সম্পাদকীয়...
শ্রম করিলে বুদ্ধি হয়
ল্পটি সুপরিচিত। খরগোশ দ্রুতগতিসম্পন্ন। সহজেই অল্প সময়ে এক স্থান হইতে অপর স্থানে চলিয়া যাইতে পারে আর কচ্ছপ ধীরগতিতে যায়। অতি ধীরে। এমনিতে কচ্ছপ খরগোশের ন্যায় দ্রুতগতিসম্পন্ন হইতে পারিবে না। তবে লাগিয়া থাকিলে ও প্রয়াস করিলে যে শ্রমসচেতন কচ্ছপ অলস খরগোশকে দৌড় প্রতিযোগিতায় পরাজিত করিতে পারে গল্পটি সে কথাই প্রমাণ করিতেছে। কথায় বলে শ্রমের বিকল্প নাই। বুদ্ধির ক্ষেত্রেও নাকি কথাটি সত্য। সাম্প্রতিক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করিয়াছেন মানুষের আই কিউ হ্রাস বা বৃদ্ধি পাইতে পারে। এত কাল ভাবা হইত যে বুদ্ধিমান সে বুদ্ধিমান আর যে বোকা সে বোকা। বুদ্ধিমান চিরকালই বুদ্ধিমান থাকিয়া যাইবে আর বোকা চিরকালই বোকা থাকিবে। যেন এক নিরুপায় দশা। প্রাচীনকালে যেমন মতলববাজ ব্রাহ্মণরা কর্মফলের দোহাই পাড়িতেন, ইহাও যেন আধুনিক কর্মফলবাদ। কর্মফলে কেহ উচ্চবর্ণ, কেহ নিম্নবর্ণ, কেহ ধনী কেহ নির্ধন, তেমনই যেন কেহ বোকা কেহ বুদ্ধিমান। সুতরাং কিছুই আর করিবার নাই।
ইংল্যান্ডের মস্তিষ্কবিজ্ঞানীগণ এই ধারণার মূলে কুঠারাঘাত করিয়াছেন। তাঁহাদের অভিমত, বুদ্ধ্যঙ্ক বা আই কিউ স্থির থাকে না। তাহা কেবল পূর্বনির্ধারিত নহে, অনুশীলনসাপেক্ষ। সাম্প্রতিক গবেষণা বলিতেছে, নিরন্তর কোনও বিষয়ে অনুশীলন করিলে মস্তিষ্কের অভিযোজন ক্ষমতার বলে সব কিছুই বদলাইতে পারে। যেমন কোনও শিক্ষক বা অভিভাবক হয়তো কাহাকে বলিয়া দিলেন: তোমার দ্বারা অঙ্ক হইবার নহে। যাহাকে বলিলেন সে যদি লাগিয়া থাকে, অনুশীলন করে তাহা হইলে এক সময় তাহার গাণিতিক মেধা বৃদ্ধি পাইতে পারে। আর যাহার মেধা প্রবল তাহার মেধা অলসতা ও অনুশীলনের অভাবে কমিয়া যাইতে পারে। যে হয়তো একদা গণিতে খুবই ভাল ছিল, অনুশীলনের অভাবে তাহার মেধায় মরিচা পড়িয়া গেল।
এক দিক হইতে এই কথাগুলি যে খুব অভূতপূর্ব তাহা নহে। সাধারণ ভাবে তো আমরা বুদ্ধিতে শান দিবার কথা বলিয়াই থাকি। তবে মুশকিল হইল, যাহা বলি তাহা আমরা সর্বদা বিশ্বাস করি না। আর বাঙালির প্রবণতা হইল হতাশ হইয়া বসিয়া থাকা, অলসতার পালে হাওয়া লাগানো। এই নেতিবাচক মনোভাব সে কেবল নিজের ক্ষেত্রে বজায় রাখে না, অপরের উপরেও চাপাইয়া দেয়। শিক্ষক ও অভিভাবকগণ তো প্রায়শই ইহা করিয়া থাকেন। ‘তোর কিছু হইবে না’, ‘তুই পারিবি না’, এ সকল কথা বলিতেই তাঁহারা অভ্যস্ত। যাহাকে বলা হইল সে-ও হতাশাগ্রস্ত হইয়া পড়ে। অনেকে আবার ‘আমার দ্বারা কিছু হইবার নহে’, ‘আমার বুদ্ধি কম’ ইত্যাদি বলিয়া নিশ্চেষ্ট হইয়া বসিয়া থাকে। এই হতাশ ও নিশ্চেষ্ট অলসদের জন্য এই বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত বিশেষ দাওয়াইস্বরূপ। তোমরা কী ভাবিতেছ বা কী বলিতেছ তাহা জরুরি নহে। বিজ্ঞান বলিতেছে, লাগিয়া থাকিলে হইবে। হ্যাঁ, সকলে হয়তো সকল কাজে সেরা হইতে পারিবে না, কিন্তু একেবারে কিছু হইবে না, তাহা আর বলিবার উপায় নাই। নিজের অবস্থাকে, বৌদ্ধিক খামতিকে অতিক্রম করিবার জন্য শ্রমের বিকল্প নাই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.