রোগিণীর মৃত্যুর পরে ভাঙচুর, ১২ ঘণ্টা ওয়ার্ডেই পড়ে দেহ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
রোগিণীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ভাঙচুরের জেরে প্রায় ১২ ঘণ্টা হাসপাতালের ওয়ার্ডেই পড়ে থাকল মৃতদেহ। শুক্রবার, ঘটনাটি ঘটেছে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ মৃত্যু হয় রক্তের ক্যানসারে আক্রান্ত সাবিত্রী দাসের (৫৪)। সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ সাবিত্রীদেবীর বাড়ির লোকেরা হাসপাতালে এসে দেখেন, সাদা চাদরে সাবিত্রীদেবীর দেহ ঢাকা। এর পরেই গোলমাল বাধে। তার জেরে বিকেল চারটে পর্যন্ত সাবিত্রীদেবীর মৃতদেহ মহিলা ওয়ার্ডের অন্য ১০৫ জন রোগিণীর সঙ্গে এক ওয়ার্ডেই পড়ে থাকে।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, গত ১০ অক্টোবর থেকে সাবিত্রীদেবী ভর্তি ছিলেন এনআরএসের মেডিসিন বিভাগের মহিলা ওয়ার্ডের ৪২ নম্বর বেডে। সাবিত্রীদেবীর বোনপো দেবাশিস চন্দের অভিযোগ, “সাদা চাদরে মাসির দেহ ঢাকা দেখেই বিষয়টা বুঝতে পারি। কিন্তু মৃত্যুর সময়টা নার্স বা আয়া কেউই বলতে পারছিলেন না। |
হাসপাতালে মৃতার পরিজনেরা। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র |
অনেক পরে সুপারের কাছে গিয়ে জানতে পারি, মাসি সকালে মারা গিয়েছেন।” রোগিণী মারা যাওয়ার চার ঘণ্টা পরেও কেন মৃত্যুর খবর হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ পরিজনদের জানাননি, সেই অভিযোগ তুলে সুপারের ঘরে বিক্ষোভ দেখান দেবাশিসবাবু ও সাবিত্রীদেবীর অন্য আত্মীয়েরা। দেবাশিসবাবুর অভিযোগ, “বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার সময় মাসিকে খাইয়ে বেরিয়েছিলাম। সারারাত হাসপাতালেই ছিলাম। সকালেও অনেকক্ষণ ছিলাম। কিন্তু ওয়ার্ড থেকে কেউ মাসির শরীর খারাপ বা মারা যাওয়ার কথা জানাননি।”
এনআরএসের সুপার স্বপনকুমার সাঁতরা বলেন, “সাবিত্রীদেবী মুমূর্ষু ছিলেন। এ দিন ওঁর বাড়ির লোক অনেকক্ষণ কোনও খবরও নেননি। মৃত্যুর পরে চার ঘণ্টা কাটার আগে রোগীর বাড়ির লোককে কিছু জানানো যায় না। তবে এ ক্ষেত্রে ডেথ সার্টিফিকেট লিখতে চার ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। তার পরে রোগীর আত্মীয়দের জানাতে আরও ঘণ্টাখানেক লেগেছে।”
মৃত্যুর খবর জানাতে এত দেরি হওয়ায় উত্তেজিত হয়ে অবিবাহিতা সাবিত্রীদেবীর আত্মীয়েরা ১২টা নাগাদ মেডিসিন বিভাগের ওয়ার্ডে ভাঙচুর চালান বলে অভিযোগ। সুপারের কথায়, “মৃত্যুর খবর জানাতে হাসপাতালের তরফে দেরি হয়েছে। এটা বলার পরেও ওই রোগিণীর বাড়ির লোকেরা ওয়ার্ডে ঢুকে টেবিলের কাচ ও কিছু চিকিৎসার সরঞ্জাম ভাঙেন। অন্য রোগিণীদের অসুবিধার কথা ভেবে পুলিশকে জানানো হয়।” হাসপাতালে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগে পুলিশ এসে সাবিত্রীদেবীর চার আত্মীয়কে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তবে লিখিত অভিযোগ দায়ের না হওয়ায় তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এই সব হতে হতে চারটে বেজে যায়। ততক্ষণ মহিলা ওয়ার্ডেই পড়েছিল মৃতদেহ। চারটের পরে সাবিত্রীদেবীর দেহ নিয়ে যান তাঁর পরিজনেরা।
কিন্তু ওয়ার্ডে এতক্ষণ দেহ পড়ে থাকল কেন? সুপারের বক্তব্য, “সাবিত্রীদেবীর চার আত্মীয়কে পুলিশ আটক করায় তা নিয়েই বাকিরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার কথা খেয়ালই ছিল না ওঁদের। আত্মীয়দের না পেলে মৃতদেহ তো বেড থেকে সরাতে পারি না।” বাকি রোগিণীদের সংক্রমণের আশঙ্কা প্রসঙ্গে সুপারের সাফাই, “সাদা চাদরে ঢাকা রয়েছে তো! দেহের পচন শুরু হয়নি। জীবাণু সংক্রমণও হয়নি।” |