ক্রমশই বাড়ছে মৃতের সংখ্যা
ধ্বংসস্তূপ থেকে এখন প্রাণ বাঁচানোর আর্তি
যে দিকে তাকানো যায় শুধুই ধ্বংসের চিহ্ন। যেন কোনও অদৃশ্য দানব প্রচণ্ড প্রতিহিংসায় তছনছ দিয়েছে সব কিছু। তার উপর আবার তাপমাত্রা প্রায় হিমাঙ্কের কাছাকাছি। সেই কনকনে ঠান্ডার মধ্যেই প্রাণের স্পন্দনের খোঁজে ধ্বংসস্তূপ হাতড়ে বেড়াচ্ছে এক দল লোক। কেউ কেউ আবার সেই আশাও হারিয়ে মর্গে খুঁজছেন প্রিয়জনের দেহ।
২৪ ঘণ্টা পরে তুরস্কের ভূকম্প বিধ্বস্ত এক্রিস শহর এবং ভান প্রদেশের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরলে এখন শুধু এই দৃশ্যই দেখা যাচ্ছে। রবিবারের ৭.২ মাত্রার কম্পনে তুরস্কের এই দু’টি অঞ্চলই সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। দেশের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী ইদ্রিস নইম সাহিন আজ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত ২৬৪টি মৃতদেহের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। আহত অন্তত দেড় হাজার। তবে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। কারণ ধ্বংসস্তূপের তলায় এখনও অনেকে চাপা পড়ে আছে।
এক্রিস শহরে ঢুকতেই দেখা গেল, স্থানীয় এক স্কুল শিক্ষিকা একটি চারতলা বাড়ির ধ্বংসস্তূপের সামনে দাঁড়িয়ে উদ্ধারকারী দলকে ক্রমাগত তাড়া দিয়ে চলেছেন। জানালেন, এই ধ্বংসস্তূপের তলাতেই চাপা পড়ে আছেন তাঁর বান্ধবী হাতিশ হাসিমোগলু। কম্পনের ৬ ঘণ্টা পরে তাঁকে ফোন করে হাতিশ জানান যে, সিঁড়ির তলায় চাপা পড়ে আছেন তিনি। উদ্ধারকারীরা তাঁকে উদ্ধার করতে এত দেরি করছে কেন, সেই নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে ক্ষোভ উগরে দিলেন উদ্বিগ্ন ওই শিক্ষিকা। কিন্তু সবাই হাতিশের মতো ভাগ্যবান নন। সামনেই দেখা গেল, একটি শিশুর মৃতদেহ কালো ব্যাগে মুড়ে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলা হচ্ছে। আর এক বৃদ্ধা, সম্ভবত তাঁর ঠাকুমা কাঁদতে কাঁদতে চলেছেন অ্যাম্বুল্যান্সের পিছনে। পাশেই দিয়ারবাকির শহরে জোর কদমে একটি চারতলা বাড়ির ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করছেন এক দল দমকলকর্মী। সময় নেই। ভিতরে চাপা পড়ে আছে চারটি শিশু। চারপাশে উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের ভিড়।
চলছে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে প্রাণের খোঁজ। ছবি: পি টি আই
তুরস্ক ভূকম্প প্রবণ এলাকা। মাঝে মাঝেই কেঁপে ওঠে মাটি। সেই অঞ্চলের লোক এ সবে অভ্যস্ত। কিন্তু গত কালের কম্পনের কথা বলতে গিয়ে এখনও শিউরে উঠছেন ৩২ বছরের হাকান দামিরতাস। নির্মাণকর্মী হাকান কম্পনের সময়ে ভানে ছিলেন। তাঁর কথায়, “হঠাৎ দেখি চারপাশ দুলছে। প্রায়ই এ রকম হয় বলে প্রথমে গুরুত্ব দিইনি। কিন্তু তার পরেই বীভৎস আওয়াজ হতে থাকে। ভারা বেঁধে কাজ করছিলাম। সেখান থেকে পড়ে যাই।” উদ্ধারকারীরা মাঝে মাঝেই কাজ থামিয়ে এক মনে শুনছেন। যদি ধ্বংসস্তূপের তলা থেকে কোনও আওয়াজ শোনা যায়। যদি এখনও কেউ বেঁচে থাকে।
