ইন্দিরা আবাস প্রকল্পে জমিহীনদের জমি কেনার টাকার বরাদ্দ দ্বিগুণ করতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ইন্দিরা আবাস প্রকল্পে বিবেচিত হয়েছেন অথচ নিজের নামে জমি নেই বলে বহু গ্রামবাসী বাড়ি করার টাকা পাচ্ছেন না।
নিয়ম হল, এই প্রকল্পে টাকা পেতে হলে প্রাপকের নিজের নামে জমি থাকতে হবে। যাঁদের জমি নেই, তাঁরা যাতে এই প্রকল্পে বাড়ি তৈরি করতে পারেন সেই জন্য ২০০৮ সালে পরিবারপ্রতি ১০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এই রাজ্যে এক জনকেও জমি কিনে দিতে পারেনি পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর। রাজ্য সরকারের বক্তব্য, টাকার পরিমাণ এতটাই কম যে, তাতে বাড়ি তৈরির মতো ন্যূনতম জমিও কিনে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই টাকা বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন করেছিল তারা। তারই ভিত্তিতে বরাদ্দ বাড়িয়ে দ্বিগুণ অর্থাৎ ২০ হাজার টাকা করতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই মর্মে রাজ্য সরকারকে তারা চিঠিও পাঠিয়েছে বলে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের সচিব বরুণকুমার রায় জানিয়েছেন। অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী জয়রাম রমেশ বলেছেন, “চেষ্টা করছি রাজ্যকে যাতে সাহায্য করা যায়। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় এটা একটা দৃষ্টান্ত।”
আইএওয়াই প্রকল্পে জমিহীন গ্রামবাসীর সংখ্যা প্রচুর। এঁদের বাড়ি তৈরির টাকা দিতে না-পারায় আইএওয়াই প্রকল্পে মোট বরাদ্দের একটা বড় অংশ অব্যবহৃত থাকে। সেই কারণেই কেন্দ্রীয় সরকার এই সব গ্রামবাসীকে বাড়ি তৈরির জন্য জমি কিনে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
সরাসরি জমি কিনে দেওয়ার আগে অবশ্য দেখতে হবে আইএওয়াই প্রকল্পে বিবেচিত হতে পারেন এমন কোনও গ্রামবাসী সরকারি জমি অধিকার করে আছেন কি না। যদি থাকেন তা হলে ওই জমিটি তাঁর নামে দলিল করে দেওয়া যেতে পারে বলেও কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতর জানিয়ে দেয়। এ-রকম কেউ আছেন কি না, সেই ব্যাপারে জেলা প্রশাসনগুলির কাছ থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট চায় রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর। এই দফতর সূত্রের খবর, কয়েকটি জেলা জানায়, যে-সব জমি গ্রামবাসীরা দখল করে রেখেছেন সেগুলি বেশিরভাগই সেচ দফতর অথবা পূর্ত (সড়ক) দফতরের অধীন। জেলা প্রশাসনগুলির কাছ থেকে এই রিপোর্ট পাওয়ার পরে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর দু’টি দফতরকে চিঠি লিখে অনুরোধ করে, তারা যেন আইএওয়াই প্রকল্পে বাড়ি তৈরির জন্য তাদের অধীনে থাকা জমি ব্যবহার করতে দেয়। কিন্তু প্রস্তাবটি খারিজ করে দেয় সেচ এবং পূর্ত (সড়ক) দফতর।
এর পরেই জমিহীনদের জমি কিনে দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনগুলির উপরে চাপ বাড়াতে থাকে রাজ্য সরকার। রাজ্যকে আবার একই ভাবে চাপ দিতে থাকে কেন্দ্রীয় সরকার। এক্ষেত্রে বাধা হয় টাকা। রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রাক্তন মন্ত্রী আনিসুর রহমান বলেন, “জমি না থাকায় অনেকে ইন্দিরা আবাস যোজনায় টাকা পাচ্ছেন না। কিন্তু মাত্র ১০ হাজার টাকায় জমি কেনা সম্ভব নয়। বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে আমি লিখিত প্রস্তাব দিয়েছিলাম।”
রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, “এই খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে আমরাও অনুরোধ করেছি।” পঞ্চায়েত সচিব বলেন, “সেই অনুরোধের ভিত্তিতে টাকা বাড়াতে চেয়েছে কেন্দ্র। যেহেতু এর একটা অংশ রাজ্য সরকারকেও দিতে হবে তাই সব রাজ্যকে চিঠি দিয়ে তারা মতামত চেয়েছে।”
|