|
|
|
|
মহল্লায় রঞ্জি খেলার ভঙ্গিতে জেতালেন কোহলিরা |
সব্যসাচী সরকার • নয়াদিল্লি
|
এক এক্কে এক। দুই এক্কে দুই। শেষ পর্যন্ত কি তা হলে পাঁচ এক্কে পাঁচ নাকি?
ম্যাচ শেষ হয়েছে আধ ঘণ্টা হল। কয়েক হাত দূরে ব্রিটিশ ক্রিকেটলিখিয়ের ল্যাপটপে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি, কপি শুরু করছেন প্রশ্নবোধক চিহ্ন দিয়ে ‘আর উই হেডিং ফর আ ব্রাউনওয়াশ?’ দুর্ভাবনা স্বাভাবিক। তিন দিনের ব্যবধানে জোড়া হার এবং বলার মতো কোনও প্রতিরোধ ছাড়াই। উপ্পলে তিনশো তাড়া করে কোনও মতে পৌনে দুশো। আর রাজধানীতে আগে ব্যাট করে মেরেকেটে ২৩৬। এত অল্প পুঁজি নিয়ে ঘরের মাঠে ভারতকে পেড়ে ফেলা গড়িয়াহাট মোড়- কে হকারশূন্য করার চেয়েও কঠিন। হেসেখেলে রানটা তুলে দিতে লাগল ৩৬.৪ ওভার। দুই ওপেনার চটজলদি আউট। ২৮-২ থেকে গম্ভীর-কোহলি ম্যাচটা ধরলেন আর বার করে নিলেন আরামসে। কোনও টেনশন ছাড়াই। আর একটা জিতলেই সিরিজ টিম ইন্ডিয়ার ভল্টবন্দি। ম্যাচ নম্বর তিন মোহালিতে, যেখানে ধোনিরা রওনা দিচ্ছেন হ্যাটট্রিকের লক্ষ্যে। আর অতিথিরা? ০-২ পিছিয়ে থাকার বোঝা আর সিরিজ বিসর্জন দেওয়ার আশঙ্কাকে সঙ্গী করে। |
 |
ধোনির সামনে এ বার মুখ থুবড়ে পড়ার পালা ইংল্যান্ডের। সোমবার ফিরোজ শা কোটলায়। |
জেতার রানটা উঠল বিলকুল রঞ্জি খেলার ভঙ্গিতে। ইচ্ছেমতো, খেয়ালখুশি মতো। গম্ভীর-কোহলি, কোটলা দু’জনেরই ঘরের মহল্লা। মাঠ পুরো ভরেনি। গ্যালারির হাজার পঁচিশ প্রাক-দিওয়ালির উপহার হিসেবে বাড়ি নিয়ে গেলেন ঘরের ছেলে বিরাটের দাপুটে সেঞ্চুরি, যা হাস্যকর রকম একপেশে করে দিল ম্যাচকে। মাঠ ফাঁকা হতে শুরু করল ভারত দেড়শো পেরোতেই। আর থেকে কী হবে? ফল তো জানাই, তার চেয়ে ফেরার পথে দিওয়ালির কেনাকাটা সেরে ফেলাই ভাল! গম্ভীর নট আউট থাকলেন তিন অঙ্ক থেকে ১৬ দূরে আর বিরাট ওয়ান ডে কেরিয়ারের সাত নম্বর সেঞ্চুরি-সহ ১১২ নট আউট। একশো পেরিয়েছেন বলে নয়, স্রেফ চোখের আরামের নিরিখে এগিয়ে থাকবে ম্যাচের সেরা কোহলির ইনিংস। শট বাছার চাকচিক্য বলুন বা টাইমিংয়ের আমেজ। এক কথায়, শীতের নতুন সব্জির মতো। টাটকা, সতেজ এবং স্বাস্থ্যকর। যা খোদ ইয়ান বোথামকে দিয়ে বলিয়ে নিল, “বেড়ে খেলল কিন্তু ছেলেটা ব্যাটটা এ বেশ ভালই করে।”
ও দিকে জরুরি টসটা জিতেও ভরাডুবি ইংরেজদের। কুকের জায়গায় অন্য যে কেউ থাকলেও আগে ব্যাটিং নিতেন। কোটলার চিরাচরিত বাইশ গজের থেকে একটু আলাদা। বল পড়ে স্বাভাবিক গতিতে ব্যাটে আসছিল। স্ট্রোক প্লে ব্যাহত হওয়ার প্রশ্ন নেই। সন্ধের দিকে ইষৎ স্লো হবেই। অশ্বিন-জাডেজাকে তখন সামলানোর চেয়ে আগে খেলে নেওয়া ভাল, পৌনে তিনশো মতো তুলতে পারলে ধোনিরা চাপে পড়বেন---তাত্ত্বিক দিক থেকে দেখলে ভাবনায় তেমন গলদ ছিল না ইংল্যান্ডের। |
