চার্চিল ব্রাদার্স ১ (এন ডি ওপারা)
ইস্টবেঙ্গল ০ |
ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের ফোকাস কি পনেরো মাসের মধ্যেই নড়ে গেল?
সাডেন ডেথে সুপার কাপ জিতলেও ব্রিটিশ কোচের কাছ থেকে কি ‘ভাগ্যদেবী’ ক্রমশ দূরগামী হচ্ছেন?
লাল-হলুদের অন্দরে অ্যালান গাওকে নিয়ে চাপান উতোরের প্রভাব কি পড়েছে টিমে? গাও-কে নিয়ে কর্তাদের সঙ্গে কোনও দূরত্ব কি ফের তৈরি হয়েছে কোচের? যাতে উত্তেজিত হয়ে পড়েছেন মর্গ্যান।
আই লিগ শুরুতেই বেটো-হীন চার্চিলের সামনে চূড়ান্ত অগোছাল ইস্টবেঙ্গলকে দেখে এই প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খেতে শুরু করল।
ম্যাচ শেষে সাংবাদিকদের সামনে এসে প্রথম প্রশ্নের সঙ্গে সহমত না হলেও পরের দু’টো মেনে নিলেন মর্গ্যান। বলে দিলেন, “হ্যাঁ, গাওকে নিয়ে ঘরে-বাইরে বিতর্ক দলের উপর হয়তো প্রভাব ফেলেছে। ওকে আমি এই ম্যাচে মিস করেছি।” টোলগের বদলে প্রথম টিমে গাও-ই তাঁর পছন্দ, ম্যাচের আগের দিন বলেই দিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। এ দিন সকালে স্কটিশ ফুটবলার জানান, তাঁর উরুর পেশির পুরনো চোট সারেনি। তাই খেলতে পারবেন না।
প্রথমার্ধে টোলগের নিশ্চিত গোল অফসাইডের অজুহাতে বাতিল করলেন ফেড কাপের সেই বিতর্কিত রেফারি উত্তরাখন্ডের প্রতাপ সিংহ। ইস্টবেঙ্গল প্রতিবাদপত্র পাঠাচ্ছে রেফারির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। টোলগের একটা শট ক্রসপিসে লেগেও ফিরল। অন্তত দু’টো নিশ্চিত গোল বাঁচালেন চার্চিলের গোলকিপার ফেলিক্স ডি’সুজাও। এটা ঘটনা, ফেড কাপের ‘ভাগ্য’ শনিবার সঙ্গী ছিল না ইস্টবেঙ্গলের। বিরতিতে মর্গ্যান জার্সি বদল করে ‘পয়া’ জার্সি পরে আসার পরও যা বদলায়নি। আবার এটাও সত্যি, সাম্প্রতিক কালে এত আগোছালো ফুটবল লাল-হলুদ জার্সি খেলেনি।
|
বেটো না খেলা মানে নাবিক ছাড়া চার্চিলের মাঠে নামা। সেই দলকেই হারাতে পারল না ইস্টবেঙ্গল। মেহতাব হোসেন না থাকাতেই কি হাল টিমটার! বারুইপুরের ছেলের কোনও বিকল্প কেন নেই টিমে? ‘‘নেই। কী আর করা যাবে।” বলে থেমে যান মর্গ্যান। লাল-হলুদের খেলায় কিন্তু কোচের উত্তেজনার প্রভাবও স্পষ্ট। ম্যাচ চলার সময় কখনও যিনি চেয়ারে বসেন না সেই মানুষই প্রথমার্ধে কার্যত বসে থাকলেন। দ্বিতীয়ার্ধে ৫৭ থেকে ৬৪--সাত মিনিটের মধ্যে তিনটি বদলও করলেন।
লুই ফিগোর এক সময়ের কোচ ম্যানুয়েল গোমসের অভিজ্ঞতা, ভারতে কোচিং করতে আসা যে-কোনও ক্লাব কোচের চেয়ে ভাল। রবিবারের সকালে ব্যাগ হাতে বাজার করতে বেরোনো ছাপোষা বাঙালির মতো দেখতে পর্তুগিজ ভদ্রলোককে। চার্চিলকে তিনি খেলালেন পিরামিড স্টাইলে। এক জন স্ট্রাইকারকে সামনে রেখে ফর্মেশনটা ১-২-৩-৪। আর এটা দিয়েই যুবভারতীতে তিনি টেক্কা দিয়ে গেলেন হাল সিটির প্রাক্তন ডেভলপমেন্ট কোচ মর্গ্যানকে।
মেহতাব থাকলে এই পরিস্থিতিটা হয়তো সামাল দিতে পারতেন তিনি। কিন্তু টিমের হৃৎপিণ্ডই যেখানে নেই সেখানে রক্তসঞ্চালন হবে কী করে? ফলে মাঝমাঠে সব সময়ই একজন করে বেশি লোক থাকছিল চার্চিলের। আক্রমণে ওঠার সময় গড়ে তিন জন যাচ্ছিলেন ইস্টবেঙ্গল বক্সে হানা দিতে। এতে হল কী, ইস্টবেঙ্গল খেই হারিয়ে ফেলছিল। টোলগে-রবিন যুগলবন্দি এ বার একেবারেই সফল হচ্ছে না। গতবারের সর্বাধিক গোলদাতা টোলগের সেই হঠাৎ-হঠাৎ সাইড লাইনের দিকে সরে গিয়ে কাট করে বিপক্ষের বক্সে ঢুকে পড়াটাও চোখে পড়ছে না। ফলে গতবারের ঝাঁঝ পাওয়া যাচ্ছে না। মাঝমাঠে পাসারের অভাব এবং অসংখ্য মিস পাস এ দিন আরও অন্ধকারে নিয়ে গেল মর্গ্যান ব্রিগেডকে।
