জলাশয় রক্ষা করুন। ছোট মাছ বাঁচান।
পুজো মণ্ডপের সামনে দাঁড়ালেই চোখে পড়বে এই ব্যানার। গত এক দশক ধরে এই আবেদনকে সামনে রেখেই কালী পুজোয় মাতে পূর্বস্থলীর বড়কোবলা গ্রাম।
জলাশয় ও মাছ রক্ষার জন্য গ্রামবাসীরা ২০০১ সালে আন্দোলন শুরু করেন। বাসিন্দাদের দাবি, মাটির তলার জল নিরাপদ নয় জেনে শুরু হয় আন্দোলন। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে তাঁরা সকলকে জানাতে থাকেন, পূর্বস্থলী ১ ব্লকের ভূগর্ভস্থ জলে মিশে রয়েছে আর্সেনিক। এই বিষ জল পান করে ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে অনেকের। এক দশক আগের এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল কালী পুজো ঘিরেই। |
গ্রামের বাসিন্দা নারায়ণ রায় বলেন, “ওই বছর কালী পুজো ধুমধাম করে হবে বলে ঠিক হয়। উৎসবের রাতে হয় অন্নক্ষেত্র। নিমন্ত্রণ করা হয় আশপাশের গঙ্গানন্দপুর, ছোটকোবলা, বড়কোবলা, শ্রীরামপুর-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের। সেখানে এলাকার আর্সেনিকের বিপদের কথা জানিয়ে জলাভূমি রক্ষা করার আবেদনও জানানো হয়। সেই শুরু। তার পর থেকে একই নিয়ম মেনে এই উৎসব হয়।”তিনি জানান, শুধু কালী পুজোই নয়, ওই বছর থেকেই একই উদ্দেশে খালবিল উৎসবও হয়। গ্রামের আর এক বাসিন্দা গৌতম বিশ্বাসের কথায়, “ওই দুই উৎসবে মানুষজনকে জলাশয় সংস্কার, সেখানে বর্জ্য পদার্থ না পাওয়া, জলাশয়ের জল পরিশ্রুত করে পান করা-সহ বিভিন্ন আবেদন জানানো হয়।” তাঁর দাবি, “এলাকার খালবিল, ননদীর জল ঠিকমতো ব্যবহার করা করা হয় না। ফলে মাছের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। জীবিকা হারাচ্ছেন বহু মানুষ। তাই ওই দু’টি উৎসবের এই বিষয়টিও তুলে ধরা হয়।”
গ্রামবাসীদের নিয়েই তৈরি হয়েছে খালবিল উৎসব কমিটি। তৈরি হয়েছে কার্যালয়ও। তার পাশেই বাঁশ দিয়ে মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। কার্যালয়ের এক দিকে বাঁশদহ বিল ও অন্য দিকে চাঁদের বিল। ওই দুই বিলের দু’পাশে বসবে অন্নক্ষেত্রর আসর। থাকবে বস্ত্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাও। গ্রামবাসী অরুণ রায়ের কথায়, “এই উৎসবকে সামনে রেখে মানুষকে সচেতন করাই মূল লক্ষ্য।” তাঁর দাবি, “গত এক দশকের এই আন্দোলনে শুধু সাধারণ মানুষই নয়, নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসনও।”
বড়কোবলা গ্রামের মানুষের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন পূর্বস্থলী দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক স্বপন দেবনাথ। তিনি বলেন, “গ্রামবাসীরা সচেতনতা প্রচারের জন্য উৎসবকে বেছে নিয়ে যথাযথ কাজ করেছেন। আমি ওঁদের সঙ্গে আছি।” |