মাত্র দু’ কিলোমিটার সড়কপথ।
বহরমপুর শহরের বুক চিরে যাওয়া উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে সংযোগকারী ওই সড়কের নাজেহাল দশা থেকে বছর দুয়েকও রেহাই মিলল না পথচারীদের।
বহরমপুর শহরের মোহনা বাস টার্মিনাস থেকে পঞ্চাননতলা রেল গেট পর্যন্ত মরণফাঁদে পরিণত বাবুলবোনা রোড়ের ওই দু’ কিলোমিটার সড়কে সংস্কারের দাবিতে বছর দুয়েক ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অসংখ্য বার পথ অবরোধ-সহ বিভিন্ন আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। এমনকী কয়েক মাস আগে বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে পুরসভার ডাকা নাগরিক কনভেনশানেও ওই বেহাল রাস্তা দ্রুত সংস্কারের জন্য স্থানীয় সাংসদ তথা পুরসভার মুখ্য উপদেষ্টা অধীর চৌধুরীর হস্তক্ষেপের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন অধিকাংশ বক্তাই। তবুও এখনও পর্যন্ত সুরাহা মেলেনি।
অবশেষে নিজেদের সন্তানদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার দিকে তাকিয়ে বাবুলবোনা ও মধুপুর এলাকার মায়েরা মুখে কাপড় বেঁধে বৃহস্পতিবার মিছিল করে পুরসভায় গিয়ে ৪ দিনের মধ্যে সড়ক সংস্কার করার দাবি জানালেন। পুরপ্রধানের অবর্তমানে তাঁরা পুরসভার উপ-পুরপ্রধান সুশীল পালের সঙ্গে দেখা করে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “আগামী ৪ দিনের মধ্যে ওই সড়ক সংস্কার করা না-হলে হাঁড়ি-হেঁশেল বন্ধ রেখে স্বামী-সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে ওই সড়কে বসে পড়ব। অবরোধ করে উত্তরবঙ্গগামী ও কলকাতাগামী সব যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে। বন্ধ করে দেওয়া হবে মুর্শিদাবাদ জেলায় চলাচল করা যানবাহনও।” |
সুশীলবাবু বলেন, “ওই সড়কপথের সংস্কার, হ্যালোজেন লাইট লাগানো ও ওয়ান-ওয়ে করার জন্য স্থায়ী ডিভাইডার দেওয়ার কাজ শুরু করা হয় বর্ষার আগেই। কিন্তু এ বছরের বর্ষায় নজির বিহীন ভাবে টানা বৃষ্টিপাত হয়। তার ফলে মাস চারেক ধরে রাস্তার কাজ করাই যায়নি। অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের ফলে সড়কপথের অবস্থা আরও বেহাল হয়ে পড়েছে। সংস্কারের কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য ওই সড়কের পাশে পিচ ও পাথর ফেলা হয়েছে। এ দিন স্মারকলিপি দিতে আসা বাবুলবোনা-মধুপুর এলাকার মায়েদের দাবি খুবই সঙ্গত।”
মধুপুরের বাসিন্দা শিখা রায়, রত্না মণ্ডল ও শেফালি সরকাররা এক যোগে বলেন, “রাস্তার পাশে পিচ-পাথর ফেলে রাখায় ধুলোর আস্তরণে ঢেকে যাচ্ছে বাড়িঘর। ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাতায়াত করছে ধুলোর মধ্যে ডুব দিয়ে। দিন চারেকের মধ্যে সুরাহা না হলে গোটা সংসার নিয়ে পথেই আমার বসে পড়ব।”
বারাসত লাগোয়া আমডাঙা থেকে ঝাড়খণ্ড লাগোয়া ডালখোলা পর্যন্ত ৪২১ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক বহরমপুর শহরের পঞ্চাননতলায় পৌঁছে থমকে গিয়েছে। সেখানে পূর্বরেলের শিয়ালদহ বিভাগের কৃষ্ণনগর-লালগোলা শাখার রেললাইনের উপর সেতুর করার প্রস্তাব রয়েছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের জন্মলগ্ন থেকে। ফলে পঞ্চাননতলা রেল গেট থেকে মোহনা বাস টামির্নাস পর্যন্ত ২ কিলোমিটার এলাকায় জাতীয় সড়ক নেই। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ওই দুই প্রান্তের মধ্যে সংযোগ সাধনের কাজ করছে বহরমপুর পুরসভার বাবুলবোনা-মধুপুর সড়কপথ। ওই পথে রয়েছে রেলগেট। ২৪ ঘণ্টায় ২৪ বার ওই রেলগেট বন্ধ করতে হয়। তার উপরে ২ কিলোমিটার পথের একদিক জবরদখল করে গড়ে উঠেছে লরির স্ট্যান্ড ও মেরামতির গ্যারেজ। রাস্তার অন্য দিকেরও বেশ কিছুটা অংশ ঢুকে গিয়েছে বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ঘরের ভিতরে। তার উপরে রয়েছে বছর তিনেক ধরে ওই রাস্তার উপর কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের সামনে নাকাবন্দি করে পুরসভার পথকর আদায় করা। গোঁদের উপর বিষফোঁড়ার মতো ওই সমস্যার গভীরতা বাড়িয়ে দিয়েছে পঞ্চাননতলা রেলগেট থেকে বাস টার্মিনাস পর্যন্ত মাত্র ২ কিলোমিটার দীর্ঘ বাবুলবোনা রোডের উপর অন্তত হাফ ডজন বাসস্টপ। |