পাড়া কাঁপাতে ‘গ্যারান্টি’ দিয়েই বিকোচ্ছে শব্দবাজি
‘পেটো’ বোমা থেকে আওয়াজে কোনও অংশে কম নয় ‘গ্যারান্টি’ দিচ্ছেন দক্ষিণ শহরতলির মহেশতলা-বজবজ ও চম্পাহাটির অবৈধ শব্দবাজি বিক্রেতারা।
দক্ষিণ শহরতলির আঁতুড়ঘরে বেপরোয়া ভাবে শব্দবাজি তৈরি হচ্ছে। মহেশতলা-বজবজ ও চম্পাহাটি এলাকায় কোনও রকম রাখঢাক না-করে শব্দবাজি বিক্রিও করা হচ্ছে। বিধি-নিষেধের বালাই নেই। স্রেফ ‘দাম দাও, বাজি নাও।’ একটি ‘গোল্লাবোমা’র দাম ১৫ টাকা। মহেশতলা থানা এলাকার নুঙ্গি বাজির বাজারে রাস্তার পাশে অস্থায়ী দোকানগুলিতে আতসবাজির সঙ্গে চকোলেট বোমার প্যাকেটও উঁকি মারছে। রয়েছে গোল্লাবোমাও। বিক্রির ব্যাপারে রাখঢাকও নেই। কিছু দোকানে অবশ্য শাড়ি বা প্লাস্টিক দিয়ে শব্দবাজির প্যাকেট ঢেকে রাখা।
১০০টি ছোট চকোলেট বোমার প্যাকেট, গুণমান অনুযায়ী ১২৫ থেকে ১৫০ টাকা। তবে, এ বছর মহেশতলা-বজবজ এলাকায় ‘হিট’ রাজভোগের থেকে একটু বড় সাইজের ‘গোল্লাবোমা’। পাটের সুতলি দড়ি দিয়ে বাঁধা। ইঞ্চি দেড়েক পলতে। বাজি বিক্রেতাদের দাবি, এলাকা কাঁপিয়ে দেবে। বাজির কারিগরদের শব্দমাত্রার বিষয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই। নুঙ্গির পাশাপাশি মহেশতলা-বজবজের বরকমতলা, পুঁটখালি বলরামপুর, চিংড়িপোতাতেও রমরমিয়ে তৈরি হচ্ছে চকোলেট ও গোল্লাবোমা।
নুঙ্গিতে দেদার বিকোচ্ছে এমনই ‘গোল্লাবোমা’। ছবি: পিন্টু মণ্ডল
পিছিয়ে নেই দক্ষিণ শহরতলির চম্পাহাটিও। ওই এলাকার হাড়াল, কমলপুর, কাঁটাখাল ও সোলগোয়ালিয়া গ্রামেও আতসবাজি তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন ছোট ছোট কারখানায় শব্দবাজি তৈরি হচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগে গভীর রাতে হাড়াল গ্রামে হানা দিয়ে প্রায় এক হাজার কেজি শব্দবাজি বাজেয়াপ্ত করে বারুইপুর থানার পুলিশ। তবে সেই বাজি ওই রাতে থানায় নিয়ে যেতে পারেননি পুলিশকর্মীরা। স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশের জিপ আটকে বিক্ষোভ দেখিয়ে বাজেয়াপ্ত করা প্রায় ৮০০ কেজি শব্দবাজি ছিনিয়ে নিয়ে যান। অগত্যা ২০০ কেজি শব্দবাজি নিয়েই থানায় ফিরতে হয় পুলিশকে। শব্দবাজি ধরতে ঢিলেঢালা অভিযানের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। মহেশতলা ও বজবজ থানা এলাকাতেও কয়েকটি গ্রামে নামমাত্র তল্লাশি হয়েছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনার দাবি, ‘‘তল্লাশি অভিযান হচ্ছে। শব্দবাজি আটকও হচ্ছে।” কিন্তু ওই সব এলাকায় তো দেদার শব্দবাজি বিক্রি হচ্ছে? পুলিশ সুপার বলেন, “দেখা হচ্ছে।”
এত দিন কালীপুজোয় শহর ও শহরতলিতে চকোলেট বোমার আওয়াজেই কান পাতা দায় হত। দক্ষিণ ২৪ পরগনা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “এ বার গোল্লাবোমার শব্দের দাপট কত দূর গিয়ে পৌঁছবে, তা আন্দাজ করা যাচ্ছে না।” জেলা পুলিশের ওই কর্তা হয়তো গোল্লাবোমার ক্ষমতা আন্দাজ করতে পারছেন না। কিন্তু মহেশতলার কারিগরেরা আপনাকে একশো শতাংশ আশ্বাস দিচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘এলাকায় ফাটালে পুলিশ পালাবে।’’ পুঁটখালি এলাকার এক গোল্লাবোমার কারিগর বলেন, “রাতে আট-দশটা গোল্লাবোমা ফাটলেই এলাকা জমে যাবে। চকোলেট বোমা তো এর কাছে শিশু। এক বার ফাটান না! আওয়াজ আর ধোঁয়া দেখবেন। গোটা এলাকা ধোঁয়ায় ঢেকে যাবে। ঘরের জিনিসপত্র মাটিতে পড়ে যাবে।”
কালীপুজোর রাতে তাই শহর ও শহরতলিতে শব্দবাজির ডেসিবেল-মাত্রা কোথায় গিয়ে ঠেকবে, সেটাই এখন চিন্তায় ফেলেছে কলকাতা ও রাজ্য পুলিশকে। বছর চারেক আগে বারুইপুর থানা এলাকায় শব্দবাজির ডেসিবেল মাপার যন্ত্র বসিয়েছিল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পষর্র্দ। বছর দুয়েক আগেই সেটি অকেজো হয়ে এখন বারুইপুর থানায় বাক্সবন্দি। ডেসিবেল মাপা হবে কী ভাবে।
কলকাতা পুলিশের বর্ধিত এলাকায় শব্দবাজি ধরতে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে। মহেশতলা ও বজবজ এলাকার শব্দবাজির কারিগরেরা তাই পুলিশের নজর এড়িয়ে বাজি নিয়ে যাওয়ার পথও বাতলে দিচ্ছেন। এসি গাড়ির ডিকি, পাঁউরুটির গাড়ি, তেল-সাবানের কার্টন ভর্তি মিনিডোরে মুখ লুকিয়ে শব্দবাজি পৌঁছে যাচ্ছে আপনার গন্তব্যে। সঙ্গে সর্তকবার্তা: ‘মেন রোড এড়িয়ে চলুন। গলি ব্যবহার করুন। ভোরের দিকে শব্দবাজি নিয়ে যান।’


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.