আজ আলোতেই বাজিমাত
‘সুইট সিক্সটিন’থেকে চমক ‘মা মাটি মানুষ’
মিস্টার বিন। সুইট সিক্সটিন। রেড ডায়না সিক।
এ বারের ‘হিট’। তবে কি না ‘পরিবর্তন’-এর তাজা বাতাস এখনও জোরালো, তাই ‘সুপারহিট’ সেই এক এবং অদ্বিতীয় মা মাটি মানুষ।
এক ঝটকায় শুনলে মনে হয় সিনেমা। আসলে পরিবর্তনের বাজি বাজারে এরা সব নাম করা তারকা। এই ‘পরিবর্তন’ অবশ্য রাজ্যে সরকার বদলের নয়, বরং গত কয়েক বছর ধরে ক্রমশ শব্দ থেকে আলোর দিকে সরে যাওয়ার একটা লাগাতার চেষ্টা। কারণ অবশ্যই আদালতের নির্দেশ ও সরকারের চাপ, কিন্তু সেই চাপে রুচির বদলও এখন একটু একটু টের পাওয়া যাচ্ছে।
আর এই বদলে যাওয়া বাজারে কখনও আসছে নতুন আলোর বাজি, কখনও পুরনো বাজি আসছে নতুন নামে একটু অন্য রকম সেজে। ‘মিস্টার বিন’ যেমন আসলে রঙমশাল। ক্রেতার মন ভোলাতেই হলিউডের বিখ্যাত কার্টুন চরিত্রের নাম নেওয়া। আবার নতুন করে বাজার মাত করেছে ‘মাল্টিকালার’ মশাল। বার্নপুর বাজি বাজারের বিক্রেতা কৃষ্ণ অগ্রবালের দাবি অনুযায়ী, যা জ্বাললেই না কি ছড়িয়ে পড়বে রামধনুর সাত রং!
বার্নপুরে বাজি বাজার। ছবি: শৈলেন সরকার
শব্দবাজি নিয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও প্রতি বারই চোরাগোপ্তা বিক্রি হয়। তার দাপট টের পাওয়া যায় দীপাবলির সন্ধ্যা ঘনাতেই। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তার দাপাদাপি যেন একটু কম, অন্তত প্রকাশ্যে। আসানসোলের বাজি বিক্রেতা কিরণ সেন যেমন বলেন, “এ বার আমরা শব্দবাজি তুলিনি। তবে আদালত নির্দেশিত শব্দাঙ্কের মধ্যে যে শব্দবাজি আছে, সেগুলি রেখেছি।” দুর্গাপুরের মামরা বাজারের ব্যবসায়ী স্বপন কুণ্ডুর কথায়, “একশ্রেণির ক্রেতার মধ্যে শব্দবাজির চাহিদা আছে। কিন্তু আদালতের নির্দেশে আমাদের হাত-পা বাঁধা। তাই আলোর বাজিই বিক্রি করছি। গত বারের তুলনায় বাজার ভালই।”
আলোর বাজি ছাড়া যখন গতি নেই, তখন বাজারে খুব কাটছে ‘স্পেশাল’ কথাটা। যেমন আসানসোল শিল্পাঞ্চলে এ বারের স্পেশাল ‘সুইট সিক্সটিন’। বিক্রেতাদের দাবি, চৌকো কৌটোর মতো এই বাজি মাটিতে বসিয়ে সলতেয় আগুন দিলেই ফুট তিরিশেক উঁচুতে ছিটকে উঠে ছড়িয়ে পড়বে একাধিক রঙের বল। এক-একটি বল আবার কম আওয়াজে ফাটবে ১৬ বার। একটি বাজির দাম এক হাজার টাকা!
