প্রবন্ধ...
কালো মেয়ের সংসার
সুন, অ্যাড্রি জোনস-এর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিই। শিক্ষিত, ঝকঝকে ৩৯ বছরের একটি মেয়ে সে। ওয়াশিংটনে এক বহুজাতিক সংস্থার উঁচু পদে চাকরি করে। হাসিখুশি, মিশুকে মানে, এক কথায় পছন্দ হওয়ার মতো এক জন মানুষ অ্যাড্রি। তার খুব ইচ্ছে, বিয়ে করে নিজের সংসার পাতার। সেই সংসারে ফুটফুটে দুটো বাচ্চা থাকবে, আর মনের মতো এক জন স্বামী। কিন্তু, সেই ইচ্ছে কখনও পূরণ হবে কি? অ্যাড্রি নিজেই বলেছে, ‘আমি নিজেকে মানসিক ভাবে সেই জায়গাটায় নিয়ে যাওয়ার খুব চেষ্টা করছি, যেখানে আমি মেনে নিতে পারব যে আমার কখনও নিজের সংসার হবে না।’
অ্যাড্রির সম্ভবত কখনও বিয়ে হবে না। কারণ সে এক জন উচ্চশিক্ষিত, ভাল চাকরি করা আফ্রিকান-আমেরিকান মেয়ে। না, বর্ণবিদ্বেষের গল্প নেই এখানে। এ এক অন্য উপাখ্যান। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির আইনের অধ্যাপক র্যালফ রিচার্ড ব্যাঙ্কস অ্যাড্রির মতো মেয়েদের কথা লিখেছেন তাঁর নতুন বইয়ে। বইটার নাম, ‘ইজ ম্যারেজ ফর হোয়াইট পিপল? হাউ দি অ্যাফ্রিকান-অ্যামেরিকান ম্যারেজ ডিক্লাইন অ্যাফেক্টস এভরিওয়ান’। আর, এই বইটা লিখেই প্রবল রোষের মুখে পড়েছেন তিনি। নিজে এক জন কালো মানুষ হয়ে বইয়ের কথাগুলো লিখতে পারলেন ব্যাঙ্কস?
কথাগুলো অবশ্য খুব সত্যি। অ্যাড্রির মতো মেয়েদের বিয়ে হওয়া মুশকিল, কারণ তাদের যোগ্য ছেলে পাওয়া যায় না। আমেরিকার কালো মেয়েরা সাদা ছেলেদের বিয়ে করতে চায় না একেবারেই। তার অনেক কারণ। সে কথা আপাতত থাক। তারা বিয়ে করতে চায় নিজেদের গোষ্ঠীর মধ্যে, আফ্রিকান-আমেরিকান ছেলেদের। সেই ছেলেদের নিয়েই সমস্যা। বিয়ের বয়সে পৌঁছনোর আগেই প্রতি চার জন আফ্রিকান-আমেরিকান ছেলের এক জন জেলে পৌঁছে যায়। ড্রাগের নেশা বা ব্যবসা, বন্দুকবাজি, গুণ্ডামি জেলে যাওয়ার কারণ অনেক। অর্ধেক ছেলেই কখনও স্কুলের গণ্ডি পেরোয় না, কলেজের পড়াশোনা তো দূরের কথা। তারা ভাল চাকরিও পায় না।
সফল। ওপরা উইনফ্রে।
এ দিকে, কালো আমেরিকান মেয়েরা খুব দ্রুত এগিয়ে চলেছে। তাদের অনেকেই অ্যাড্রির মতো লেখাপড়া জানে, ভাল চাকরি করে।
এখানেই সমস্যা। দু’জন মানুষ তখনই বিয়ে করে, যখন তারা বিশ্বাস করে যে বিয়ের পরে তারা দু’জনেই আগের চেয়ে ভাল থাকবে। সব দিক থেকেই। ইস্কুলের গণ্ডি না টপকানো, বে-আইনি ড্রাগ বিক্রির দায়ে জেল খেটে আসা একটি ছেলে অ্যাড্রিকে বিয়ে করলে নিশ্চয়ই আগের চেয়ে ভাল থাকবে। কিন্তু তাকে বিয়ে করলে অ্যাড্রির খারাপ থাকা ঠেকানোর কেউ নেই। সেটা ছেলেটিও জানে, অ্যাড্রিও। ফলে, এই বিয়েটা হবে না। অ্যাড্রি বিয়ে করতে চাইবে এমন কাউকে, যে সামাজিক ভাবে তার সমগোত্রীয়, বা সামান্য এ দিক-ও দিক। কালো আমেরিকান সমাজে তেমন বিবাহযোগ্য ছেলের সংখ্যা, ওপরে বলা কারণগুলোর দৌলতে, খুব কম। সমাজে ছেলে আর মেয়ের সংখ্যা সমানও যদি হয়, বিয়ের বাজারে ছেলের তুলনায় মেয়ের সংখ্যা অনেক বেশি। তাতে সেই বিয়ের বাজারে একটা মোক্ষম জট পাকিয়ে গিয়েছে।
