আমাদের চিঠি

বীরভূমের বৈচিত্রময় কালীপূজা
নয় নয় করে প্রায় চারশো বছরে পা রাখতে চলেছে বীরভূমের পাঁচরা গ্রামের খ্যাপাকালী পুজো। কাটোয়া থেকে রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় এসে তখনকার জঙ্গলাকীর্ণ শ্মশানে (অধুনা পাঁচরা) তন্ত্রসাধনা শুরু করেন। তাঁর বংশধর পঞ্চানন পরীক্ষিৎ ওই মহাশ্মশানে পঞ্চমুণ্ডীর আসনে সম্পূর্ণ তন্ত্রমতে খ্যাপা মায়ের গুহ্যপুজো শুরু করেন। পঞ্চানন পরীক্ষিৎ ছিলেন পূর্ণাভিষিক্ত পুরুষ। পূর্ণাভিষিক্ত পুরুষ ছাড়া কেউ খ্যাপা মায়ের পুজো করতে পারেন না। বর্তমানে ভট্টাচার্যরা (হেতমপুর রাজাদের দেওয়া পদবি) সেই পুজো চালান। এখন পুরোহিত অমৃতলাল ভট্টাচার্য। এক বিশেষ পদ্ধতিতে মায়ের মূর্তি নির্মাণ ও রঙ করা হয়। কাঠামো তৈরির সময় বাম পা তৈরি হয় গাছ থেকে সদ্য কাটা বেল কাঠ দিয়ে, আর ডান পা বাঁশের তৈরি। বারের দিন সন্ধ্যে থেকে সারা রাত নতুন সরায় নতুন কাপড়ের সলতে দিয়ে প্রদীপের শিখায় কালি পাড়া হয়।
পাঁচরার খ্যাপা কালী। ছবি: অলোক মুখোপাধ্যায়।
পুজোর দিন গাছ থেকে সদ্য পাড়া বেল থেকে আঠা বার করে ওই কালি গুলে মায়ের গায়ের রঙ করা হয়। আর কাঁচা দুধ দিয়ে সাদা রঙ গুলে শিবের গায়ের রঙ করা হয়। শিল্পী উপবাসে থেকে মূর্তি রঙ করেন এবং পঞ্চমুণ্ডীর আসনে মাকে স্থাপন করার পর তিনি উপবাস ভঙ্গ করেন। পুজোর রাতে শ্মশানে শিবাভোগ দেওয়া হয়, তার পর পুজো। পুজোর সময় দূরদূরান্তের মানুষের ঢল নামে মন্দির চত্বরে। ওখানে আরও অনেক প্রাচীন মন্দির রয়েছে, মূল মন্দির সংস্কার হলেও সেগুলির সংস্কারের কোনও ব্যবস্থা হয়নি। মন্দিরগুলির সংস্কার করে এলাকাটির উন্নয়ন করতে পারলে এটি আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে, সন্দেহ নেই।
বীরভূমের নানা এলাকা একদা জঙ্গলাকীর্ণ থাকায় তন্ত্রসাধনার উপযুক্ত কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। তাই পীঠস্থানের সংখ্যাও যেমন বীরভূমে বেশি, তেমনই অধিকাংশ কালীপুজোই এখানে হয় তন্ত্রমতে। দুবরাজপুরের পাহাড়েশ্বরে মামা-ভাগ্নে পাহাড়ের উত্তরে প্রায় পাহাড়ের কোলেই শ্মশানে কালী। জনশ্রুতি, বর্গি হাঙ্গামার সময় ভাস্কর পণ্ডিত নাকি এই পুজোর সূচনা করেন। আবার লোবাগ্রামের কালী বীরভূমের প্রত্যন্ত এলাকার বিখ্যাত কালী। পুজোয় এখানে বিরাট মেলা বসে। লোবার কালীপুজোয় হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদ নেই।
আকালীপুর
আকালিপুরের গুহ্যকালী। ছবি: উজ্জ্বলকুমার মণ্ডল।
বীরভূম জেলার নলহাটি জংশন থেকে ১৫ কিমি দূরে অধিষ্ঠিত মহারাজ নন্দকুমারের প্রতিষ্ঠিত গুহ্যকালী। আঠেরো শতকের শেষ দিকে বারাণসীর চৈত সিংহের আমলে এক বুজে যাওয়া ইঁদারা খুঁড়তে গিয়ে পাওয়া যায় এই মূর্তি। কষ্টিপাথরের বিশাল সর্পাসনা মূর্তি, অনাবৃত দেহে সর্পাভরণ, মাথায় হাজের সাপের মুকুট, কর্ণভূষণ শিশু শব, গলায় মুণ্ডমালা, নাগের উপবীত, বর ও অভয়মুদ্রায় প্রসারিত দুটি হাত। চৈত সিংহ যখন দেবীকে কাশীতে প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেন, বাদ সাধলেন ওয়ারেন হেস্টিংস। পুরাতাত্ত্বিক মূল্য বিচারে তিনি মূর্তিটি নিয়ে যেতে চাইলেন লন্ডনের মিউজিয়ামে। চৈত সিংহ গোপনে মূর্তি গঙ্গায় বিসর্জন দিয়ে রটিয়ে দিলেন, সেটি চুরি গিয়েছে। নন্দকুমার কোনও ভাবে দেবীকে উদ্ধার করে আকালীপুরে ১৭৭৫-এ তাঁকে প্রতিষ্ঠা করেন।
বর্তমানে এই গুরুত্বপূর্ণ স্থানটি অবহেলিত। অথচ এর পরিবেশ খুবই সুন্দর। অদূরে ব্রহ্মাণী নদী, নদীতীরে শ্মশান, শ্মশান ঘিরে জঙ্গল। জঙ্গলের কাছেই মুক্ত প্রান্তরে আটকোণা ইটের মন্দির। নলহাটি বা রামপুরহাট থেকে বহরমপুরগামী যে কোনও বাসে উঠে নগড়ার মোড়ে নেমে ভ্যানরিকশয় কিমি দুয়েক গেলেই আকালিপুর। জেলা প্রশাসন একটু উদ্যোগী হলে বীরভূম জেলার পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে আকালিপুর।

আমাদের চিঠি, সম্পাদকীয় বিভাগ,
আনন্দবাজার পত্রিকা প্রাঃ লিঃ,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০০০১



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.