লালন ফকিরের ১২১তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে কুষ্ঠিয়ায় চার দিনের লালন মেলার আয়োজন করেছিল লালন অ্যাকাডেমি। এই উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন দুই বাংলার অসংখ্য লালনপ্রেমী।
গত সোমবার লালন মেলার উদ্বোধন করেন বাউল আব্দুল করিম শাহ। অশীতিপর এই সাধক ফকির মেলার উদ্বোধন করায় এই বছরের উৎসব ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে বলে মনে করছে বাউল সম্প্রদায়। বাউলদের বক্তব্য, এই উৎসব তাঁদের। অথচ উৎসবে তাঁরাই ছিলেন প্রায় উপেক্ষিত। আবেগে ভেসে গিয়েছেন করিম শাহও। ‘সাঁইজি’র সেবায় ফের আসতে পেরে তিনি খুবই আনন্দিত। জানালেন, বয়সের ভারে শরীর নুয়ে গিয়েছে। আগের মতো আর চলাফেরা করতে পারেন না। তবে যত দিন বেঁচে আছেন, তত দিন সাঁইজি-র গান গেয়েই মানবধর্ম প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালিয়ে যাবেন তিনি।
মেলা শুরুর আগে কালী নদীর তীরে লালনের একটি দেওয়ালচিত্র (মুর্যাল) উন্মোচন করা হয়। চার দিন ধরে ছেঁউড়িয়া আখড়াবাড়ি ভরে উঠেছিল সাধুসন্ত ও সাধারণ মানুষের ভিড়ে। |
মেলার প্রথম দিনে ছিল ‘বাল্য সেবা’। এই পর্বে পায়েস-মুড়ি খেয়ে গান বাজনা আর তত্ত্ব আলোচনায় মাতেন বাউলরা। দুপুরে হয় ‘পূর্ণ সেবা’। খাবারের তালিকায় ছিল সাদা ভাত, ইলিশ মাছ, কলাইয়ের ডাল, সব্জি ও দই। বিকেল থেকে শুরু হয় অবিরাম ধারায় মরমী গান।
কলকাতা থেকে লালন মেলা দেখতে এসেছিলেন লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের প্রায় ৩০ জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান গৌরী দে দাশ বলেছেন, “স্বচক্ষে লালন ফকিরের মাজার দেখতে পেরে খুবই আনন্দিত। এখানে এসে সবচেয়ে মুগ্ধ হয়েছি বিভিন্ন ধর্মের মানুষের প্রীতি ও সম্প্রীতি দেখে। হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ নেই। সবাই একই মনে স্মরণ করছেন লালনকে। এই কারণেই আজ সারা বিশ্বে লালনের ভাবধারা ছড়িয়ে পড়ছে।” মেলার প্রথম দিন লালনমঞ্চে গান গেয়েছিলেন ফরিদা পারভিন।
তবে শুধু গান বাজনা নয়, লালনমেলার সময়েই অন্য বিষয় নিয়েও উদ্যোগী হয়েছে কুষ্ঠিয়া জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বাউল সম্প্রদায় যাতে হারিয়ে না যায় সে জন্য তাঁদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। বাউলদের পুনর্বাসন সহ নানা সরকারি সুযোগ সুবিধে দেওয়া হবে। |