রামপুরহাটে কর্মহীন কয়েক হাজার শ্রমিক
২২০টি ক্রাশার বন্ধ করলেন আদিবাসীরা
বীরভূমের পাথর শিল্পাঞ্চলে ফের অশান্তির বাতাবরণ।
পুলিশ-প্রশাসন এবং মালিকপক্ষকে না জানিয়েই সোমবার কার্যত ‘জোর করে’ রামপুরহাটের ২২০টি পাথর ভাঙার কল বা ক্রাশার বন্ধ করে দিলেন আদিবাসীরা। নেতৃত্বে ছিল জেলার আদিবাসী সংগঠন বীরভূম আদিবাসী গাঁওতা। এর ফলে কর্মহীন হয়ে পড়লেন এই সব ক্রাশারের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যুক্ত হাজার হাজার শ্রমিক, যাঁদের মধ্যে কয়েক হাজার আদিবাসীও আছেন।
দূষণ নিয়ন্ত্রণ, শ্রমিকদের পরিচয়পত্র প্রদান-সহ বিভিন্ন দাবিতে বারোমেশিয়া, দিঘলপাহাড়ি, বড়পাহাড়িএই তিন এলাকার ক্রাশারগুলি এ দিন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছেন আদিবাসীরা। জেলা আদিবাসী গাঁওতার সম্পাদক রবীন সোরেনের বক্তব্য, “বারোমেশিয়া, দিঘলপাহাড়ি ও বড়পাহাড়ি এলাকায় পাথর ব্যবসায়ীদের দূষণ নিয়ন্ত্রণ, শ্রমিকদের পরিচয়পত্র প্রদান, ক্রাশার এলাকায় মহিলা শ্রমিকদের জন্য আলাদা শৌচাগার তৈরি, শ্রমিকদের কাজের নিরাপত্তা-সহ বিভিন্ন দাবি আমরা মাসখানেক ধরে মালিকপক্ষের কাছে জানিয়েছি।
সিউড়িতে সভা করে জেলা প্রশাসনকেও এ ব্যাপারে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন বা মালিকপক্ষের দিক থেকে কোনও সাড়া মেলেনি। এমনকী যৌথ কমিটি গঠনের ব্যাপারেও প্রশাসন উদ্যোগী হয়নি। তাই এলাকায় আদিবাসী শ্রমিকেরা সমবেত হয়ে ক্রাশার বন্ধ করে দিয়েছেন।”
রামপুরহাট পাথর ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সম্পাদক মিলন শেখের পাল্টা দাবি, রবিবার রামপুরহাট পাথর খাদান এলাকায় আদিবাসীদের একটি সভা ছিল। গাঁওতার দাবি মেনে রবিবার ক্রাশার বন্ধও রাখা হয়েছিল। তাঁর অভিযোগ, “এ দিন সকালে ক্রাশারগুলিতে স্বাভাবিক কাজকর্ম চালু হয়। দুপুর ২টোর পরে আচমকাই ঢ্যাঁড়া পেটাতে পেটাতে তির-ধনুক-লাঠি ও আরও কিছু অস্ত্র নিয়ে কয়েকশো আদিবাসী পরের পর ক্রাশারে ঢুকে কাজ বন্ধ করার হুমকি দিতে থাকে। এমনকী ক্রাশারে কর্মরত আদিবাসী শ্রমিকদেরও লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। ভয়ে আমরা সমস্ত ক্রাশার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হই।” মারধরের অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন আদিবাসী নেতারা।
বীরভূমে পাথর শিল্পাঞ্চলে অশান্তি নতুন নয়। গত বছর এপ্রিল মাসে মহম্মদবাজার ব্লকের পাঁচামি এবং রামপুরহাটের শালবাদরা পাথর শিল্পাঞ্চলে এ রকমই আদিবাসী আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল। শালবাদরায় প্রশাসন, মালিক পক্ষ এবং আদিবাসীদের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের পরে ২২ অগস্ট থেকে কাজ শুরু হলেও পাঁচামিতে পরিস্থিতি আজও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। স্বাভাবিক ভাবেই, এ দিনের আদিবাসী আন্দোলন নতুন করে পুলিশ-প্রশাসনের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। জেলার পুলিশ সুপার নিশাত পারভেজ বলেন, “ক্রাশার যে বন্ধ করা হবে, সে ব্যাপারে আমাদের কাছে আগাম কোনও খবর ছিল না। যতদূর জানি, সম্প্রতি শালবাদরার শুলুঙ্গা এলাকায় একটি পাথর খাদানে পাথর ছিটকে এক আদিবাসী শ্রমিকের মৃত্যু ঘিরে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। তার জেরে এ দিনের ঘটনা কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। তবে অশান্তি বা গোলমাল যাতে না হয়, তা দেখতে ওই তিন এলাকায় পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হচ্ছে।” বীরভূমের জেলাশাসক জগদীশকুমার মিনা বলেন, “শুলুঙ্গায় শ্রমিক-মৃত্যুই আদিবাসীদের ক্ষোভের কারণ বলে শুনেছি।