ইস্টবেঙ্গল শুরুতেই গোলটা হজম করল। যেভাবে গোলটা হল তা কিন্তু মর্গ্যানকে চিন্তায় ফেলার পক্ষে যথেষ্ট। ওপারা বনাম ওপারা যুদ্ধের একটা এপিসোড দেখা গেল গোলের সময়। লাল-হলুদ রক্ষণের সবথেকে শক্তিশালী স্তম্ভকে টপকে চার্চিলের এন ডি ওপারা যখন গোলটা করে গেলেন তখন তাঁর ধারেকাছে ছোট্টখাট্টো নির্মল ছাড়া কেউই নেই। ওপারাও কি ফর্ম হারাচ্ছেন টোলগের মতো?
ওপারা নয়, পুরো ম্যাচে নজর কাড়লেন এ দেশে নতুন আসা এক অস্ট্রেলীয় স্টপার। চার্চিলের ছয় ফুট চার ইঞ্চির অ্যান্টন কোভাসিস। শুরুতেই মাথা ফেটেছিল তাঁর। তা নিয়েই গত বারের রানার্সদের একা কুম্ভের মতো থামালেন।
দুই শহরে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সের এক দিনেই হার। আই লিগের শুরুই হল চমক দিয়ে। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই গেল, মর্গ্যানের টিমের চেহারা কবে বদলাবে? ইস্টবেঙ্গলের এক কর্তা অবশ্য বললেন, “আমরা যে বার শেষ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম, সে বার কিন্তু হার দিয়ে শুরু হয়েছিল।” সদস্য-সমর্থকরা এ সব ইতিহাস মনে রাখতে চান না। এক সমর্থক তো বিরতির পর পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে হেঁটে রিজার্ভ বেঞ্চের সামনে পৌঁছে গেলেন। মর্গ্যানের দিকে তেড়েও গেলেন।
|
আন্তর্জাতিক তারকা আনতে চান লিয়েন্ডার
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
চূড়ান্ত অব্যবস্থার মধ্যে শুরু হল আই লিগ। দায়সারা উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হল অন্য দুটি শহরে ম্যাচ হয়ে যাওয়ার পরে। তাও ইস্টবেঙ্গল বনাম চার্চিল ম্যাচের বিরতিতে। কোনও মতে।
প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির আমলে তিন জন প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেছিলেন আই লিগের। মনমোহন সিংহ, অটলবিহারী বাজপেয়ী, দেবগৗড়া। এ বার প্রেসিডেন্ট প্রফুল্ল পটেল নিজেই আসার প্রয়োজন মনে করেননি। পঞ্চাশটি ঢাকির বাজনার পরে গান গাইতে এসেছিলেন নচিকেতা। একটি গান গেয়েই চলে যেতে হয় বৃষ্টির জন্য। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসার কথা ছিল নতুন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর লিয়েন্ডার পেজের। ম্যাচের আগে তিনি ফুটবলারদের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। ট্রাফিক জ্যামে আটকে যাওয়ায়। লিয়েন্ডার বিরতিতে মাঠে এসে কিছু সময় ফুটবল খেলেন বেটোর সঙ্গে। পরে লিয়েন্ডার বলেন, “আমি এখানে স্যুট পরে বসে থাকতে আসিনি। বা বল নিয়ে জাগলিং করতে আসিনি। আমি এখানে ফুটবলের উন্নতিতে কাজ করব। তার পরে কথা বলব।”
মেসির ভক্ত লিয়েন্ডার ভারতীয় ফুটবলের বিপননের উপর জোর দিলেন। বলেন, “ক্রিকেট বোর্ড যে ভাবে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে, সেভাবে ফুটবলের জনপ্রিয়তা বাড়াতে হবে।” তাঁর কথা, “অনেক আন্তর্জাতিক ফুটবলার আমার বন্ধু। তাদের ভারতের ফুটবলে কাজে লাগাতে চাই।”
|
ইস্টবেঙ্গল: গুরপ্রীত, সৈকত (বলজিৎ), ওপারা, নির্মল, রবার্ট, ভাসুম (খাবরা), পেন, সুশান্ত (সঞ্জু), পাইতে, রবিন, টোলগে। |