাড়ার বাসিন্দা পায়েল মুখোপাধ্যায়, সৈকতী হাজরা, সোমা বিশ্বাস, মৌসুমী সেনরা বলেন, “আমাদের পাড়ায় দুর্গা পুজোর পরে সে ভাবে আর কোনও বড় পুজো হত না। অন্য পাড়ায় কালী পুজো হত। ছেলেরা কালীপুজো দেখতে অন্য পাড়ায় চলে যেত। ওই সময় পাড়া খাঁ খাঁ করত। তখন আমাদের মাথায় ঘুরত অন্য পাড়ায় কী করে কালী পুজো দেখতে যাব।” |
২০০০ সালে দুর্গাপুজোর বিসর্জন সবে শেষ হয়েছে। তখন পায়েল, উর্মিলা, সোমা, সৈকতীদের আড্ডা চলছিল এক সন্ধ্যায়। ওই আড্ডাতেই ঠিক করেন কালীপুজো পাড়ায় তাঁরা কালীপুজো করবেন। পায়েল মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা তখন স্কুলে পড়ি। কেউ কেউ কলেজে। আমাদের সঙ্গে বৌদি, মা, কাকিমারা ছিলেন। প্রস্তাব পাকা করতে পাড়ার ছেলেদের বিষয়টি জানানো হয়।” বাসিন্দা অরুপ বিশ্বাসের কথায়, “পাড়ার ছেলেমেয়েরা এক সঙ্গে খেলাধুলো, গল্প করতাম। ওই দিন সন্ধ্যায় মেয়েরা পাড়ায় কালীপুজো করার প্রস্তাব দেয়। আমরা রাজি হয়ে যাই।’’
আর এক বাসিন্দা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক রঞ্জিত সেন বলেন, “এই পাড়ায় পিছিয়েপড়া ও তফসিলি জাতির মানুষ বেশি বাস করেন। তবে ভেদাভেদ ভুলে সকলেই কালীপুজোয় যোগ দেন।” স্থানীয় ব্যবসায়ী সঞ্জিত সেনের কথায়, “টানা তিন বছর মেয়েরা চাঁদা তোলা থেকে শুরু করে পুজোর আয়োজন সবই করতেন। আমরা শুধু সঙ্গে ছিলাম। পঙ্ক্তিভোজে মুসমিল পরিবারগুলি যোগ দেন।”
পাড়ার বধূ সবিতা দেবী, মৌসুমী দেবী, রিঙ্কু দেবীরা জানান, এই কালীপুজোতে আত্মীয়রাও আসেন। মোটের উপর বলতে গেলে দুর্গাপুজোর মতোই কালীপুজোতেও সমান আনন্দ হয়। সময় পাল্টেছে। পুজোর উদ্যোক্তা বেশিরভাগ মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তাই সম্প্রতি চাঁদা তোলার দায়িত্ব এসেছে ছেলেদের হাতে। কিন্তু পুজো, আরাধনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পঙ্তি ভোজ এখনও পুরোদমে মহিলারাই পরিচালনা করেন। পুজো কমিটির সম্পাদক, সভাপতি, কোষাধ্যক্ষ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পরিচালক মহিলারাই। ১১ বছরে পা রাখা মহিলা পরিচালিত ওই পুজোয় আজও মেতে ওঠেন সুধাসাগরপাড় পাড়ায় সকলেই। |