ঠিক এক মাস আগে আজকের দিনেই ম্যানহাটনের জুকোট্টি পার্কে সামান্য কিছু লোক মিলে শুরু করেছিলেন আন্দোলন। আর আজ সেই ছোট্ট আন্দোলনটাই ফুলে ফেঁপে বিশাল আকার নিয়েছে।
আশিটা দেশ, সাড়ে ৯০০ শহর। একটাই দাবি। দূর হোক আর্থিক বৈষম্য। আর এই নিয়ে তোলপাড় গোটা বিশ্ব। আন্দোলনের সমর্থনে তৈরি করা হয়েছে একটি ওয়েবসাইট। ওই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই জমা হয়েছে ৩ লক্ষ ডলার। অনেকে আবার ম্যানহাটনের ওই পার্কে গিয়েছিলেন শুধুমাত্র দর্শক হিসেবেই। ফেরার সময় নিজেদের সাধ্যমতো অর্থ-সাহায্য দিয়ে এসেছেন। শ্রমিক ইউনিয়ন পরিচালিত অ্যামালগ্যামাটেড ব্যাঙ্কে ‘ওয়াল স্টিট বিক্ষোভ’-এর নামে তৈরি করা হয়েছে একটি বিশেষ অ্যাকাউন্ট। ম্যানহাটনের এক শিক্ষক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিক্ষোভকারীদের সাহায্যার্থে জমা পড়েছে কম্বল, স্লিপিং ব্যাগ, খাবারের ক্যান থেকে শুরু করে ওষুধপত্র, আরও অনেক কিছু। প্রতি দিনই আন্দোলনের সমর্থনে কিছু না কিছু বার্তা এসে পৌঁচ্ছছে। এক দিনে প্রায় ৩০০টি বাক্স এসে পৌঁছেছে, যাতে রয়েছে গোছা গোছা চিঠি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চিঠির লেখক কোনও না কোনও দুর্ঘটনায় বাড়ি-ঘর, চাকরি সর্বস্ব হারিয়েছেন। |
ক্ষোভের আগুনে ভুয়ো বিল জ্বালিয়ে দিয়ে প্রতিবাদ আমস্টারডামের রাস্তায়। সোমবার এএফপির ছবি। |
আজ সকালেও লন্ডনের সেন্ট পল’স ক্যাথিড্রালের সামনে জড়ো হয়েছেন প্রায় ২০০ জন আন্দোলনকারী। সেখানে তাঁবু খাটিয়ে বসেছেন তাঁরা। আবার, ওয়াশিংটন থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ১৯ জন আন্দোলনকারীকে। তবে বির্তকও দানা বাঁধছে আন্দোলন ঘিরে। ব্রিটেনের বিদেশমন্ত্রী উইলিয়াম হগ বলেন, “এ ভাবে বিক্ষোভ করে কিছু হাসিল করা সম্ভব নয়। বরং সরকারের পক্ষ থেকেই আর্থিক বৈষম্য দূর করতে সব চেষ্টা করা হবে।” হগের দাবি যে পুরোপুরি উড়িয়েও দেওয়া যায় না, তা বিক্ষোভকারীদের মতপার্থক্য থেকেই স্পষ্ট। অনেকে বিক্ষোভের সমর্থনে মন্তব্য করলেও, সরাসরি তাতে যোগ দিচ্ছেন না। কেউ আবার আন্দোলনের ‘দিশা’ নিয়ে চিন্তিত। আবার অনেকের মতে সেটাই সব নয়। সামাজিক চিত্রটা তুলে ধরতেই পথে নামা। তাঁদের কথায়, “অর্থের সমবণ্টনের দাবিতে জড়ো হয়েছি। যাঁদের কাছে অর্থ নেই, তাঁদেরও হাতে অধিকার থাকা উচিত। বদল চাই সমাজের এই দুর্নীতি-জর্জরিত কাঠামোয়।” জেমস অবেরি নামে মহিলার কথায়, “হঠাৎ করে এক দল লোক আন্দোলন করতে জড়ো হয়ে যায়নি। দীর্ঘদিন ধরে একটু একটু করে ক্ষোভ জমেছে মানুষের মনে।”
কূটনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, এই আন্দোলনের লক্ষ্য নেই, নির্দিষ্ট নীতিও নেই। নিউ ইয়র্কে এক বিক্ষোভকারী বলেন, “আমাদের দাবি মানতেই হবে।” কিন্তু আন্দোলনের নীতিটা ঠিক কী? কলেজ পড়ুয়া সেসলি ম্যাকমিলানের আশঙ্কা, লক্ষ্যের অভাবে শেষে আন্দোলনটাই না ‘হাস্যকর’ হয়ে দাঁড়ায়। তবে বিক্ষোভকারীরা যতই বলুক, ইতিমধ্যেই আগুনে ঘি ঢালতে শুরু করেছে বেশ কিছু রাজনৈতিক নেতা। অন্তত তেমনটাই মনে করছেন অনেকে। |