স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি মামলায় অবশেষে চার্জ গঠন করল দিল্লির বিশেষ আদালত।
টু-জি মামলায় প্রাক্তন টেলিকম মন্ত্রী এ রাজা, ডিএমকে সাংসদ কানিমোঝি-সহ অভিযুক্ত ১৪ জন ও ৩টি কোম্পানির বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের পেশ করা চার্জশিট বিচারের জন্য গ্রহণ করলেন বিচারক ও পি সাইনি। চার্জ গঠনের পরে বিচারপতির মন্তব্য, এ রাজা মন্ত্রী হওয়ার পরই টু-জি স্পেকট্রাম বণ্টন নিয়ে অনিয়ম শুরু হয়েছে। রাজা এবং কানিমোঝি ছাড়া বাকিদের বিরুদ্ধে ‘অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র এবং বিশ্বাসভঙ্গের’ অভিযোগ আনা হয়েছে। ১১ নভেম্বর থেকে মামলার শুনানি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বিচারক। ভারতীয় দণ্ডবিধির যে যে ধারার উল্লেখ করে চার্জ গঠিত হয়েছে, তাতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে দোষীদের সর্বাধিক যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হতে পারে। শুধু তা-ই নয়, এই মামলায় যাঁদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে অনেকেই একে অপরকে চেনেন বলে মন্তব্য করেছেন বিচারক। সে কারণেই ‘ষড়যন্ত্র’ করা সহজ হয়েছে।
টু-জি কাণ্ডে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হওয়ার দিনই কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী ও প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে বৈঠক করলেন কেন্দ্রের ইউপিএ সরকারের অন্যতম শরিক ডিএমকে-র প্রধান করুণানিধি। বস্তুত, তামিলনাড়ুর বিধানসভা ভোটে ভরাডুবির পর করুণানিধি এ দিনই প্রথম বৈঠক করলেন সনিয়ার সঙ্গে। আজ সকালে দু’জনের মধ্যে প্রায় আধ ঘণ্টা বৈঠক হয়। করুণার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী রজোথি আম্মালও। বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলেই ডিএমকে প্রধান ১০ জনপথ ছেড়ে চলে যান। কংগ্রেস সভানেত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরেই জেলে গিয়ে মেয়ে কানিমোঝির সঙ্গে দেখা করেন করুণানিধি। সূত্রের খবর, সনিয়ার সঙ্গে মেয়ের ব্যাপারেই কথা বলেছেন করুণা। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গেও কথা বলেন ডিএমকে-প্রধান। টু জি নিয়ে আদালতের আজকের সিদ্ধান্তের পরে যে বৈঠক যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। সনিয়া-মনমোহনের সঙ্গে করুণানিধির বৈঠক নিয়ে বিজেপি সরব হলেও একে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ কংগ্রেস। তাদের বক্তব্য, পুরোপুরি আইনি একটা বিষয় নিয়ে অকারণ রাজনীতি করছে বিজেপি।
রাজা-কানিমোঝি ছাড়া আদালত আজ যে সব কর্পোরেট কর্তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছে, তাঁরা হলেন, অনিল অম্বানী গোষ্ঠীর ম্যানেজিং ডিরেক্টর গৌতম দোশী, প্রেসিডেন্ট সুরেন্দ্র পিপারা এবং সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হরি নায়ার। চার্জশিট গঠিত হয়েছে সোয়ান টেলিকমের শাহিদ উসমান বালওয়া, তাঁর এক ভাই আসিফ বালওয়া এবং তাঁদের সহকর্মী রাজীব অগ্রবাল, ইউনিটেক লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সঞ্জয় চন্দ্র ও ডিবি রিয়েলটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিনোদ গোয়েন্কা, কলাইনার টিভির ম্যানেজিং ডিরেক্টর শরদ কুমার এবং বলিউডের চিত্রপরিচালক করিম মোরানি। এ রাজার প্রাক্তন ব্যক্তিগত সচিব আর কে চান্দোলিয়া এবং প্রাক্তন টেলিকম সচিব সিদ্ধার্থ বেহুরার বিরুদ্ধেও চার্জ গঠন করা হয়েছে। শুনানি শুরু করা হবে রিলায়্যান্স টেলিকম লিমিটেড, সোয়ান টেলিকম এবং ইউনিটেক ওয়্যারলেস লিমিটেডের বিরুদ্ধেও।
রিলায়্যান্স টেলিকমের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা সোয়ান টেলিকমকে সামনে রেখে অনৈতিক ভাবে টু-জি লাইসেন্স পেয়েছে। বিচারকের বক্তব্য, রাজা এবং তাঁর সচিব বেহুরা নিয়ম ভেঙে সোয়ান টেলিকম ও ইউনিটেক ওয়্যারলেসকে টু-জি স্পেকট্রাম বণ্টন করেছেন। ফলে ওই সব কোম্পানির বিপুল সুবিধা হয়েছে বলে অভিযোগ। সে কারণেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারা অনুযায়ী ‘অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র এবং বিশ্বাসভঙ্গের’ অভিযোগ আনা হয়েছে।
সিবিআইয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী, টু-জি কাণ্ডে কানিমোঝির সঙ্গে রাজার নিয়মিত যোগাযোগের প্রমাণ মিলেছে। কলাইনার টিভি-র ডিরেক্টর তথা ২০% শেয়ারের মালিক ছিলেন কানিমোঝি। তাঁদের ‘সুযোগসুবিধা পাইয়ে দেওয়ার’ জন্যই তিনি রাজার কাছে নিয়মিত দরবার করতেন বলে অভিযোগ। অভিযোগ, কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক থেকে এই চ্যানেলের রেজিস্ট্রেশন করানোই শুধু নয়, সেটিকে টাটা স্কাই ‘বোকে’র অন্তর্ভুক্ত করার জন্যও রাজা ও কানিমোঝি যৌথ ভাবে তদ্বির করেছিলেন। আজ চার্জ গঠন হওয়ার পর অভিযুক্তেরা এ বার জামিনের আবেদন করতে পারবেন বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, চার্জ গঠন হওয়ার আগে যাতে তাঁদের জামিনের আবেদন শোনা না হয়, তার জন্য সুপ্রিম কোর্ট সব নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দিয়েছিল। |