একটা মজার খেলার কথা শুনবেন? ধরুন, একটা ঘরে দশটা বিবাহযোগ্য ছেলে আর দশটা বিবাহযোগ্য মেয়েকে ঢুকিয়ে দেওয়া হল। তাদের বলা হল, প্রত্যেককে বিপরীত লিঙ্গের এক জনকে নিজের সঙ্গী হিসেবে বেছে নিতে হবে। খেলার শেষে কেউ যদি সঙ্গী না পায়, তার জরিমানা হবে। দশ দশ কুড়ি জনই নিয়মটা জানে। প্রত্যেকটি মেয়ে জানে, কোনও না কোনও ছেলে তাকে বাছবেই। প্রতিটি ছেলেও জানে, কেউ না কেউ তাকে সঙ্গী করবে। এই খেলায়, খানিক কথাবার্তার পরই দেখা যাবে, দশটা জোড়া তৈরি হয়ে গিয়েছে। খেলার নিয়মটা একটু বদলে দিলেই সেটা আর এত মিষ্টি থাকবে না। দশ জন ছেলের মধ্যে এক জনকে ঘর থেকে বের করে দিতে হবে। পড়ে থাকবে ন’টি ছেলে, আর দশটি মেয়ে। এখন জোড়া তৈরি হতে পারে ন’টি, আর এক জন মেয়ে সঙ্গী পাবে না। তাকে জরিমানা দিতে হবে। ব্যস, এইটুকু বদলেই সর্বনাশ। প্রতিটি মেয়ে অন্যদের থেকে একটু বেশি সুবিধা দিয়ে এক জন ছেলে জোগাড় করার চেষ্টা করবে। আর, প্রতিটি মেয়েই যেহেতু এই চেষ্টা করবে, তাই সুবিধার পরিমাণও বাড়বে। ছেলেদের পোয়াবারো, যে শর্তে ইচ্ছে, সেই শর্তেই মেয়ে পাবে। মেয়েদের সে শর্ত মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।
খেলাটা মনগড়া নয়। সত্যিই এই পরীক্ষা হয়েছে। এবং তাতে ঠিক এই ফলই হয়েছে। এ বার আমেরিকার কালো মেয়েদের কথা ভেবে দেখুন। তাদের খেলায় এক জন ছেলে কমেনি, অনেক ছেলে কমেছে। ফলে, বিবাহযোগ্য যে ছেলেরা পড়ে আছে, তাদের চূড়ান্ত রমরমা। তারা অনেক দেরি করে বিয়ে করছে, কারণ তাদের সঙ্গে ডেটিংয়ে যাওয়ার মেয়ের অভাব হচ্ছে না। বিয়ে ছাড়াই যৌনতা? প্রায় না চাইতেই পাওয়া যাচ্ছে। বিয়ে করলেও তারা পরকীয়া প্রেম চালিয়ে যাচ্ছে। মেয়েগুলোর তো উপায় নেই, কোনও ভাবে একটা ছেলে না পেলে যে তাদের শাস্তি একাকিত্বের শাস্তি, নিজের পরিবার, নিজের সন্তানের ইচ্ছে পূরণ না হওয়ার শাস্তি। অ্যাড্রি এখনও যে শাস্তির অনিবার্যতা মেনে নিতে পারেনি।
প্রফেসর ব্যাঙ্কস অ্যাড্রিদের জন্য একটা পথ বাতলেছেন। বলেছেন, কালো ছেলেদের মুখাপেক্ষী থেকো না, অন্যদের বিয়ে করো। আর, এই কথা বলেই তিনি প্রবল সমালোচিত। তিনি কি জানেন না, সাদারা এই কালোদের কী চোখে দেখে? তিনি কি জানেন না, এক জন অ-কৃষ্ণাঙ্গকে বিয়ে করা মানে নিজের মানুষদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা?
