নতুন কোচিং সরণিতে সুব্রতর জন্য দশ চিন্তা
“ওরে বাবলু, তুই এ বার কিছু করে দেখা! তুই-ই তো করবি!”
“বাবলু, তুই গেলি! আর কেউ তোকে বাঁচাতে পারল না।”
চিন্তায় পড়লে আনমনে এ রকম কিছু স্বগতোক্তি করে থাকেন সুব্রত ভট্টাচার্য। তেজিয়ান কথা বলে দেওয়া লোকটা তখন অন্য রকম। মুখে হাসি, তবু তিনি যেন তিনিতে নেই।
আই লিগের অভিজ্ঞতম কোচের (সুখবিন্দর সিংহ) সবচেয়ে অনভিজ্ঞ (পৈলান অ্যারোজ) দলের সামনে পড়ে সুব্রতর মুখে কী স্বগতোক্তি থাকবে জানি না। জীবনে প্রথম তিনি ম্যাচের আগে ক্লাবে স্পিকটি নট। গত সাত বছর আই লিগে মোহনবাগান প্রথম ম্যাচ জেতেনি জানেন তো?

রক্ষণে নেতার খোঁজে
মোহনবাগান মাঠে প্র্যাক্টিস দেখতে এলে বাকি তেরো দলের কোচের চোখ চকচক করবে! দুই স্টপার কিংশুক দেবনাথ, আনোয়ার বা সৌরভ চক্রবর্তী! সাইডব্যাক নবি আর ধনরাজন। প্রত্যেক বড় দলেই রক্ষণে এক জন নেতা এখন। ওপারা ইস্টবেঙ্গলে। সালগাওকরে লুসিয়ানো। চার্চিলে আন্টুন। ডেম্পোয় মহেশ। প্রয়াগ ইউনাইটেডে পর্যন্ত বেলো রজ্জাক-দীপক। মোহনবাগানে কে? নিরুদ্দিষ্টের প্রতি পত্র লেখা যায়।

মাঝমাঠে শুধু ভজ গৌরাঙ্গ
জ্বর নিয়ে মাঠে আসা সুব্রতর অধিকাংশ সময় গেল সোদপুরের গৌরাঙ্গ দত্তকে নিয়ে। ডান দিকে বল পেলেই উঁচু করে তুলে দেওয়া সোদপুরের গৌরাঙ্গকে। দৌড় এবং সেন্টার। এমন দল হয়েছে যে মাঝমাঠে গেম মেকারের ‘গ’ নেই। ওডাফা-সুনীলকে সামনে বল বাড়াতে রইলেন কে? মাঝমাঠে দুই রক্ষণাত্মক ডিফেন্ডার রাকেশ মাসি, মণীশ মাথানি। বাকি থাকল দুইগৌরাঙ্গ ও হাদসন দি লিমা। চোট শিকেয় তুলে ব্যারেটোকে প্র্যাক্টিস ম্যাচে নামানোর পরে গেমমেকিংয়ের সূর্যদেব কিছুটা উঁকি মারলেন।

ইগো বনাম ইগো
ডাক্তারি টার্ম অনুযায়ী, তিনি ফিট। কিন্তু একটু চোট লাগলেই যে ওডাফাকে বসে পড়তে হচ্ছে। গ্যালারি থেকে এক বার আতর্নাদ এল, “লক্ষণ ভাল নয়!” ওডাফাকে সামলাতে না পেরে চার্চিলের এক গাদা বিদেশি কোচের চাকরি গেছে। করিম, জোরান, সুব্রহ্মণ্যম, এমেকা, পাহিরা, ওসেমানু। সুব্রত মাঝে মাঝেই ওডাফার কাঁধে হাত দিয়ে আশ্বাস দিচ্ছেন। কিন্তু ওডাফা তো টপ ফর্মের চিমা। কোন বেলপাতায় তুষ্ট হন, কখন মেদিনী কাঁপান, কেউ জানে না। তাঁকে তাতাতে সুব্রত ইগোসর্বস্ব ভাবমূর্তি মুছে ফেলতে পারবেন?

ভগবানের ছায়া
চুনী গোস্বামীকে বেরোতে দেখে দাঁড়িয়ে গেলেন ব্যারেটো। তিনিও বাড়ি ফেরার পথে। মোহনবাগান তাঁবুর রাস্তায় পাশাপাশি চুনী ও ব্যারেটোফোটোগ্রাফারদের স্বপ্নের ছবি। স্বপ্নের দৃশ্য কি মাঠে তৈরি করতে পারার ফিটনেস রয়েছে মোহনবাগানের বর্তমান ভগবানের? ফিটনেস নিয়েই জানতে চাইলেন আন্তরিক চুনী। ব্যারেটো বললেন, “আগের চেয়ে অনেক ফিট।” প্র্যাক্টিসে দৌড়নোর সময় ব্যারেটোকে কিন্তু চনমনেই দেখাল। সুব্রত মনে হচ্ছে, পরের দিকে হলেও ব্যারেটোকে কিছুক্ষণ নামাবেন।

