|
|
|
|
দৃষ্টিহীনদের মোমবাতিতেই সাজবে দীপাবলি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া |
ওঁদের তৈরি মোমবাতিতে আলোকিত চারিদিক। অথচ, দীপাবলির সন্ধ্যাতেও অন্ধকারেই ওঁরা।
বছরভর রান্নার মশলা, খাতাপত্র-ঝাঁটা-সহ নানান জিনিসপত্র বানায় হলদিয়ার চৈতন্যপুরের রামপুর বিবেকানন্দ মিশন আশ্রমের দৃষ্টিহীন আবাসিকেরা। কিন্তু কালীপুজোর প্রাক্কালে শুধুই মোমবাতি। হাতে তৈরি সেই মোমবাতির আলোয় সেজে ওঠে গৃহস্থের ঘর। আর তাতেই তৃপ্তি ওঁদের।
চৈতন্যপুর থেকে কুকড়াহাটি যাওয়ার পথে আবাসিক এই আশ্রমে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। রয়েছে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও। ১৯৮৭ সালে এখানে দৃষ্টিহীনদের জন্য কর্মমুখী প্রশিক্ষণ শুরু। পরের বছর থেকেই চালু হয়ে গিয়েছে উৎপাদন। এ ছাড়াও দৃষ্টিহীনদের জন্য রয়েছে পুনর্বাসন কেন্দ্র। বর্তমানে সেখানেই ৩৭ জন দৃষ্টিহীন আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁরা সারা বছরই রান্নার মশলা, অফিস ফাইল, খাতা, ঝাড়ু তৈরি করেন।
আর কালীপূজোর প্রাক্কালে হিড়িক পরে মোমবাতি উৎপাদনে। |
|
নিজস্ব চিত্র। |
কোনও যান্ত্রিক পদ্ধতির সাহায্যে নয়, একেবারে হাতে ছাঁচে ফেলে তৈরি হয় এই মোমবাতি। দু’বছর ধরে রীতিমতো প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরই এই উৎপাদন কেন্দ্রে কাজের সুযোগ পাওয়া যায়। এখন কৌশিক হাজরা, শ্যামল ভুঁইয়া-সহ ৯ জন ছাত্র প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। আবার ঝাড়গ্রামের বিনপুরের মনসারাম মুর্মু, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার নোড়াপাইয়ের সঞ্জয় দলুই, হাওড়ার শ্যামপুরের অশোক মিশ্রর মতো ৩৭ জন দৃষ্টিহীন উৎপাদনের কাজে যুক্ত। প্রশিক্ষণের জন্য সরকারি কিছু অনুদান পেলেও পুনর্বাসন কেন্দ্রের দায়ভার বহন করতে হয় আশ্রমকেই। তাই এই সব সামগ্রী বাজারে বিক্রি করার পরে লভ্যাংশের কিছুটা বেতন হিসাবে দেওয়া হয়। প্রশিক্ষক প্রভাস প্রামাণিক বলেন, ‘‘আমাদের শিক্ষা দফতর থেকে যে পরিমাণ অনুদান আসে তা পর্যাপ্ত নয়। বাকি অর্থের সংস্থান জিনিসপত্র বিক্রি করেই আসে। ওঁদের হাতেও কিছু টাকা তুলে দিই। যাতে বাড়িতে সাহায্য করতে পারে।” এ বছর অর্ডার এসেছে প্রচুর। তাই বেজায় খুশি ওঁরা। বছর আঠাশের সঞ্জয় দলুই মোমবাতি বানাতে-বানাতে বলেন, ‘‘কালীপুজোর ছুটিতে ঘরে যাব মোমবাতি নিয়ে। আমার হাতে তৈরি মোমবাতি বিভিন্ন জায়গায় জ্বলবে এটা ভেবেই মজা হচ্ছে। নিজে দেখতে না পেলেও আলোর বাহারে যে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে, তা আমার জানা।” |
|
|
|
|
|