|
|
|
|
শাহরুখের ছম্মক ছল্লো, মাতোয়ারা কলকাতা |
ইন্দ্রনীল রায় |
এ শহর তাঁর একান্ত আপন। ‘সেকেন্ড হোম’।
নানা কাজে সারা দেশে ঘুরে বেড়াতে হয় তাঁকে। কিন্তু কলকাতার মাটিতে পা রাখলেই যে অনুভূতিটা হয়, সে রকম আর কোথাও হয় না।
কলকাতা নাইট রাইডার্সের কাজে মাঝেমধ্যেই এ শহরে আসতে হয় তাঁকে। তাই এখানে একটা বাড়ি কিনতে চান তিনি।
তাঁকে দেখতে সল্টলেকের ‘সিটি সেন্টারে’ উত্তাল জনজোয়ার। কিন্তু তিনি নির্বিকার। “এটাই তো স্বাভাবিক। আফটার অল, আমি শাহরুখ খান। আই অ্যাম দ্য বেস্ট।”
এখন তাঁর ৪৬। তেরো বছর আগের সেই ‘ছাঁইয়া ছাঁইয়া’ থেকে হালফিলের ‘ছম্মক ছল্লো’, সব ক’টি ছন্দেই এখনও তাঁর অনায়াস পদক্ষেপ। টিন এজার ভক্ত-কুলের সঙ্গে নেচে চলেন, অবলীলায়।
তিনি শাহরুখ খান। ‘রা ওয়ান’-এর ‘জি ওয়ান’।
আগামী সপ্তাহেই মুক্তি পাচ্ছে সেই বহু প্রতীক্ষিত কল্পবিজ্ঞানের ছবি। সে ছবিতে শাহরুখ এক ‘সুপারহিরো’। তারই প্রচারে ছবির ‘রা ওয়ান’ অর্জুন রামপালকে সঙ্গে নিয়ে সোমবার শহরে এসেছিলেন শাহরুখ।
সিটি সেন্টারে যাওয়ার আগে বালিগঞ্জ পার্ক রোডের এক বাংলো বাড়িতে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণের একটা সুন্দর আড্ডা জমেছিল শাহরুখের। তিন বছর বাদে দেখা হল দুই নায়কের। “এর আগে শাহরুখের সঙ্গে দেখা হয় সেই ২০০৮-এ। প্রথম আই পি এল-এর সময়।” দুপুরে শাহরুখের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর জানালেন প্রসেনজিৎ। |
মুখোমুখি
 |
দুই নায়ক। শাহরুখ খানের সঙ্গে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। সোমবার কলকাতায়। দেশকল্যাণ চৌধুরীর তোলা ছবি। |
কী নিয়ে কথা হল? “যখনই দেখা হয়, আমরা সাধারণত সিনেমা নিয়েই কথা বলি। আজও তাই। ওকে বললাম, মুম্বইয়ে ‘অটোগ্রাফ’ করার মতো যদি কেউ থেকে থাকে তবে সেটা তুমি। কারণ, নায়ক হিসেবে তোমারও কেরিয়ার খুব রঙিন আর ঘটনাবহুল।”
আর শাহরুখ কী বললেন ‘বাইশে শ্রাবণ’এর ‘প্রবীর রায়চৌধুরী’কে? “বলল, ওর মনে হয় যে গল্পের গুণ বিচার করলে বাংলা ছবি হিন্দি ছবির তুলনায় অনেক এগিয়ে। আমার সাম্প্রতিক বাংলা ছবিগুলো দেখতে চায়, বলল শাহরুখ।” প্রসেনজিৎ তাঁকে ‘মনের মানুষ’ ও ‘অটোগ্রাফ’এর ডিভিডি আর ‘বাইশে শ্রাবণ’-এর অডিও সিডি দিয়েছেন। আর দিয়েছেন নিমাই ঘোষের ‘ভিশন অফ সিনেমা’ বইটি। এই উপহারটি তাঁর খুবই মনে ধরেছে, জানিয়েছেন কিং খান।
প্রসেনজিতের কথায়, “শাহরুখ মানুষ হিসেবে এতটাই খোলামনের যে বলেই ফেলল ওর মা আমার বাবার বিরাট ভক্ত ছিলেন। আমিও বললাম, আমার ছেলে তৃষাণজিৎ শাহরুখের দারুণ ফ্যান। শাহরুখকে বলেছি, আমার ছেলে ‘বাইশে শ্রাবণ’-এর টিকিটের লম্বা লাইন দেখে বলেছে, ‘বাবা, তোমার ছবিও আজকাল শাহরুখের মতো চলছে!” |
ওয়ান টু ওয়ান...
