বিশ্ব অর্থনীতিতে ফের মন্দার সিঁদুরে মেঘ দেখে শিল্প ঋণ দেওয়ার বিষয়ে আরও কড়া হতে চায় ব্যাঙ্কগুলি। এই সম্ভাবনায় প্রত্যাশিত ভাবেই আশঙ্কিত শিল্পমহল। তাদের অভিযোগ, মূল্যবৃদ্ধি যুঝতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের লাগাতার সুদ বৃদ্ধির জেরে শিল্প-ঋণের সুদ ইতিমধ্যেই চড়া এবং ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। এর উপর ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রেও ব্যাঙ্কগুলি আরও কড়া হলে, তা শিল্প বৃদ্ধির পায়ে বেড়ি হয়ে দাঁড়াবে। তাতে ব্যাহত হবে আর্থিক বৃদ্ধির গতিও।
বৃহস্পতিবার সিআইআই আয়োজিত ব্যাঙ্কিং সংক্রান্ত আলোচনাসভায় বিভিন্ন ব্যাঙ্কের শীর্ষ কর্তারা স্পষ্ট জানান, বিশ্ব অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থার কথা মাথায় রেখে আগামী দিনে শিল্প ঋণ দেওয়ার বিষয়ে আরও কড়া হতে চান তাঁরা। কারণ, তাঁদের ধারণা, আগামী ছ’মাসে ইউরোপ ও মার্কিন মুলুকের আর্থিক সঙ্কটের আঁচ পড়বে ভারতীয় অর্থনীতির উপরেও। তাই আগে থেকেই সে বিষয়ে সতর্ক হতে চান তাঁরা। জোর দিতে চান কোনও ভাবেই অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণ বাড়তে না দেওয়ার উপর। আর সেই কারণেই শিল্প-ঋণ নিয়ে কড়াকড়ির এই সিদ্ধান্ত।
এ প্রসঙ্গে ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের সিএমডি ভাস্কর সেন বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে শিল্প সংস্থাকে ঋণ দেওয়ায় অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। খুচরো ঋণ দেওয়ায় ঝুঁকি কম। তাই তা বাড়ানোর উপর জোর দেব। বিশেষ করে গৃহঋণে এই মুহূর্তে নতুন কোনও সতর্কতা অবলম্বনের দরকার নেই বলেই ধারণা।” ঋণ দেওয়ায় ঝুঁকি কমানোয় জোর দেওয়ার পক্ষপাতী স্টেট ব্যাঙ্কের এমডি দিবাকর গুপ্ত-ও।
কিন্তু প্রত্যাশিত কারণেই এ ভাবে সংস্থাগুলির ঋণ পাওয়ার পথ আরও কঠিন করার প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করছে শিল্পমহল। তাদের মতে, ইতিমধ্যেই শিল্প-ঋণে সুদ যথেষ্ট চড়া। তার উপর চলতি মাসেই ফের ২৫ বেসিস পয়েন্ট রেপো রেট বাড়াতে পারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এই দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া পরিস্থিতিতে এখন যদি ঋণ পাওয়ার শর্তও আরও কঠিন হয়ে যায়, তবে তা হবে গোদের উপর বিষফোড়ার সামিল। এমনকী দেশের অর্থনীতির ভিত যথেষ্ট মজবুত হওয়া সত্ত্বেও এখনই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা কেন জরুরি, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে তারা। এ বিষয়ে অ্যাসোচ্যামের সেক্রেটারি জেনারেল ডি এস রাওয়াত বলেন, ইউরোপ, আমেরিকার অর্থনীতি বেহাল হলেও, ভারতে বৃদ্ধি অন্তত ৭.৫% হবে বলেই ইঙ্গিত। রফতানি মার খেলেও ভারতীয় শিল্পের সামনে পড়ে রয়েছে দেশের বিরাট বাজার। তাই ঋণ দিতে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। বেঙ্গল চেম্বারের সেক্রেটারি জেনারেল প্রিয়দর্শন রায়ের মতে, প্রকৃত ঋণগ্রহীতাকে চিহ্নিত করতে ব্যাঙ্ক সতর্কতা নিলে আপত্তি নেই। কিন্তু তাতে যদি ঋণ পাওয়াই দুষ্কর হয়, তা হলে ধাক্কা খাবে শিল্প। |