‘কংগ্রেস-ঘনিষ্ঠ’ দীনেশকে নিয়ে অসন্তোষ তৃণমূলে
খনও শুরু হয়নি জাতীয় উন্নয়ন পরিষদের বৈঠক। একে একে দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে পৌঁছচ্ছেন বিভিন্ন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী ও আমলারা। দেওয়ালির আগে পারস্পরিক শুভেচ্ছা বিনিময়-গল্পে-হাসিতে গমগম করছে বিজ্ঞান ভবন।
প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান, রেলমন্ত্রী-সহ উন্নয়ন পরিষদের অন্য সদস্যদের আসন নির্দিষ্ট করা হয়েছে মঞ্চে। আসনের সামনে বসতে শুরু করেছে নামের ফলকও। একে একে সামনের সারিতে বসাও শুরু করেছেন বিভিন্ন মুখ্যমন্ত্রীরা। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে সঙ্গে নিয়ে প্রথম সারিতেই গিয়ে বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বাকি সব কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে মঞ্চের সামনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেলেও রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী কিন্তু দাঁড়িয়ে ছিলেন মূল মঞ্চের কিছুটা দূরে। কয়েক সারি পিছনে। সেখানে বসে ছিলেন মন্ত্রিসভার বাকি সদস্যরা। তাঁদের সঙ্গে গল্পে মেতে ওঠেন দীনেশ। হঠাৎই দেখা যায় মঞ্চ থেকে রেলমন্ত্রীর নামের ফলক সমেত টেবিলের উপর থাকা বই, নোট সরিয়ে নিচ্ছেন এক নিরাপত্তা কর্মী। সেগুলি রেখে দেওয়া হয় পিছনের সারিতে। সেখানেই বসে গোটা অনুষ্ঠানটি দেখেন দীনেশ।
কিন্তু কেন? নীচে সামনের সারিতে মমতা বসে রয়েছেন বলেই কি তিনি মঞ্চে উঠলেন না? হেসে এড়িয়ে যান রেলমন্ত্রী। বলেন, “আপনারা আজকাল এ সব লক্ষ্য করছেন!” বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা হোক, চাননি তিনি।
কিন্তু দলীয় সূত্র বলছে, দীনেশ ত্রিবেদীর ভূমিকায় ক্ষুব্ধ তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব।
কেন? অভিযোগ,
প্রথমত,
রাজ্যের তৃণমূল সাংসদদের নিজেদের লোকসভা কেন্দ্রে যে রেল-প্রকল্পগুলি রয়েছে সেগুলির কাজের অগ্রগতি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না দীনেশ। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাজ্যের প্রকল্পগুলি। দীনেশ রেলমন্ত্রী হওয়ার পরে নিজেদের এলাকার প্রকল্পের কাজ যাতে দ্রুত শেষ হয়, তার জন্য কিছু তৃণমূল সাংসদ তাঁর কাছে দরবার করেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, অধিকাংশ সাংসদের সঙ্গে দীনেশ দেখাই করেননি। যে অল্প কয়েক জনের সঙ্গে দেখা করেন, তাঁরা শুধু মন্ত্রীর আশ্বাসই পেয়েছেন। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। দীনেশের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, তিনি তৃণমূল সাংসদদের থেকে বেশি ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা-সাংসদের। তিনি কী করবেন, তা অনেকটাই নাকি ওই নেতারা ঠিক করে দিচ্ছেন। কংগ্রেসের সঙ্গে দীনেশের এই ঘনিষ্ঠতা তৃণমূল নেতৃত্ব ভাল চোখে দেখছেন না।
দ্বিতীয়ত, রেলমন্ত্রী হিসেবে দীনেশের যত্র-তত্র বিচরণ পছন্দ করছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। গত চার মাসে রেলমন্ত্রী হিসেবে একাধিক রাজ্যে গিয়েছেন দীনেশ। রেলের পরিকাঠামোগত উন্নতির জন্য বৈঠক করেছেন বিভিন্ন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। দলীয় নেতৃত্বকে না জানিয়ে দীনেশের এই সফরে অসন্তুষ্ট দলীয় নেতৃত্ব। দীনেশের যুক্তি, আগামী বাজেটে রাজ্যগুলির কী চাহিদা রয়েছে, তা জানতেই রেল বোর্ডের কর্তাদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন তিনি। ফলে একটি সামগ্রিক বাজেট করা সম্ভব হবে। এই যুক্তি মানতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। দল বলছে, রাজ্যগুলি যে তালিকা দিচ্ছে, তা মেটানো কোনও রেলমন্ত্রীর পক্ষেই সম্ভব নয়। এ ভাবে চললে ভবিষ্যতে সমস্যা বাড়বে বই কমবে না।
তৃতীয়ত, রেলের বেহাল আর্থিক অবস্থা শুধরোতে ভাড়া বাড়ানোর পথে হাঁটতে চান দীনেশ। এই মুহূর্তে রেলের যা আর্থিক অবস্থা, তাতে মন্ত্রকের ভাড়া বাড়ানো ছাড়া উপায়ও নেই। কিন্তু দলনেত্রী নীতিগত ভাবে ভাড়া বাড়ানোর বিপক্ষে। তিনি মনে করেন, ভাড়া বাড়িয়ে যে আয় হবে, সেই টাকায় রেলের বিশেষ আর্থিক সুরাহা হবে না। তার থেকে দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে কোনও ব্যবসায়িক মডেল অনুসরণ করে আয়ের রাস্তা খুঁজে নিক রেল। মমতা এই যুক্তি দিলেও যোজনা কমিশন থেকে অর্থ মন্ত্রক, সকলেই দীনেশকে ভাড়া বাড়ানোর জন্য নিরন্তর চাপ দিয়ে যাচ্ছে। দীনেশের উপর ভাড়া বাড়ানোর চাপ রয়েছে কংগ্রেস থেকেও। এই ত্রিশঙ্কু অবস্থায় সম্প্রতি দীনেশ পণ্য মাশুল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, মূল্যবৃদ্ধির মধ্যেই মাশুল বাড়ানোর সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ মমতা। কংগ্রেস থেকে চাপ আসলেও দলনেত্রী আপাতত দীনেশকে যাত্রিভাড়া বাড়াতে বারণ করেছেন।
শীর্ষ নেতৃত্বের তাঁর প্রতি এই অসন্তোষের কারণে এখন দলের মধ্যেই কার্যত একঘরে রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.