নিখরচার সরকারি ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও এড্স আক্রান্তকে বাইরে রক্তপরীক্ষা করতে পাঠানোর অভিযোগ উঠল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার রোগীর তরফে হাসপাতাল সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়। সুপার গদাধর মিত্র কবুল করেন, “রক্তের ওই পরীক্ষাগুলি হাসপাতালেই করানো যেত। কেন ওঁদের সেগুলিকে বাইরে থেকে করিয়ে আনতে বলা হয়েছে, জানি না। হাসপাতালের কিছু চিকিৎসক ও কর্মীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ বারবার উঠছে। এমন ঘটনায় লজ্জায় আমাদের মাথা হেঁট হয়ে যায়।” তিনি জানান, অভিযোগপত্রে এক চিকিৎসকের নাম লেখা হলেও হুবহু ওই নামে কেউ নেই। অভিযুক্ত চিকিৎসককে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
বর্ধমান মেডিক্যালে কর্তব্যে গাফিলতি বা দুষ্টচক্রের রমরমার অভিযোগ নতুন নয়। প্রসবের দেরি আছে জানিয়ে গত বুধবার এক প্রসূতিকে ছুটি দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অন্যত্র তাঁর স্বাভাবিক প্রসব হয়। সে দিনই মুর্শিদাবাদের সুতি থানার রাতুরি গ্রামের এক এড্স রোগী ওই হাসপাতালে ভর্তি হন। পরের দিন, বৃহস্পতিবার রাধারানি ওয়ার্ডের এক চিকিৎসক সাদা কাগজে বেশ কয়েকটি রক্তের পরীক্ষা লিখে সেগুলি বাইরে থেকে করিয়ে আনতে বলেন বলে অভিযোগ। দুঃস্থ হওয়া সত্ত্বেও ৭০০ টাকা দিয়ে রোগীর পরিবার পরীক্ষাগুলি করাতে বাধ্য হয়।
এইচআইভি পজিটিভ ও এড্স রোগীদের নিয়ে কাজ করা এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অভিযোগ, বর্ধমান মেডিক্যালে এমনিতেই এড্স রোগীদের নিয়মিত ভোগান্তি ও দুর্ব্যবহারের শিকার হতে হয়। সুতির ওই রোগীকেও প্রথমে তারা ভর্তি নিতে চায়নি। বুধবার এড্স রোগীদের জন্য নির্দিষ্ট ‘এআরটি’ কেন্দ্রে পরীক্ষার পরে এক চিকিৎসক তাঁকে অবিলম্বে ভর্তি করাতে বলেন। জরুরি বিভাগে সেই কাগজ দেখানো হলে এক চিকিৎসক আবার লিখে দেন, তাঁকে নিউরোলজি বহির্বিভাগে দেখাতে হবে। খবর পেয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার লোকজন হাসপাতালে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। এর পরেই রোগীকে রাধারানি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।
রোগীর ছেলের অভিযোগ, ভর্তির পরের দিন এক চিকিৎসক ওয়ার্ডে এসে সাদা কাগজে বেশ কয়েকটি রক্তপরীক্ষার কথা লিখে তাঁদের জানান, বাইরে থেকে সেগুলি করিয়ে আনতে হবে। স্থানীয় একটি প্যাথলজিক্যাল সেন্টারে পরীক্ষা করাতে গিয়ে তাঁরা শোনেন, সব মিলিয়ে ৮৮০ টাকা লাগবে। তাঁর কথায়, “অত টাকা দেওয়া আমাদের মতো গরিবদের ক্ষমতার বাইরে। পরীক্ষাকেন্দ্রের লোকেদের হাতে-পায়ে ধরে আমরা ওঁদের ৭০০ টাকা নিতে রাজি করাই।”
হাসপাতাল সুপার জানান, অভিযোগপত্রে যে ডাক্তারের নাম দেওয়া হয়েছে, হুবহু না হলেও তার কাছাকাছি নামের চিকিৎসক হাসপাতালে আছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলা হবে। রোগীর পরিবার এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার লোকজনকেও তিনি বলেছেন, “নজর রাখুন। ওই চিকিৎসককে চিনতে পারলে আমায় জানান। তাঁর বিরুদ্ধে যাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেটা আমরা দেখব।” হাসপাতালে আসা সব রোগীর প্রতিই সুপারের পরামর্শ, “কোনও চিকিৎসক বাইরে থেকে পরীক্ষা করাতে বললেই সেখানে চলে যাবেন না। আমার অফিসে এসে খোঁজ নিন, ওই পরীক্ষাগুলি হাসপাতালে হয় কি না। তা না হলে তবেই বেসরকারি পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার প্রশ্ন আসবে।” |