|
|
|
|
|
বাঙালির পাতে পারফিউম!
কী এসে যায় সাজানো পঞ্চব্যঞ্জনে, যদি
পাতে না থাকে এক টুকরো
গন্ধরাজ?
এ লেবু কচলে লাভ। অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় |
|
|
ফরাসি পারফিউম-এর কথা বাঙালিরা জানে। বাঙালি পারফিউম-এর কথা ফরাসিরা জানে না। জানলে, এত দিনে তাঁরাও শুধু ডালে-ভাতে বাঙালি হয়ে থেকে যেতে চাইত। ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত, সোনামুগের ডাল, আর গন্ধরাজ লেবু। এই যদি হত কোনও ডিনার-এর মেনু, আমি নিশ্চিত, অন্য কোনও ডেলিকেসি আর ছুঁয়ে দেখত না।
কী এসে যায় সাজানো পঞ্চব্যঞ্জনে, যদি না পাতে থাকে এক টুকরো মন-মাতাল গন্ধরাজ? রান্নাঘরের বঁটি, কিচেন-এর ছুরি যার শরীর ফালা ফালা করে কেটে ভাবেসার্থক জনম আমার! আজন্ম-প্রেমিক আমি তার ওই রূপ-রস-গন্ধের অমর ঐশ্বর্যের। আমার বাংলার গন্ধরাজ দীর্ঘজীবী হোক।
এই অবধি লিখে বেশ গা-ছমছম করছে। এ তো রীতিমত প্রেম নিবেদন। ‘অ্যান ওড টু গন্ধরাজ’ বলে দিব্যি কোনও সিলেবাসে চালিয়ে দেওয়া যায়। অথবা বানিয়ে ফেলা যায় কোনও দারুণ সিনেমা, যেখানে গল্পের হিরো বিশেষ সেই গন্ধের খোঁজে চষে ফেলেছে আসমুদ্রহিমাচল, পাচ্ছে না। পাবে কোথায়? আমার লোনাভালার বাগানেও তো লাগিয়েছিলাম সেই গাছ, লেবুও হয়েছিল, শুধু গন্ধটাই যা ছিল না! |
|
অলংকরণ: দেবাশীষ দেব |
সাংহাই-এর এক শেফ তো রীতিমত হাতেপায়ে ধরেছিল মাত্র দু’টো লেবুর রিকোয়েস্ট নিয়ে, তাঁদের রেস্তোরাঁয় নাকি বিক্রি বেড়ে যাবে এই লেবু সেখানে ইনট্রোডিউস করলে! আমার সাম্প্রতিক ইয়োরোপ সফরেও তো এক বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের কর্তারা পাগল এই লেবুর প্রেমে। ভদকার পেগ-এ ড্যাশ অফ টনিক ওয়াটার আর ক্রাশড গন্ধরাজের গুণেই কিনা জানি না, আমার ক্লায়েন্ট-এর সব আবদার তাঁরা এক কথায় মেনে নিল!
গন্ধরাজের এই বিশ্বজয় অবশ্য বহু দিন ধরে দেখছি। আমাদের ‘ওহ্ ক্যালকাটা’য় গন্ধরাজ ভেটকির টেস্টে ফ্ল্যাট হয়ে গেছে এমন বিদেশি অতিথির সংখ্যা নেহাত কম নয়। রাষ্ট্রপতি থেকে রাষ্ট্রদূত গন্ধরাজের গন্ধে বিভোর হয়ে যাওয়া এই ভিভিআইপির লিস্ট বাড়বে বই কমবে না!
পাঠানের যদি হিং-কিশমিশ থাকে, বাঙালির আছে গন্ধরাজ। পাতি, কাগজি, ও আরও হাজার লেবুর ভিড়ে রীতিমত নাকউঁচু এই প্রজাতি। কৌলীন্যে ম’ম করা গন্ধ আর ভুবনভোলানো স্বাদের ইউএসপি নিয়ে তার কাছে কোথায় লাগে মহার্ঘ ফরাসি পারফিউম, আরবি আতর?
আমার জীবনের সঙ্গে পরতে পরতে জড়িয়ে আছে এই গন্ধরাজের মায়া। বাড়িতে তো ছেড়েই দিন, কর্মসূত্রে যখনই দেশ-বিদেশে কোথাও যেতে হয়, আমার লাগেজ-এ মাস্ট হ্যাভ সেই তিন-চার পিস আস্ত গন্ধরাজ। বামুন ঠাকুর যেমন তার হাতা-খুন্তি বা মশলাপাতি নিয়ে ঘোরে, আমি ঘুরি গন্ধরাজকে নিয়ে। সুদূর পরবাসে থেকেও দেশের মাটির এমন সুবাস আর কে-ই বা দিতে পারে?
আর তাই, গন্ধরাজ আমার কাছে অহংকার। আমার দেশাভিমানের ব্র্যান্ড-অ্যাম্বাসাডর, আমার অমর বাঙালিয়ানার লোগো। |
|
|
|
|
|