গতি, ফিটনেস যখন উধাওল্যান্ডে
উসেইন বোল্ট হতে বলছে না কেউ। কেউ বলছে না, ভারতের দ্রুততম অ্যাথলিট সমীর মান হতেও। কিন্তু ফুটবলের জন্য ন্যূনতম গতি দরকার। সেটা মোহনবাগানে কে আনবেন? গৌরাঙ্গ দত্ত, নবি, মণীশ এবং সুনীল ছেত্রী ছাড়া প্রথম এগারোর কাউকে গতিময় মনে হল না। বার্নার্ড এর আগে বলেছিলেন, “আমাদের দল বড় দলগুলোর সঙ্গে ভাল খেলছে। ছোট দলগুলোর সঙ্গে সমস্যায় পড়ছে।” কারণ দুটোগতির অভাব। ফিটনেস। সে আর দ্রুত ফিরে আসবে না উধাওল্যান্ড থেকে।

ফুটবল অঙ্কের চমক
অতীতে মাঝে মাঝেই বেশ কিছু অচেনা ফুটবলারকে অন্য পজিশনে খেলিয়ে চমকে দিয়েছেন সুব্রত। দলের দুর্বলতা ঢাকতে। প্রদীপকে প্র্যাক্টিসে সাইডব্যাকে দেখে নেওয়ার মধ্যেই স্পষ্ট, সুব্রত এমন অঙ্ক কষছেন নতুন কোচিং সরণিতে। বিদেশি কোচেদের যা করা কঠিন।

বেঞ্চ যে নড়েচড়ে
ওডাফা, ব্যারেটোর কখন চোট লাগবে, সেই ভয়ে কাঁটা ক্লাবের অনেকে। বড় দলগুলোকে ভারসাম্য দেয় চার নম্বর বিদেশি। মোহনবাগান সেখানেই তো অন্ধকারে হাতড়াচ্ছে। রিজার্ভে সুব্রতর অনেক পরিচিত মুখ। অসীম, বুঁগো, মুরলীর মতো অভিজ্ঞদের পাশে জুয়েল, দীপেন্দু দুয়ারি, সতীশের মতো প্রতিভাবান। এতে ঝাড়বাতি জ্বলবে? ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো পরিবর্ত তো নেই।

কত দিন ভাই ভাই
সাংবাদিকরা বসে আছেন সুব্রতর সাংবাদিক সম্মেলনের জন্য। হঠাৎ সেখানে হাজির প্রশান্ত বন্দোপাধ্যায়। সুব্রতই পাঠিয়েছেন। এ পর্যন্ত এটাই মোহন টিডির সেরা মাস্টার স্ট্রোক। নিজে আড়ালে থেকে এগিয়ে দিলেন সহকারীকে। কী টিম নামাবেন, কী আপনাদের চিন্তা, এ সব প্রশ্নের উত্তরে প্রশান্ত যা করলেন, তা ক্রিকেটের ভাষায়, “বল যেখানে খেললেন, সেখানেই পড়ল।” একেবারে সুখবিন্দর সিংহের ঘরানা। অনেক কথা যাও যে বলে কোনও কথা না বলে।
অতীতে যদি এঁরা অর্জুন-কর্ণ হন, এখন তা হলে রাম-লক্ষণ। বা ব্যোমকেশ বক্সি এবং অজিত। সুব্রতর পিছু পিছু সব সময় প্রশান্ত। দু’জনেই জানেন, এটা তাঁদের শেষ সুযোগ। এখানে ঝামেলা করে, একে অন্যের বিরুদ্ধে তোপ দাগলে ভবিষ্যতে কোথাও কোচিং করানোর দরজা বন্ধ। এটাই তাঁদের এক থাকার ওষুধ।

কমিটির কাঁটা
ক্লাব তাঁবুতে শনিবার একেবারে আদর্শ পরিবার। ব্যারেটো নিয়ে চুনী গোস্বামী খোঁজ নিচ্ছেন সুব্রত ভট্টাচার্যের কাছে। সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায় চুটিয়ে আড্ডা মারছেন অন্য ফুটবলারদের সঙ্গে। সুব্রত-প্রশান্তর প্র্যাক্টিস দেখতে মাঠের বাইরে বসে।
এই পরিবেশটা কত দিনের জন্য? সব নির্ভর করছে সুব্রত ভট্টাচার্যর উপর। কবে আবার তিনি বলে বসেন, “এই কমিটি কে? আমিই সব। ওদের এত কথার কী আছে?” মোহন তাঁবুতে এ কথা শোনার জন্য অপেক্ষায় অনেকে। যাঁরা মনে করেন, সুব্রতর সবচেয়ে শত্রু তাঁর মুখ। প্রথম দিন সেই মুখ বন্ধ দেখে তাঁরাও অবাক।

কালিদাস কর্তা
বছর কয়েক আগেও মোহন কর্তাদের অনেককে বলা হত ‘কালিদাস’। স্বার্থে ঘা পড়লেই এখানে কোচের পিছনে লাগা শুরু হত। টিমের ক্ষতি হবে জেনেও। নির্বাচনের মুখে সুব্রতকে এখন কেউ বিরক্ত করবে না। কিন্তু কত দিন এঁরা সুব্রতর আড়ালে থাকতে চাইবেন?
এ সব প্রশ্ন নিয়েই আজ আবার আই লিগে বাবলুবাবুর বাগান।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.