তবে হঠাৎ করে এ ভাবে এতগুলো ক্রাশার বন্ধ করে দেওয়ার ব্যাপারে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।” একই সঙ্গে তাঁর মতে, দূষণ নিয়ন্ত্রণ, শ্রমিকদের পরিচয়পত্র প্রদান-সহ অন্য সব দাবি নিয়ে আলোচনায় বসা যেতে পারত। উদ্ভুত সমস্যার সমাধানে সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসা হবে বলে জেলাশাসক জানিয়েছেন।
জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তার কথায়, “দাবিদাওয়া থাকতেই পারে। তবে তা নিয়ে আলোচনার আগে এ ভাবে এতগুলি ক্রাশার বন্ধ করে দেওয়া ঠিক হয়নি। এর ফলে রামপুরহাটের একটা বিস্তীর্ণ অংশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে।” বস্তুত, অনির্দিষ্ট কালের জন্য ক্রাশার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এলাকার ৩০টি গ্রামের হাজার তিনেক আদিবাসী শ্রমিক-সহ কমপক্ষে ১৫ হাজার শ্রমিক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে কর্মহীন হয়ে পড়লেন বলে প্রশাসন ও ক্রাশার মালিক সংগঠনের সূত্রেই জানা যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে রবীন সোরেনের বক্তব্য, “আমরা ক্রাশার বা পাথর খাদান বন্ধের পক্ষে নই। আমরা শুধু চাই, আইন ও নিয়ম মেনে দূষণ রোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে ক্রাশার-খাদান চালাক মালিকপক্ষ।” তাঁর দাবি, পাঁচামিতে ইতিমধ্যেই ১২টি পরিত্যক্ত খাদানের জলে মাছচাষ করে আদিবাসীদের বিকল্প রুজির ব্যবস্থা করা গিয়েছে। দরকারে রামপুরহাটেও বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।
এ দিকে, এক সঙ্গে ২২০টি ক্রাশার অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বীরভূম তো বটেই, বর্ধমান, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া-সহ দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই পাথর সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। এর ফলে ওই সব জেলায় চালু থাকা রাস্তা সংস্কার বা নির্মাণ-সহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি নির্মাণ প্রকল্প স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
রামপুরহাট পাথর ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সম্পাদক মিলন শেখের আরও অভিযোগ, এ দিন বিকেলে হরিনাথপুরে একটি নির্মীয়মাণ ক্রাশারে ভাঙচুরও চালান গাঁওতা সমর্থিত আদিবাসীরা। গাঁওতা নেতৃত্ব অভিযোগ অস্বীকার করলেও নতুন করে কোথাও ক্রাশার বসানো যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। মিলন শেখের পাল্টা হুঁশিয়ারি, “এক তরফা ভাবে গা জোয়ারি করে ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া মেনে নেওয়া যায় না। আমরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হব। প্রয়োজনে গোটা রামপুরহাটেই ব্যবসা বন্ধ হবে!”
ছবি: সব্যসাচী ইসলাম



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.