নিউ টাউনের নাম জ্যোতি বসু নগর করতে বামফ্রন্টের আমলে বিধানসভায় বিল আনা হয়েছিল কিনা, তা নিয়ে সূর্যকান্ত মিশ্রের সঙ্গে গৌতম দেবের ‘তথ্যগত বিরোধ’ দেখা দিল।
বুধবার সূর্যবাবু একটি বিলের প্রতিলিপি নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে বলেছিলেন, জ্যোতি বসুর নামে নিউ টাউনের নামকরণের জন্য গত বছর ৩ ডিসেম্বর বিধানসভায় বিল আনা হয়েছিল। তৎকালীন বিরোধী দলনেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অনুরোধেই সেই বিল সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হয়।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে সূর্যবাবুর বক্তব্যকে সরাসরি ‘খণ্ডন’ করে বৃহস্পতিবার প্রাক্তন আবাসনমন্ত্রী গৌতমবাবু আলিমুদ্দিনে বলেন, “নিউ টাউনের নাম জ্যোতি বসু নগর করার জন্য কোনও বিল বিধানসভায় আনা হয়নি! কারণ তার আগেই নিউ টাউনের নাম সরকারি ভাবে জ্যোতি বসু নগর হয়ে গিয়েছিল। বিল আনা হয়েছিল নিউ টাউনের কর নির্ধারণের জন্য।” ৩ ডিসেম্বরের বিলের প্রতিলিপি নিয়ে গৌতমবাবু বলেন, “এখানে নিউ টাউনের নাম জ্যোতি বসু নগর হিসাবেই উল্লেখ করা হয়েছিল। পার্থবাবুর অনুরোধে জ্যোতি বসু নগরের কর সংক্রান্ত বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল।”
এ দিন আবার প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা এবং অধুনা রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থবাবু বলেছেন, “ক্ষমতায় থাকাকালীন সূর্যবাবুরা অনেক রকম বিলই বিধানসভায় আনতেন। যেমন জ্যোতি বসু নগরে সম্পত্তি কর সংক্রান্ত একটা বিল এনেছিলেন। আমরা তার প্রতিবাদ করেছিলাম। বিলটি স্থায়ী কমিটিতে পাঠাতে বলেছিলাম। সূর্যবাবু আমার নাম করে যা বলছেন, তা ঠিক নয়।’’
পার্থবাবুর বক্তব্যের চেয়েও অবশ্য সূর্য-গৌতম ‘ভিন্নমত’ অনেক বেশি ‘তাৎপর্যের’। বিশেষত, সিপিএমের মতো একটি ‘শৃঙ্খলাপরায়ণ’ দলে!
গৌতমবাবুর দাবি, কোনও শহরের নাম পরিবর্তনের জন্য বিধানসভায় বিল আনার কোনও দরকার নেই। তাঁর কথায়, “গত বছর রাজ্য মন্ত্রিসভায় নিউটাউনের নাম জ্যোতি বসু নগর করার সিদ্ধান্ত অনুমোদনের পরে তা রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হয়। রাজ্যপালের অনুমোদনের পর ২০১০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তা নিয়ে গেজেট নোটিফিকেশন হয়। এর পরে আবার বিল আনার কথা উঠছে কেন? বিষয়টি নিয়ে অহেতুক বিতর্ক হচ্ছে।”
সূর্যবাবু কি তা হলে বিলটি না পড়েই ওই কথা বলেছিলেন? গৌতমবাবু বলেন, “হয়তো উনি সে ভাবে বিলটি দেখেননি। উনি তো আর ওই (আবাসন) দফতরের মন্ত্রী ছিলেন না! যেটা বাস্তব, আমি সেটাই বলছি।” বস্তুত, এ ঘটনা দেখিয়ে দিল সিপিএমের শীর্ষস্তরের নেতাদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগের যথেষ্ট অভাব দেখা দিয়েছে। গৌতমবাবুর বক্তব্য শুনে এ দিন রাতে সূর্যবাবু বলেন, “গৌতম কী বলেছেন জানি না। আমি ওঁর সঙ্গে কথা বলব। তবে গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রশাসনিক নির্দেশ। আর বিল হচ্ছে আইন। বিলে জ্যোতি বসু নগর উল্লেখ ছিল ঠিকই। কিন্তু আইনের জন্য বিলের প্রয়োজন।” |