 |
শো-অন: শহরে এলেন শাহরুখ খান। নিজেদের অভিনীত ছবি ‘রা ওয়ান’-এর প্রচারে
অর্জুন রামপালের সঙ্গে মাতলেন খুনসুটিতে। সোমবার, সল্টলেকের সিটি সেন্টারে। ছবি: সুমন বল্লভ। |
সিনেমা নিয়ে এই সব আলোচনার ফাঁকে শাহরুখ প্রসেনজিৎকে জানান, কলকাতায় তিনি একটা ফ্ল্যাট কিনতে চান। কে কে আরের জন্য বারবার তাঁকে কলকাতায় আসতে হয়। তাই নিজের একটা ফ্ল্যাট থাকলে খুব সুবিধে হয়। কিন্তু প্রসেনজিৎ শাহরুখকে বলেছেন, তাঁর মতো সুপারস্টারের পক্ষে ফ্ল্যাট না কিনে বাড়ি কিনলেই ভাল হয়। না হলে ব্যক্তিগত জীবন বিঘ্নিত হতে পারে। কলকাতার কোন এলাকায় বাড়ি কেনা যায়, সেই নিয়েও দু’জনের মধ্যে আলোচনা হয়।
আড্ডা জমে উঠেছিল। কিন্তু ভক্তরা অপেক্ষায়। শাহরুখ রওনা দেন সিটি সেন্টারের দিকে।
সিটি সেন্টারে তাঁকে দেখতে উপচে পড়া ভিড়। স্কুল পড়ুয়া থেকে সেক্টর ফাইভের চাকুরে, মাঝবয়সী গৃহবধূ থেকে রিকশাচালক, কে নেই সে ভিড়ে। ঠিক যেমন ভিড় হত ‘বিল্লু’র সাহির খান বা ‘ওম শান্তি ওম’-এর
ওম কপূরকে দেখতে। সেই সব ছবিতেও শাহরুখ
খান সুপারস্টার!
শাহরুখের কাছে পৌঁছনোর আশায় ভক্তদের ঠেলাঠেলিতে উপড়ে গেল রাস্তার ধারের সুসসজ্জিত গাছপালা। শাহরুখকে এক বার দেখতে, তাঁকে চুমু খেতে পাগল তারা। যেমন, টালিগঞ্জ থেকে আসা ২১ বছরের ‘মাস কমিউনিকেশনের’ ছাত্রী রেশমী ঘোষ। বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে সকাল এগারোটা থেকে ধর্না দিয়ে বসে ছিলেন সিটি সেন্টারের বাইরে। প্রিয় ‘বাদশাকে’ দেখতে। ‘বাদশা’ও তাদের ফেরাননি। ভক্তদের ওই উন্মাদনার মধ্যেই শাহরুখ নাচলেন, কথা বললেন অনর্গল, গান গাইলেন অল্পবিস্তর। মোটাসোটা ভক্তকে পাঁজাকোলা করে তুলেও ফেললেন (অবশ্য অর্জুনের সাহায্য নিয়েই)। আর বিলি করলেন ‘রা ওয়ান’-এর গানের সিডি।
যাওয়ার সময় দীপাবলি ও পুজোর ‘মোবারক-বার্তা’ জানিয়ে দিয়ে গেলেন। তাঁর একান্ত নিজস্ব স্টাইলে।
যে স্টাইলের নাম শাহরুখ ‘জি ওয়ান’ খান! |
|
|
 |
|
|