তবে কুলটির বাজি বিক্রেতা অমিত চট্টোপাধ্যায়ের অভিজ্ঞতা, “শৌখিনরাই এটা কিনছেন। এই একটা দিন এঁরা দামদস্তুর খুব একটা করেন না।” তাঁর দোকানে কিন্তু এ বার সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ‘রেড ডায়না সিক’। দোকানি জানান, এই বাজিতে আগুন দিলেই তা কিছুটা উপরে উঠে কম শব্দ করে ফাটে আর ছোট ছোট লাল ফুল ছড়িয়ে পড়ে আকাশ জুড়ে। দাম তুলনামূলক কম, এক-একটি সাড়ে তিনশো টাকা মতো। এ ছাড়া রয়েছে চেনা ‘গোল্ডেন কোর’ বাজিও। এতে ঝরে পড়া ফুল লালের বদলে সোনালি।
এ বার বাজি বাজারে নতুন চমক অবশ্য সাইরেন চরকি। অনেকটা পুলিশ জিপের হুটারের মতো শব্দ তুলে ঘুরবে এই চরকি। এ ছাড়া আছে চুরমুট, যাতে আগুন দিলে অল্প আওয়াজ তুলে ছড়িয়ে পড়বে হরেক রঙের ফুলঝুরি। চণ্ডীদাস বাজারের ব্যবসায়ী মনোরঞ্জন পাল যোগ করেন, “চুরমুটের সঙ্গে আরও একটি জিনিস খুদেদের টানছে। সেটা হল পেন্টা স্কাই। এই বাজিতে আগুন দিলেই উপরে পাঁচ রঙে ঝরে পড়ে।”
দুর্গাপুরের বাজারে প্রতি প্যাকেট চুরমুটের দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা। তুবড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। মিস্টার বিন ৪৫ টাকা। চরকি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। তারাবাতি ১০ থেকে ১৫ টাকা। ব্যবসায়ী সুমন্ত হালদার বলেন, “আকাশ বাজিগুলির দাম কিছুটা বেশি, দেড়শো থেকে দুশো টাকা।” তবে অনেক ব্যবসায়ীরই আক্ষেপ, শব্দবাজি বিক্রি করে তাঁদের যা মুনাফা হত, আলোর বাজিতে হচ্ছে মেরে-কেটে তার ২৫ শতাংশ। ক্রেতার রুচি ও চাহিদা না বদলালে এই পরিস্থিতির বদল ঘটাও সম্ভব নয়।
দুর্গাপুরের মামরা বাজার। ছবি: বিশ্বনাথ মশান।
তবে ধীরে হলেও বদল যে ঘটছে, তার সঙ্কেত রয়েছে ব্যবসায়ীদের অভিজ্ঞতাতেই। শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন বাজি বাজারের বিক্রেতারা জানিয়েছেন, অন্তত গত দু’এক বছরের তুলনায় এ বার তাঁরা খুশি। কারণ ক্রেতা বেড়েছে। শব্দবাজি কেনা এবং ফাটানো কঠিন বুঝে অনেকেই ধীরে ধীরে আলোর দিকে মুখ ফেরাচ্ছেন। অভ্যাসও পাল্টাচ্ছে। অনেকে এমনিই আর চড়া শব্দ পছন্দ করছেন না। বার্নপুরে বাজি বাজারে আসা মনোজিৎ দাসের কথায়, “প্রশাসন প্রতি দিনই মাইকে ঘোষণা করছে, শব্দবাজি না কিনতে। বিক্রিও হচ্ছে না তেমন। বরং নানা রকম রংমশাল এসেছে। ওই সবই কিনছি বেশি করে।”
তবে আর সবের পাশাপাশি এ বার শুধু নামেই বাজার মাত করে দিয়েছে একটি বাজি। সলতেয় আগুন ছোঁয়ালেই মৃদু শব্দে মাটি থেকে ফুট দশেক উঠে প্রথমে সবুজ আলো। তার পরে ফের শব্দ তুলে আরও একটু উঠে কমলা আলো। ফের শব্দ, ফের একটু উঠে হলুদ। এরই নাম ‘মা-মাটি-মানুষ’। দামটা একটু বেশি হলেও বিকোচ্ছে বেশ ভাল। বিক্রেতাদের একাংশের দাবি, নতুন সরকার এসেছে, তাই এই নতুন বাজি। আরেক দলের পাল্টা দাবি, আদৌ নতুন কিছু নয়। ‘পরিবর্তন’ শুধু রং আর নামে।
সত্যিটা কী, বোঝা যাবে সলতেয় আগুন দিলেই। শুধু নিজের হাত না পুড়লেই হল!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.