জাঁকজমকের চিত্রটা ম্লান শ্যামাপুজোতেও।
খনি অঞ্চলের বেশ কিছু কালীপুজোয় এ বার বাজেটে কাটছাঁট। কারণ নিয়ে অবশ্য দ্বিমত রয়েছে। কোনও পুজোকর্তার দাবি, চাষবাস বিশেষ না হওয়াতেই এমন পরিস্থিতি। কারও মতে, প্রস্তুতির সময় বিশেষ না মেলায় জাঁকজমক কমেছে। আবার কেউ বলছেন, অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি বাজেট কাটছাঁটের কারণ। তবে বাসিন্দাদের একাংশের ধারণা, অবৈধ কয়লা কারবারের বাড়বাড়ন্ত কমে যাওয়া এমন পরিস্থিতির বড় কারণ। প্রসঙ্গত, এ বার দুর্গাপুজোতেও বাজেটে টান পড়ার কারণে বেশ কিছু বড় জলসা হয়নি খনি অঞ্চলে।
রানিগঞ্জের জেমারি পল্লিমঙ্গল সমিতির পুজোয় প্রতিমার উচ্চতা ত্রিশ ফুটই থাকছে। তবে কোনও থিম বা সুসজ্জিত মণ্ডপ হচ্ছে না। চোদ্দ বছরে পা রাখা এই পুজোয় অন্য বারের মতো মেলাও বসছে। তবে আড়ম্বর কম। কাটছাঁট হচ্ছে আলোকসজ্জাতেও। এ বার মণ্ডপে জ্বলবে টিউবের আলোই। আয়োজক সংস্থার সম্পাদক তথা স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সাগর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। খনিগর্ভে জল ঢুকে গিয়েছে। সে সব নিয়ে খনিকর্মীরাও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। তাই পুজোর বাজেট কমাতে হয়েছে।”
অন্ডালের বছর দশেক আগে শুরু হওয়া পলাশবন পুজো এ বার বন্ধ। আয়োজক নিউ বয়েজ ক্লাবের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য জানালেন, রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে কয়েক জনকে তাঁদের ক্লাবের সদস্যপদ না দেওয়া নিয়ে দ্বন্দ্ব বাধে। তার জেরেই পুজো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় মদনপুর পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের ভীম পাল অবশ্য বলেন, “ওই পুজো কেন বন্ধ হয়েছে তা আমাদের জানা নেই।” জামুড়িয়া নিউ কেন্দায় জ্যোতি সঙ্ঘের মণ্ডপ এ বার একেবারে সাদামাটা। এলাকায় জনপ্রিয় প্রায় দু’দশকের এই পুজো প্রাঙ্গণে এ বারও তিন দিনের মেলা বসছে। তবে বেশ স্বল্প পরিসরে। এ বার আর কাল্পনিক মন্দির বা কোনও কিছুর আদলে মণ্ডপ গড়া হচ্ছে না। আলোকসজ্জাও সারা হচ্ছে এক প্রকার নমো নমো করেই। আয়োজক সংস্থার তরফে সিপিএমের অঞ্চল কমিটির সদস্য বিনোদ সিংহ বলেন, “অল্প সময়ের মধ্যে পুজোর আয়োজন করতে গিয়েই বাজেট কমাতে হয়েছে।” পাণ্ডবেশ্বর থানার পুজোতেও এ বার বেশ কিছু খরচ কমানো হয়েছে। ওসি সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, “এর আগে কী হয়েছে আমার জানা নেই। তবে এ বার কোনও রকমে পুজো হচ্ছে।”
বারাবনির পাঁচগাছিয়া মোড়ে রাজীব সঙ্ঘের কালীপুজো শুরু হয়েছিল ১৯৯২ সালে। উদ্যোক্তা ছিলেন এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক মানিক উপাধ্যায়। পুজোতে এ বার ১০৮ ঢাক-ঢোল বাজবে। পঞ্জাবি নৃত্য ও মেদিনীপুরের ‘কুরকুরি’ বাজনাও থাকবে। তবে বিচিত্রানুষ্ঠান আর হচ্ছে না। কাটছাঁট হয়েছে আরও কয়েকটি ক্ষেত্রেও। মানিকবাবুর ছোট ছেলে পাপ্পু উপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে বলেন, “পুজোয় সবই থাকছে। তবে অর্কেস্ট্রা বন্ধ। দূষণ রোধে শব্দবাজি থাকছে না।”
বারাবনির নুনি মোড়ে পঞ্চগ্রাম কালীপুজোর বয়স ২২ বছর। সব কিছুতেই বাজেট কমানো হয়েছে এখানে। এথোড়া, আঙারিয়া, কন্যাপুর, নুনি, চিঁচুড়িয়া এই পাঁচটি গ্রামের মানুষের সমাগম হয় এই পুজোয়। মণ্ডপ এ বার সাধারণ। কোনও বড় অনুষ্ঠান হচ্ছে না। স্থানীয় শিল্পীরাই অনুষ্ঠান করবেন। আয়োজক সংস্থার সম্পাদক সঞ্জয় মিশ্র বলেন, “গত বছর চাষবাস বিশেষ হয়নি। পঙ্ক্তি ভোজের আয়োজনও কতটা করতে পারব, জানি না।”
পুজোকর্তারা বিভিন্ন কারণের কথা বললেও খনি অঞ্চলের অনেকের মতে, অবৈধ কয়লা কারবারের রমরমায় টান পড়ার জন্যই অনেক পুজোর জমকালো ভাব এ বার উধাও। জামুড়িয়ার তৃণমূল নেতা মুকুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের যেমন দাবি, “অন্য বার কয়লা চোরেরা নেতাদের নির্দেশে পুজোয় মোটা টাকা চাঁদা দিত। রাজ্যে ক্ষমতার হাতবদল হওয়ার পরে সে সব বন্ধ। তাই এমন দশা।” আসানসোল উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক মলয় ঘটক অবশ্য বলেন, “অবৈধ কয়লা কারবার বন্ধের কারণে কালীপুজোর জাঁকজমক কমার কোনও খবর আমার জানা নেই।” সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অমল হালদারেরও দাবি, “জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। তারই প্রভাব পড়েছে বলে মনে হয়।” |