লৌহ আকরিক চুরি করার অভিযোগে গ্রেফতার হলেন লক্ষ্মণ শেঠ ঘনিষ্ঠ হলদিয়ার সিপিএম কাউন্সিলর শেখ মজফ্ফর।
পুলিশের দাবি, রবিবার দুপুরে তমলুকের ডিমারি থেকে হলদিয়ার এই ব্যবসায়ীকে ধরা হয়। যদিও ধৃতের দাবি, তমলুক শহরে জেলা পুলিশ সুপারের অফিস থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শেখ মজফ্ফর গ্রেফতার হয়েছেন খবর ছড়িয়ে পড়তেই এ দিন বিকেলে হলদিয়ার ব্রজলালচক থেকে সিটি সেন্টার পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় দফায়-দফায় অবরোধ করেন তাঁর সংস্থার কর্মীরা। কমব্যাট ফোর্স গিয়ে অবরোধ তোলে।
পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অশোক প্রসাদ বলেন, “বন্দরগামী ট্রাক থেকে উচ্চ-মানের লৌহ আকরিক চুরি করে নিম্ন মানের লৌহ আকরিক বদলে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ওই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। হলদিয়ায় ওই ব্যবসায়ীর গুদাম থেকে চোরাই লৌহ আকরিক উদ্ধারও হয়েছে। ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে মজফ্ফরের আরও ৫-৬টি গুদাম রয়েছে। সেগুলিতেও তল্লাশি চালানো হবে।” |
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস তিনেক আগে ওড়িশার বরবিল থেকে ৬টি ট্রাকে উচ্চ-মানের লৌহ আকরিক রফতানির জন্য হলদিয়া বন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয়। কিন্তু বন্দরে পরীক্ষায় সময় ওই লৌহ আকরিক নিম্ন মানের বলে বাতিল হয়ে যায়। পথে কারচুপি হয়েছে দাবি করে ১৭ সেপ্টেম্বর হলদিয়ার ভবানীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করে পরিবহণের দায়িত্বে থাকা কলকাতার একটি সংস্থা। জেলা পুলিশের সঙ্গে তদন্তে নামে ডিস্ট্রিক্ট এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ। দু’জন ট্রাকচালককে গ্রেফতার করা হয়। ডিইবি-র দাবি, জেরায় ওই দুই ট্রাকচালক তাদের কাছে স্বীকার করেন, হলদিয়ারই ডিঘাসিপুরে একটি গুদামে আসল আকরিকের পরিবর্তে নিম্ন মানের লৌহ আকরিক ট্রাকে তোলা হয়েছে। তল্লাশি চালিয়ে সেই গুদাম থেকে চুরি যাওয়া লৌহ আকরিকও উদ্ধার করা হয়। খোঁজ নিয়ে পুলিশ জানতে পারে, ডিঘাসিপুরের ওই গুদামের জমি লিজ নিয়েছিলেন শেখ মজফ্ফর। কয়েকবার জিজ্ঞাসাবাদের পরে অবশেষে এ দিন দুপুরে তাঁকে ধরা হয়। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪১০ ও ১২০-বি ধারায় চুরি ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। গ্রেফতার করার পরে পূর্ব মেদিনীপুর হাসপাতালে স্বাস্থ্য-পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় মজফ্ফরকে। হাতের হাড় ভাঙা থাকায় তাঁকে সেখানেই ভর্তি করানো হয়।
একদা হলদিয়া বন্দরের ‘ক্রেন অপারেটর’ মজফ্ফরের বাড়ি ডিঘাসিপুরে। লক্ষ্মণ শেঠের অন্যতম ঘনিষ্ঠ এই ব্যবসায়ী হলদিয়ার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। যদিও এ দিন অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি লক্ষ্মণবাবু এবং তাঁর স্ত্রী তথা হলদিয়ার পুরপ্রধান তমালিকাদেবীর সঙ্গে। মজফ্ফর দলীয় কোনও পদে না থাকায় সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা নেতৃত্বও এই প্রসঙ্গে মুখ খোলেননি। তবে হলদিয়ার উপপুরপ্রধান সিপিএমের নারায়ণ প্রামাণিক বলেন, “ব্যবসায়িক কারণে মজফ্ফরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা ওঁর পাশেই আছি।” আর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শেখ মজফ্ফর চুরির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “খোঁজখবর নেওয়ার নাম করে এসপি অফিসে ডেকে এনে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে।” |