দুর্গম এলাকা আর কম্পনের জেরে দেশের দরিদ্রতম অঞ্চল ভান প্রদেশের বিভিন্ন গ্রামের রাস্তাঘাট ভেঙেচুরে যাওয়ায় সেখানে উদ্ধারকারী দল এখনও পর্যন্ত পৌঁছতেই পারেনি। সেখানকার অধিকাংশ বাড়ি মাটির তৈরি। এই কম্পনে সেই গ্রামগুলির প্রায় কোনও বাড়িই আর অক্ষত নেই বলে জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর। এই অঞ্চলে মাটির তলায় ঠিক কত জন চাপা পড়ে আছে, সে ব্যাপারেও সঠিক কোনও তথ্য নেই কারও কাছেই। কম্পনে এক্রিস ও সংলগ্ন কয়েকটি শহরের কয়েকশো বহুতল একেবারে মাটিতে মিশে গিয়েছে। সেখানেও চাপা পড়ে আছেন অনেকে। ফলে মৃতের সংখ্যা অনেক বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। ভূকম্প বিশারদ পোলাট গুলকান জানান, কম্পনে ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর জন্য সরকারের তরফে কম্পন প্রতিরোধী জিনিস দিয়ে বাড়ি তৈরির নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু দাম বেশি পড়ায় বেশির ভাগ বাসিন্দাই সেই নিয়ম মানেননি। তাই কম্পনে মৃতের সংখ্যা অনেক বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা পোলাটের।
বেঁচে গেল ছোট্ট ইউনুস। ছবি: রয়টার্স
এ দিকে গত কাল বড় ভূকম্পটির পর থেকে এখনও পর্যন্ত দু’শোটিরও বেশি কম্পন টের পাওয়া গিয়েছে। যার মধ্যে রিখটার স্কেলে একটির মাত্রা ছিল ৬। কাল রাতেই কপ্টারে করে এক্রিস পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইপ এর্দোগান। তিনি জানান, এই কম্পনে এক্রিসের ৫৫টি বহুতল মাটিতে মিশে গিয়েছে। এর মধ্যে একটি হাসপাতালও রয়েছে। আহতদের বাইরের বাগানে রেখে চিকিৎসা করা হচ্ছে। আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কয়েকশো উদ্ধারকারীকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন এর্দোগান। অবস্থা সামলাতে সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে। প্রচুর রসদ নিয়ে সেনা বাহিনীর একটি বিশেষ বিমান ভান বিমানবন্দরে নেমেছে। এক্রিসে দু’টি তাঁবুর মধ্যে অস্থায়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্র খুলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার চিকিৎসকরা। এ দিকে কম্পনের জেরে স্থানীয় একটি থানার দেওয়াল ভেঙে পড়লে ১৫০ জন বন্দি পালিয়ে যায়। অবশ্য তাদের মধ্যে পরে অনেকে ফিরে এসেছে বলে দাবি করেছেন জেল কর্তৃপক্ষ।
উদ্ধার হওয়ার কিছু পরেই মারা গেলেন এই প্রৌঢ়। ছবি: এএফপি
সর্বস্ব হারিয়ে বহু লোক স্থানীয় একটি স্টেডিয়ামে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে খোলা আকাশের নীচেই রাত কাটাচ্ছেন। এর মধ্যেই খাদ্য ও পানীয় জলের অভাব দেখা দিয়েছে। বেশির ভাগ জায়গায় বিদ্যুৎ নেই। কিন্তু প্রচণ্ড ঠান্ডার মোকাবিলা করার জন্য পর্যাপ্ত রসদের অভাবই সব চেয়ে বেশি চিন্তায় ফেলেছে উদ্ধারকারীদের।
এই ঘটনায় প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে ইরান, বুলগেরিয়া, ইজরায়েল, গ্রিস সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে। এ জন্য তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন এর্দোগান। কিন্তু তাঁর দেশই এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
কিন্তু ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে কত তাড়াতাড়ি জীবিতদের উদ্ধার করা যায়, সেই চিন্তাই প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারের কাছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.