কামারের ঘরে কয়লা নেই, বিপন্ন খাঁড়া শিল্প |
অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় • রামপুরহাট |
হাতে মাত্র দু’দিন। তার পরেই শুরু হবে বাঙালির আর এক উৎসব কালী পুজো। লোকহিত বা মনস্কামনা পূরণ করার জন্য মায়ের কাছে ছাগবলি দিতে হয়। তবে ঠিক মতো কাটা না হলে পুজো উদ্যোক্তাদের নতুন ভাবে পুজোর জোগাড় করতে হয়। তাই এই ছাগ বলি দেওয়ার জন্য প্রয়োজন হয় খাঁড়া বা দা-র। কিন্তু যাঁরা এই খাঁড়া তৈরি করেন তাঁদের অবস্থা খুব একটা ভাল নয়।
কেন না বর্তমানে এই দা তৈরির শিল্প অবলুপ্তির পথে। রামপুরহাট থানার খরুণ গ্রাম থেকে মুম্বই, ঝাড়খণ্ড পাড়ি দেয় দা। বাপ-ঠাকুরদার পৈতৃক ব্যবসা কোনও রকম ভাবে টিম টিম করে টিকিয়ে রেখেছেন খরুণ গ্রামের তামাল কর্মকার, বিকাশ কর্মকাররা। তাঁরা জানান, খরুণ গ্রামে আগে ২৫টি কর্মকার পরিবার বাস করত। বর্তমানে ১৫টি ঘর রয়েছে। ওই ১৫টি পরিবারের মধ্যে তিনটি পরিবার তাঁদের বাপ-ঠাকুরদার ব্যবসা চালু রেখেছেন। বাকিরা কেউ খাঁড়া তৈরির কাজে নামতেই চান না। |
কিন্তু কেন এত পরিবর্তন? খরুণ গ্রামের শিবতলাপাড়ায় রয়েছে তামাল কর্মকারের কামারশালা। সেখানে ঢুকে দেখা গেল তামাল কর্মকার ও তাঁর ভাই বিকাশ কর্মকার কাজ করছেন। দুই ভাই তৈরি করছেন কাস্তে ও তার হাতল। সেখানে রয়েছে কয়েকটি খাঁড়া। তমালবাবু বলেন, “এ বার মাঠে ধান হয়েছ। তাই চাষিদের কাছে কাস্তের চাহিদা রয়েছে। সে জন্য এ বার কালী পুজোর জন্য কোনও দা তৈরির অর্ডার নিইনি।” তিনি একটি দা দেখিয়ে বললেন, “এর বয়স ১০০ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। জেঠতুতো দাদা শান্তি কর্মকার গ্রামের চট্টোপাধ্যায় বাড়ির কালী পুজোর জন্য তৈরি করেছিলেন। পালিস করার জন্য আমাদের কাছে রাখা আছে। পালিস করতে ৫০০ টাকা মজুরি নেওয়া হয়। জেঠতুতো দাদাদের কাছ থেকেই এই কাজ শিখেছি।”
তামালবাবু জানান, মল্লারপুর বাজার থেকে ১০০ টাকা দিয়ে ২০০ গ্রাম ওজনের একটি ইস্পাত কিনে এনে একটি খাঁড়া তৈরি করা হয়। দু’ফুট কিংবা ৩২ ইঞ্চির একটি খাঁড়া তৈরি করতে ১০ দিন সময় লাগে। এটা তৈরি করতে প্রয়োজনে ১ কেজি পিতলও লাগে। দুর্গাপুজো, মনসাপুজো, কালীপুজো, ধর্মরাজ প্রভৃতি সে সব পুজোয় বলিদান হয় সেখানে খাঁড়ার প্রয়োজন। তামালবাবুরা জানালেন, দুর্গাপুজোর সময়ে মল্লারপুর, সাঁইথিয়া, নন্দকেশ্বরী, চাকপাড়া এলাকায় দা বিক্রি হয়েছে। এক একটি দা বিক্রি হয় ৫ হাজার টাকায়। কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম এই দা তৈরি কাজ করতে চায় না। এ ছাড়া, কয়লার অভাবে এই শিল্প বিলুপ্তির পথে। |