এই সমালোচনাগুলো অবশ্য মেয়েদের জন্যই। কালো ছেলেরা দিব্যি সাদা মেয়েদের বিয়ে করে সংসার পাতছে। কাজেই, এই সমালোচনা নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। কিন্তু, ব্যাঙ্কস-এর পথটাই কি একমাত্র পথ? তা নয়। অন্তত, দীর্ঘমেয়াদে নয়। যে ছেলেরা বিয়ের বাজারে ঢোকার যোগ্য হয়েছে, তারা কী দুর্দান্ত সব সুবিধা পাচ্ছে, সেটা তো অন্যরাও দেখছে। বহু সম্ভাব্য পাত্রীর মধ্যে থেকে বেছে নেওয়া দারুণ বউ, তার ভাল রোজগার, বিয়ের পরেও বউয়ের মতোই দারুণ বা তার চেয়েও ভাল মেয়েদের সঙ্গে পরকীয়া করার সুযোগ একটা ছেলের জায়গা থেকে দেখলে, এর চেয়ে ভাল আর কিছু হতে পারে না। তার ওপর নিজের সংসার, ছেলেপুলে, সুখী গৃহকোণ লোভনীয় তো বটেই। কাজেই, যে ছেলেরা এখন এই বাজারের বাইরে, তারা নিশ্চিত ভাবেই ঢোকার চেষ্টা করবে। যারা বিয়ের বয়েসে পৌঁছে গিয়েছে, তারা হয়তো আর পারবে না। কিন্তু যারা এখনও কিছু দূরে, তারা চেষ্টা করবেই।
এখানে অবশ্য একটা ‘কিন্তু’ আছে। বাজারে ঢোকার কাজটা সহজ নয়। লেখাপড়া করতে হবে, চাকরি জোগাড় করতে হবে, ড্রাগের নেশায় জড়ালে চলবে না, গুণ্ডামি করা চলবে না, জেলখানার থেকেও দূরে থাকতে হবে। আমেরিকার বেশির ভাগ কালো ছেলে যে পরিবেশে থাকে, সেখানে এই কাজগুলো খুব কঠিন। সস্তার যৌনকর্মী, গ্যাংয়ের নিচুতলার সদস্য হয়ে চটজলদি কিছু ডলারের মালিক হয়ে যাওয়া, শৈশব থেকে কখনও বাবাকে না চেনা, অথবা বাবা থাকলে তার নিত্য-মাতলামি দেখা এই চক্কর এড়িয়ে যাওয়া সহজ নয়।
কিন্তু, এড়িয়ে যাওয়া যায়। যদি সরকার একটু চেষ্টা করে। আর, যদি বিয়ের বাজারটা, অন্তত সাময়িক ভাবে, আরও হেলে পড়ে ছেলেদের দিকে।
না হলে অ্যাড্রির মতো মেয়ের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। তারা সংসারের, সন্তানের স্বপ্ন চেপে রেখে কাজ করে যাবে নিজেদের উঁচু উঁচু পদে।
আর, রোজ পালাবে নিজের বিষণ্ণতা থেকে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.