এই পরিবেশে তিনটি স্কুল চলে! |
উলুবেড়িয়া মহকুমা শহরের তিন-তিনটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল প্রসঙ্গে এই চিঠি। তিনটিই একেবারে শহরের হৃদ্কেন্দ্রে অবস্থিত। প্রধান সড়ক কটক রোড-এর ঠিক পাশটিতেই গড়ে-ওঠা এই তিনটি জনপ্রিয় বিদ্যালয়ই কম-বেশি তাদের অবস্থানের জন্য গভীর সংকটের সম্মুখীন। উলুবেড়িয়া হাইস্কুল, যা বাস্তবে শতাব্দী প্রাচীন, তার ঠিক ঢিল-ছোড়া দূরত্বেই শহরের একমাত্র মহিলা বিদ্যানিকেতনটি, বীণাপাণি বালিকা বিদ্যালয়। এখান থেকে মোটামুটি আধ কিলোমিটারের মধ্যে নোনা হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলটি। উলুবেড়িয়া হাইস্কুল রত্নগর্ভা, সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু স্কুল ভবনটিতে শতাব্দীর আবর্তন অভিঘাতের ছাপ স্পষ্ট। তা ফুটে বেরোচ্ছে কড়িবরগা ফাটিয়ে দেওয়ালের বুককে ফালা-ফালা করে। ঝরে পড়ছে রং-প্লাস্টার-পালিশ। তলায় বর্ষার জল আর জোয়ারের জলে ‘মুখর বাদল দিনে’ প্রায় বানভাসি। অথচ রাস্তার সমান্তরাল স্কুল চৌহদ্দির নীচেও বিলক্ষণ বহাল বেশ ক’খানি ক্লাসঘর। সামনেই স্কুল-পুকুর, যেটির জলতলও তলার শ্রেণিকক্ষগুলি থেকে উঁচুতে। প্রাচীন বিদ্যালয়টির পাশাপাশি বীণাপাণি বালিকা বিদ্যালয়টির মূল সমস্যা তার অবস্থান। মূলত উলুবেড়িয়া শহরের প্রধান বাজারটিকে ঘিরে স্থাপিত এই বিদ্যালয়টির চারপাশে শব্দদূষণের মাত্রা বেড়ে চলেছে দিনের পর দিন। |
নোনা হাইস্কুলের সংকীর্ণ প্রবেশপথ। ছবি: রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায় |
চার দিকে আনাজপাতি, শাক-সব্জি, কাঁচা আনাজের বাজার, বেওয়ারিশ শৌচাগার ছাড়াও শিশুশিক্ষার্থীদের চোখের সামনে প্রকাশ্য রাজপথের পাশে মুরগি ছাড়িয়ে মাংস বিক্রির দৃশ্যদূষণ চলছে। উল্টোদিকেই হেমন্ত বসু মার্কেট-এর শপিং কমপ্লেক্স-এর বিপণন বিশৃঙ্খলতা প্রতি মুহূর্তে স্পর্শ করছে ছাত্রীদের কোমল মেধা ও মনস্কতা। সবচেয়ে বড় বিপদ, স্কুলটি মিলিটারি পোল-এর ঠিক অবতরণ তলে হওয়ায় হু-হু করে নেমে আসা গাড়িগুলির মুখে অসম্ভব নিরাপত্তাহীনতা ও উদ্বেগ নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন স্কুলের শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকেরা। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা জানিয়েছেন, প্রশাসনিক পারদর্শিতার অভাবে বড় পোলটির নীচে কোনও কিয়স্ক ধাঁচের রক্ষীশালা অথবা ট্রাফিক প্রহরার বন্দোবস্ত হয়নি বলেই এই বিপন্নতা। শিশু ও অভিভাবকদের পথ-নিরাপত্তার স্বার্থে ঢিল-ছোড়া দূরত্বের মহকুমাশাসক অফিস থেকে অকুস্থলে নজরদার বসানো আশু প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বন্ধ করা দরকার স্কুলের সামনের লকগেট বাজারটির প্রবল দূষণ। কোন প্রযুক্তিতে সদ্য নির্মিত রাস্তায় এক বেলার বৃষ্টিতে এক হাঁটু জল জমে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হোক। ছাত্রী শিক্ষিকা তথা সাধারণ পথচারীরা জেরবার।
এ বার নোনা স্কুলটির প্রসঙ্গে। এত জনপ্রিয় একটি বিদ্যালয়, শনিবারের ‘গরুহাট’-এর দিনে জ্যামে-জটে নাকাল বিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীরা। প্রতি শনিবার নিয়ম করে মহকুমা শহরের প্রধান সরণিকে গ্রাস করে বসে গরুহাট। স্কুলটির উপর এর প্রভাব পড়ছে ব্যাপক। এ ছাড়া যে স্কুলে হায়ার সেকেন্ডারির সিট পড়ে, একাদশ-এর হয় ‘হেড কোয়ার্টার’, নানান প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার কেন্দ্র হয় সেই বিদ্যালয়টির প্রবেশপথ এতই সংকীর্ণ যে এক জন সাইকেল নিয়ে ঢুকতে গেলেই পথ হয়ে যায় অবরুদ্ধ। যেখানে একটি রিকশা পারে না ঢুকতে, সেই প্রবেশদ্বারটি আশু প্রসারিত হোক। হাইস্কুলের প্রায় দেড় হাজারের উপর ছাত্রছাত্রী, বীণাপাণি স্কুলের এবং নোনা স্কুলের প্রায় বারোশোর উপর ছাত্রছাত্রী অভিভাবকদের মুখ চেয়ে সংস্কার করা হোক এই দূষিত পরিবেশ। |
সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়, কোর্টপাড়া, উলুবেড়িয়া, হাওড়া
|
এই বিভাগে চিঠি পাঠান সম্পূর্ণ নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করে।
আমাদের চিঠি,
সম্পাদকীয় বিভাগ,
আনন্দবাজার পত্রিকা প্রাঃ লিঃ,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০০০১ |
|