 |
কোহলিকে অভিনন্দন গম্ভীরের। |
ভাবা এক আর করা আর এক। স্কোরারকে একটুও কষ্ট না দিয়ে বোর্ডে কোনও রান ওঠার আগেই দুই ওপেনার প্যাভিলিয়নে, কুককে তুললেন প্রবীণ। অফের হাতখানেক বাইরের একটা শর্ট বলে স্কোয়ার কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে জমা ব্রিটিশ ক্যাপ্টেন। আর বিনয় কুমারের আউটসুইংয়ে কচি খোকার মতো ব্যাট বাড়িয়ে ড্রেসিংরুমের পথে কেইসওয়েটার। অশ্বিন এলেন যথাসময়ে, জমে যাওয়া বোপারাকে লেগ বিফোর করলেন ক্যারম বলে। কিন্তু স্পিনাররা নয়, আজ ইংল্যান্ড-হনন পালায় সুপারহিট কিনা সিমাররা। দশটা উইকেটের সাতটা জোরে বোলারদের ঝাঁপিতে। জাহির-ইশান্তরা নেই, এই টিমের বোলিং বিভাগের ‘বড়দা’ হলেন প্রবীণ কুমার। ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে যাতে বেশি রান খরচ না হয়ে যায়, সেটা নিখুঁত ভাবে দেখলেন।
তবে না প্রবীণ, না অশ্বিন। আজকের জোড়া হিরো ‘বিনয়-উমেশ।’ ভারতীয় পেসার উপমহাদেশের পিচে বল করছে আর স্পিডোমিটারে কাঁটা লাগাতার পাক খাচ্ছে ১৩৮-১৪২ কিলোমিটারের গণ্ডিতে, এই দৃশ্য যে কত দিন পরে দেখা গেল! সৌজন্য বিদর্ভের ২৩ বছরের উমেশ যাদব। এই ছেলেটি মিডিয়াম পেসার নয়, স্রেফ ‘পেসার’। শুধু গতিতেই ‘বিট’ করার ক্ষমতা রাখেন সেরাদের। নিটোল ছন্দের অ্যাকশন, হাতে একটা মুচমুচে আউটসুইং আছে। যার একখানায় আজ ঠকতে হল খোদ পিটারসেনকে। যিনি আর ওভার দশেক টিকে গেলে ম্যাচের গল্প হয়তো অন্য ভাবে লিখতে হত। এই উমেশ যাদব ছেলেটিকে খেলিয়ে যাওয়া দরকার। যত খেলবেন, ধার বাড়বে, ভার বাড়বে। পরিণতি আসবে। |
 |
যে পরিণতি আগাগোড়া দেখিয়ে গেলেন বিনয় কুমার। ৯-১-৩০-৪ গড়ে দিনের সেরা। যাকে সামনে রেখে ড্রেসিংরুমে ফিরল টিম। গতিতে উমেশের থেকে কিঞ্চিৎ পিছিয়ে, কিন্তু লাইন-লেংথের নিয়ন্ত্রণে ততটাই এগিয়ে। এগিয়ে মস্তিষ্কের প্রয়োগেও। বাউন্স থাকা পিচে বল দিব্যি সিম-সুইংও করছে, এমন অবস্থায় ‘শর্ট অব লেংথ’ ফেলা বেকার, এটা দেখা গেল দ্রুত বুঝে ফেলেছেন। অফ আর তার এক চিলতে বাইরে থ্রি কোয়ার্টার লেংথে মাপা সুইং করিয়ে গেলেন পুরো স্পেলটায়। ‘স্কোয়ার অব দ্য উইকেট’ মারার জন্য জায়গাই পেল না ব্যাটসম্যান। উল্টে ‘পথ হারাব বলেই এ বার পথে নেমেছি’ ভঙ্গিতে খোঁচা দিয়ে গেল ইংরেজ ব্যাটিং। এই ছেলেটির ভারতীয় ক্রিকেটকে আরও অনেক কিছু দেওয়ার