শুরু আর জি কর-এ
হাসপাতালে পেসমেকার চক্র ভাঙতে নয়া উদ্যোগ
স্টেন্ট আর পেসমেকারকে ঘিরে সরকারি হাসপাতালগুলির কার্ডিওলজি বিভাগের ‘ঘুঘুর বাসা’ ভাঙতে উদ্যোগী হল স্বাস্থ্য দফতর। প্রথম দফায় আর জি কর মেডিক্যাল কলেজকে মডেল হিসেবে সামনে তুলে ধরা হবে। সেই মডেল অনুসরণ করেই সুপার স্পেশ্যালিটি এসএসকেএম-সহ অন্য হাসপাতালগুলির পথনির্দেশ স্থির হবে। সোমবার স্বাস্থ্য দফতরের একটি জরুরি বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে বাম সরকারের আমলেও কার্ডিওলজি বিভাগ নিয়ে বহু অভিযোগ উঠেছে। তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ‘দোষী’ও চিহ্নিত হয়েছে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। তার পরে আর বিষয়টি এগোয়নি। এই প্রথম সমস্যার সমাধানে কোনও হাসপাতালকে ‘মডেল’ হিসেবে চিহ্নিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।
ঠিক কী হবে আর জি কর-এ? স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, রোগীদের জ্ঞাতার্থে পেসমেকার এবং স্টেন্টের দাম কার্ডিওলজি বিভাগের ভেতরে একাধিক জায়গায় টাঙিয়ে দেওয়া হবে। পাশাপাশি রাশ টানা হবে স্টেন্ট প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির প্রতিনিধিদের অবাধ বিচরণেও। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে যে সংস্থাগুলি সরঞ্জাম দেবে, এ বার থেকে হাসপাতালের একটি নির্দিষ্ট স্থানে তাদের বসার জায়গা তৈরি হবে। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তাঁরা থাকবেন। রোগীর পরিবারের লোকেরা প্রয়োজনে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। ওয়ার্ড বা অপারেশন থিয়েটারের আশপাশে স্টেন্ট প্রস্তুতকারক সংস্থার প্রতিনিধিদের ঘোরাফেরা করতে দেখলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। প্রতি মাসে কত রোগীর পেসমেকার এবং স্টেন্ট বসানো হচ্ছে এবং কী দাম নেওয়া হচ্ছে, তার রিপোর্ট জমা দিতে হবে স্বাস্থ্য ভবনে।
তবে প্রযুক্তিগত কিছু কারণ দেখিয়ে আপাতত পেসমেকার প্রস্তুতকারক সংস্থার প্রতিনিধিদের ওয়ার্ডের ভিতরে ঢোকায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে না। তবে সংস্থার প্রতিনিধিদের নির্দিষ্ট ব্যাজ পরে ভেতরে ঢুকতে হবে এবং একই সংস্থার একাধিক কর্মী ভিতরে থাকতে পারবেন না।
রাজ্যের কার্যনির্বাহী স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় এই মুহূর্তে আর জি করেরও অধ্যক্ষ। তিনি এ দিন বলেন, “হৃদরোগীদের নিয়ে সরকারি হাসপাতালগুলিতে বহু বছর ধরে অসাধু চক্র সক্রিয়। সাধারণ রোগীরা চিকিৎসা করাতে এসে নানা ভাবে ওই চক্রের খপ্পরে পড়ছেন। বহু ক্ষেত্রেই কর্মীদের সঙ্গে ওই চক্রের আঁতাত থাকছে। আমরা এই ঘুঘুর বাসা ভাঙবই।”
কিন্তু কী ভাবে? পূর্বতন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র পেসমেকারের দাম বেঁধে দেওয়ার পরেও বহু ক্ষেত্রে বেশি দামে পেসমেকার বিক্রি হয়েছে। স্টেন্টের দাম বেঁধে দেওয়ার ব্যাপারে বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু চেষ্টা হলেও তা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে। অভিযোগ, চিকিৎসকদের একাংশের সঙ্গে সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির আঁতাঁত এতই শক্তপোক্ত যে চেষ্টা করেও তা ভাঙা যাচ্ছে না। সুশান্তবাবু বলেন, “এই অভিযোগ যে মিথ্যা নয়, তা আমরাও জানি। তাই এ বারে আমরাও সব দিক দেখেশুনে ব্যবস্থা নিতে চলেছি। কোনও রকম অসততা যে বরদাস্ত করা হবে না, রোগীদের কাছেও সেই বার্তা পৌঁছে দিতে চাই। কোনও হাসপাতালে এই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটলে তাঁরা সরাসরি স্বাস্থ্য ভবনে অভিযোগ জানান। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কড়া শাস্তি দেওয়া হবে।” বছর কয়েক আগে এসএসকেএম এবং আর জি করে তৈরি হয়েছিল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওভাস্কুলার সায়েন্স। সরকারি প্রতিশ্রুতি ছিল, গরিব রোগীরাও যাতে নিখরচায় হার্টের চিকিৎসা করাতে পারেন, তার ব্যবস্থা থাকবে এই দু’জায়গাতেই। কিন্তু চালু হওয়ার অল্প কিছু দিনের মধ্যেই দুই হাসপাতালেই নানা দুর্নীতি ধরা পড়ে। পেসমেকার বসাতে এখন খরচ হয় ৪৫ হাজার টাকার কাছাকাছি। কিন্তু সরকারের নিযুক্ত বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, তা কখনওই ৩০ হাজারের বেশি হওয়ার কথা নয়। স্টেন্টের ক্ষেত্রেও এখন দাম ন্যূনতম ৩৫ হাজার টাকা, সেটাও ২০ থেকে ২৫ হাজারের মধ্যে হওয়া উচিত বলে রিপোর্টে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রাথমিক ভাবে এই দামই বেঁধে দেওয়ার কথা ভাবছে স্বাস্থ্য দফতর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.