এ বার বাংলাদেশের সঙ্গে তৈরি হওয়া ‘জটিলতা’ কাটাতে উদ্যোগী হলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। তিস্তা জল-চুক্তি এবং তিনবিঘায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর ঘিরে যে ‘জটিলতা’ তৈরি হয়েছিল, তা নিরসনে গতকাল মনমোহন বৈঠক করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। মমতাও এ ব্যাপারে আর ‘জলঘোলা’ করতে চাননি। স্পষ্ট করে দিয়েছেন, পিছনে তাকাতে চান না। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রধানমন্ত্রীকে সর্বতো ভাবে সাহায্য করাই তাঁর লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে আজ নয়াদিল্লির বিজ্ঞানভবনে মমতা জানিয়েছেন, তিস্তা-সহ সমস্ত ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করতে তিনি আগ্রহী। তাঁর কথায়, “বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনে আমরা সর্বদাই উৎসাহী। এ ব্যাপারে আমাদের কোনও সমস্যা নেই।” পাশাপাশি বিদেশমন্ত্রকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ভারতের সর্বোচ্চ সম্মান ও ভালবাসা রয়েছে। তিনি তিনবিঘা পরিদর্শন করতে আসায় ভারত গর্বিত’।
সম্প্রতি হাসিনার ছিটমহল সফরে সময় মমতাকে কেন্দ্র আমন্ত্রণ না জানানোয় বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। আজ বৈঠকে মনমোহন বিষয়টি নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেছেন। মমতাকে জানিয়েছেন, আমন্ত্রণ জানানো উচিত ছিল, কিন্তু ভুলক্রমে হয়ে ওঠেনি। মমতাও বলেছেন, “আমায় কেন্দ্র ডাকেনি। তাই তিনবিঘায় যাইনি। কিন্তু আমরা বরাবরই ঢাকার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছি। কোনও সমস্যা নেই।” তিনবিঘার পাশাপাশি তিস্তা চুক্তি নিয়েও দু’তরফে কথা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়েছেন, দু’দেশের মধ্যে তিস্তা চুক্তি হোক এটাই তিনি চান। তবে সমস্যা হল, তিস্তা নদীতে জলাভাব। এ ব্যাপারে রাজ্যের নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রের নেতৃত্বে যে তিনি একটি বিশেষ কমিটি গড়েছেন, প্রধানমন্ত্রীকে মমতা জানিয়েছেন সে কথাও। এই কমিটি খতিয়ে দেখবে সুখা মরশুমে তিস্তায় কতটা জল থাকে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ীই মমতা কেন্দ্রকে তাঁর মতামত জানাবেন বলে কথা দিয়েছেন।
তিস্তা চুক্তি করতে গিয়ে মমতাকে যথেষ্ট গুরুত্ব না দিয়ে কার্যত ‘হাত পুড়িয়েছিল’ কেন্দ্র। সম্প্রতি আমেরিকা সফর থেকে ফেরার সময় প্রধানমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি এ বিষয়ে আলোচনা করতে চান। কিন্তু তারই মাঝে তিনবিঘায় আমন্ত্রণের প্রশ্নটি নিয়ে কিছুটা ‘জটিলতা’ তৈরি হয়। শুধু মমতাই নন, হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের যাওয়ার কথা থাকলেও, শেষ পর্যন্ত পাঠানো হয় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদকে। এই ঘটনাবলীতে কিছুটা বিস্ময় তৈরি হয় ঢাকার তরফে। মমতার সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি, আজ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব গোটা বিষয়টি স্পষ্ট করতে চেয়ে একটি বিবৃতিও দিয়েছে। কেন চিদম্বরম যাননি, কেনই বা আজাদকে পাঠানো হয়েছেএই বিষয়গুলি তাতে স্পষ্ট করা হয়েছে। বিদেশমন্ত্রকের এই বিবৃতিটিতে বলা হয়েছে, ‘অবশ্যই পি চিদম্বরমের তিনবিঘা যাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে। কিন্তু সেই সময় তাঁর ৯১ বছর বয়স্ক মা পড়ে যান এবং তাঁর কোমরের হাড় ভেঙে যায়। হাসিনার সফরের দিনই চিদম্বরমের মায়ের অপারেশন করতে হয়। এই সঙ্কটের কারণেই চিদম্বরমকে চেন্নাই ছুটে যেতে হয়।’ ওই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী সেই সময় প্রিটোরিয়ায় ছিলেন। চিদম্বরম যেতে পারবেন না শুনে তিনি চান, গুলাম নবি আজাদ তিনবিঘা যান। কারণ, বাংলাদেশের সঙ্গে গুলাম নবির দীর্ঘ যোগসূত্র রয়েছে।
মমতাকে আমন্ত্রণ না করার প্রসঙ্গটি অবশ্য এই বিবৃতিতে কিছুটা এড়িয়েই যেতে চেয়েছে কেন্দ্র। বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে ‘যথাযথ ভাবে’ শেখ হাসিনার সফরের তথ্য জানানো হয়েছিল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকও বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখেছে বলেই জানিয়েছে সাউথ ব্লক। তবে তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, রুটিনমাফিক তথ্যটি রাজ্য সরকারের কাছে পৌঁছে দেওয়া এক জিনিস। আর মমতাকে ওই অনুষ্ঠানে ব্যক্তিগত ভাবে আমন্ত্রণ জানানো ভিন্ন। কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা মুকুল রায়ের কথায়, “মুখ্যমন্ত্রীকে ওই অনুষ্ঠানে ডাকা অবশ্যই উচিত ছিল।” |