আছে। জাহির আর খেলবেন বড়জোর দু’বছর। ইশান্ত-শ্রীসন্থ-আরপি-মুনাফরা বহু সুযোগ পেয়েও জাহিরের নির্বিকল্প সঙ্গী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যর্থ। উমেশ-বিনয়রা বরং পড়ে পাওয়া সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন। রির্জাভে অপেক্ষায় বরুণ অ্যারন-শ্রীনাথ অরবিন্দ। ভারতীয় পেস বোলিংয়ে তারুণ্যের সফল আবাহন চলতি সিরিজের সেরা প্রাপ্তি। অন্তত এখনও পর্যন্ত।
ব্যাটিংয়ে ইংল্যান্ডের প্রাপ্তির খাতা অবশ্য শূন্য। আদর্শ আবহ ছিল পৌনে তিনশো তোলার। স্পিনের জুজু নেই পিচে, রকেট গতির আউটফিল্ড। কিন্তু টপ অর্ডারের একজনকে তো গোটা তিরিশ ওভার খেলতে হবে, যার কাঁধে ভর দিয়ে ইনিংসটা জমাট বাঁধবে। ট্রট বা বোপারা বেশিক্ষণ টানতে পারছেন না, অথচ ইয়ান বেলকে কেন খেলানো হচ্ছে না, এই ধাঁধার উত্তর সফরকারী ব্রিটিশ মিডিয়ার কাছেও নেই।
আছে বরং উদ্বেগ আর আশঙ্কার মিশেল। কুকের টিন স্পিনে পারেনি প্রথমটায়, পেস আর সুইংয়ে ধরাশায়ী পরেরটায়। রইল বাকি তিন। পথের শেষ কোথায়, কী আছে শেষে? সাহেবদের ব্যাপারস্যাপার ভাল ঠেকছে না। ওই যে শুরুতে লিখেছি, মার্কশিটে শেষ অবধি পাঁচ এক্কে পাঁচ? সত্যিই, ‘হেডিং ফর আ ব্রাউনওয়াশ’?
|
ছবি: উৎপল সরকার |
টি-টোয়েন্টিতে নেই গম্ভীর
নিজস্ব সংবাদদাতা• নয়াদিল্লি |
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে চলতি সিরিজের বাকি তিন ম্যাচের দল অপরিবর্তিত রাখলেন নির্বাচকরা। বিয়ে করছেন বলে টি টোয়েন্টিতে নেই গম্ভীর। তাঁর জায়গায় ঢুকেছেন ইউসুফ পাঠান। পার্থিব পটেলের জায়গায় এসেছেন রবিন উত্থাপ্পা।
|
স্কোর
|
ইংল্যান্ড |
কুক ক জাডেজা বো প্রবীণ ০
কেইসওয়েটার ক কোহলি বো বিনয় ০
ট্রট ক ধোনি বো বিনয় ৩৪
পিটারসেন ক ধোনি বো যাদব ৪৬
বোপারা এলবি অশ্বিন ৩৬
বেয়ারস্টো ক কোহলি বো জাডেজা ৩৫
পটেল এলবি যাদব ৪২
ব্রেসনান ক রায়না বো বিনয় ১২
সোয়ান বো বিনয় ৭, ফিন ন:আ: ৬
ডার্নবাখ রান আউট ৩
অতিরিক্ত ১৬
মোট ৪৮.২ ওভারে ২৩৭।
পতন: ০, ০, ৪৮, ১২১, ১২১, ২০৭, ২১১, ২২৭, ২২৯।
বোলিং: প্রবীণ ৯-১-৪০-১, বিনয় ৯-১-৩০-৪, কোহলি ৫-০-১৮-০,
যাদব ৮.২-০-৫০-২, অশ্বিন ১০-০-৫৬-১, জাডেজা ৭-০-৩৮-১।
|
ভারত |
পার্থিব ক কুক বো ব্রেসনান ১২
রাহানে ক ডার্নবাখ বো ব্রেসনান ১৪
গম্ভীর ন:আ: ৮৪
কোহলি ন:আ: ১১২
অতিরিক্ত ১৬
মোট ৩৬.৪ ওভারে ২৩৮-২।
পতন: ১৪, ২৯।
বোলিং: ব্রেসনান ৭-১-৪১-২, ফিন ৯-০-৫০-০, ডার্নবাখ ৫.৪-০-৪১-০,
সোয়ান ৮-০-৫২-০, বোপারা ৩-০-২১-০, পটেল ২-০-১৭-০, পিটারসেন ২-০-১৩-০। |
|
|
|
|
 |
|
|