ঝুঁকি-পথে যাতায়াত জলঢাকায়
ভারী যানের চাকার চাপে কবে উঠে গিয়েছে তিস্তা ও জলঢাকা সেতুর পিচের চাদর। ভেঙেছে সেতুর কংক্রিটও। চাঙর উঠে আসায় বিপজ্জনক ভাবে দাঁত বের করেছে সেতুর লোহার জাল। শুধু কী সেতু! ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের ফুলবাড়ি থেকে ফাটাপুকুর পর্যন্ত অন্তত ১০ কিলোমিটার এলাকা চষা জমির চেহারা নিয়েছে। বিপজ্জনক সব গর্তে ভরে গিয়েছে গোটা রাস্তা। খাদে চাকা আটকে যাত্রী বোঝাই বাস কাত হয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। উল্টেও পড়ছে মাঝেমধ্যেই।
চার লেনের মহাসড়ক হবে বলে রাজ্য পূর্ত দফতর সড়কটি জাতীয় মহাসড়ক কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিয়েছে। মহাসড়ক তৈরি তো দূরের কথা, সামান্য মেরামতি নিয়েও কারও হেলদোল নেই বলে অভিযোগ যাত্রীদের। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন জলপাইগুড়ি লাগোয়া তিস্তা ও ধূপগুড়ি লাগোয়া জলঢাকা সেতুর উপর দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। মাসের পর মাস ওই পরিস্থিতি চললেও বেহাল সেতু নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারি ওই সংস্থার কোনও হেলদোল নেই বলে অভিযোগ যাত্রীদের। সেতুর মেরামতির নিয়ে যোগাযোগ করা হলে শুক্রবারও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের টেকনিক্যাল ম্যানেজার পঙ্কজ মিশ্র বলেন, “চিন্তা নেই এক সপ্তাহের মধ্যে তিস্তা ও জলঢাকা সেতু ও রাস্তা মেরামত করা হবে।”
ভুক্তভোগীরা ওই আশ্বাসে সন্তুষ্ট নন। কেননা, পুজোর আগে কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিলেন সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে রাস্তা ও সেতু মেরামতের কাজ শুরু হবে। কিন্তু পুজোর পরেও বেহাল সেতুর আদল পাল্টায়নি। রাস্তার হাল ফেরেনি। গর্তগুলিতে যে ভাঙা ইঁট ফেলা হয়েছিল সেগুলি দু’দিনে গুঁড়িয়ে গিয়েছে। এখন তাই কাজ শুরু না-হওয়া পর্যন্ত আশ্বাসে ভরসা রাখতে পারছেন না কেউ। ময়নাগুড়ির আরএসপি বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারী বলেন, “৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক এখন অভিভাবকহীন। যাঁদের দেখভাল করার কথা তাঁরা প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।” তৃণমূল কংগ্রেসের জলপাইগুড়ির মহাসচিব চন্দন ভৌমিক বলেন, “জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা ওঁদের আচরণে হতাশ। বিষয়টি সবিস্তারে মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছি।” শুক্রবারও তিস্তা সেতুতে পার হওয়ার সময়ে বার বার আঁতকে উঠতে হয়েছে বহু যাত্রীকে। গর্তে পড়ে একটি বাস কাত হয়ে সেতুর রেলিংয়ের কাছে ঝুঁকে পড়লে এক অফিস যাত্রী চিৎকার প্রশ্ন করলেন, “এটা জাতীয় সড়ক! সেতু ভেঙে পড়ার আগে কী কর্তৃপক্ষের চেতনা ফিরবে না?” অসহায় বাস চালক যাত্রীদের আশ্বস্ত করলেও ফের অন্য একটি গর্তে পড়ে লাফিয়ে উঠল বাস। ফের চিৎকার। ফের বাস কর্মীদের আশ্বাস। সেতু পার হয়ে হাঁফ ছাড়লেন যাত্রীরা। কপালের ঘাম মুছলেন চালক। বললেন, “জাতীয় সড়ক না-ছাই। এর চেয়ে কাঁচা রাস্তা ঢের ভাল।” এমন বেহাল সেতু পার হতে গেলে যেমন হওয়া উচিত, যানজট প্রতিদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিস্তা সেতু পার হতে এখন গড়ে তিন ঘন্টা সময় লাগছে। সেটা টানা পাঁচ ঘন্টাও হতে পারে। সেতু পার হয়েও স্বস্তি মিলছে না। ফাটাপুকুরে পৌঁছতে ফের ঝক্কি শুরু। শিলিগুড়ি সংলগ্ন ফুলবাড়ি পর্যন্ত জাতীয় সড়কের প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তায় পিচের প্রলেপ বলে কিছু নেই। খন্দে ভরা রাস্তা জুড়ে ধুলোর ঝড় বইছে। পণ্য বোঝাই চারটি ট্রাক উল্টে গিয়েছে। বিকল হয়েছে একাধিক বাস। ‘উইণ্ড স্ক্রিন’ ভেঙে পড়েছে। ছিটকে বার হয়েছে যন্ত্রাংশ। বেসরকারি বাস চালক সিতু রায় বলেন, “আধ ঘন্টার পথ এক ঘন্টায় অতিক্রম করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিদিন গ্যারেজে ঢুকতে হচ্ছে। এ ভাবে চলাচল করা সম্ভব!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.