|
|
|
|
টালবাহানার নালিশ, বন্ধ চা নিলাম, ক্ষোভ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • জলপাইগুড়ি |
একসময়ে যার জন্য আন্দোলনে গর্জে উঠেছিল জলপাইগুড়ি, এখন আর তার দিকে কেউ ফিরেও তাকায় না। অবহেলার মূর্ত প্রতীক হয়ে করলা পাড়ে শুধু রয়ে গিয়েছে সাইনবোর্ড আর ভবন। আসবাবে ধুলোর পুরু আবরণ। দফতরের কর্মীরা কাজ ছেড়ে চলে গিয়েছেন। একজন নির্বাহী আধিকারিক রয়ে গিয়েছেন। লাগাতার বিভিন্ন দফতরে চিঠি পাঠানো ছাড়া তাঁর আর কাজ নেই। জানালেন, দফতরে এখন ফোন আসা পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গিয়েছে জলপাইগুড়ি চা নিলাম কেন্দ্রে। গত দু’বছর ধরে নিলাম বন্ধ রয়েছে জলপাইগুড়ির ওই কেন্দ্রে। শেষ বার নিলাম হয়েছিল ২০০৯ সালে। পরে আর নিলাম ঘরের তালা খোলেনি। নিলাম কেন্দ্র পুনরুজ্জীবনের জন্য অন লাইনে নিলাম করার কথা ঘোষণা করেছিল চা পর্ষদ। সব পরিকাঠামো তৈরি হয়ে গেলেও অনলাইন নিলাম চালু হয়নি। ৩০টি ল্যাপটপ বাক্সবন্দি হয়ে রয়েছে। নিলাম কেন্দ্রের মূল সমস্যা চা পাতার অভাব। ২০০৫ সালের ১২ এপ্রিল প্রথম নিলাম চালুর দিন চার হাজার ব্যাগ চা পাতা এসেছিল জলপাইগুড়ি চা নিলাম কেন্দ্রে। তার পর থেকেই শুরু হয়েছে পাতার সঙ্কট। |
|
ছবি তুলেছেন সন্দীপ পাল। |
নিলাম চালাতে প্রতি সপ্তাহে প্রয়োজন ২ হাজার ব্যাগ অর্থাৎ ৬০ হাজার কেজি চা পাতা। গত ছয় বছর কোনও সপ্তাহেই ওই পরিমাণ পাতা জলপাইগুড়ি কেন্দ্রে আসেনি। পাতার অভাবে একের পর এক নিলাম স্থগিত থেকেছে। ধুঁকতে ধুঁকতে কয়েক বছর নিলাম চলার পরে ২০০৯ সাল থেকে নিলাম সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে রয়েছে। সম্প্রতি রাজ্যে ক্ষমতার পরিবর্তনের পরে মুখ্যমন্ত্রী সহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে কেন্দ্রের হাল হকিকত জানানো হয়েছে। সেই চিঠির উত্তরের আশাতেই আপাতত দিন কাটছে এই কেন্দ্রের। জলপাইগুড়ি নিলাম কেন্দ্রের নির্বাহী আধিকারিক কমল ভট্টাচার্য বলেন, “দু’বছর এই কেন্দ্রে নিলাম হয়নি। দফতরের কর্মীরাও কাজ ছেড়ে চলে গিয়েছেন। বিশেষ কেউ আসেনও না আর। সকালে এসে অফিস খুলি। বিকেলে বন্ধ করে চলে যাই। একাই থাকি। জেলা প্রশাসনের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। পুজোর পরে জেলা প্রশাসনের একটি বৈঠক ডাকার কথা, দেখা যাক যদি কিছু হয়।” ২৪ মাস ধরে নিলাম বন্ধ অথচ প্রতিদিনই নিয়ম মেনে নিলাম কেন্দ্রের দফতর খোলা হয়। দফতরের খরচ জোগাড়ের জন্যই প্রতি মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। এই খরচ জোগাড়ের কাহিনিও অত্যন্ত করুণ। প্রথম বছরে নিলামে ১০ লক্ষ টাকা মতো ব্যাঙ্কে স্থায়ী আমানত জমা করা হয়। সেই টাকা ভাঙিয়েই নিলাম কেন্দ্রের প্রাত্যহিক খরচ জোগাড় করা হয়। জেলা প্রশাসনের পদস্থ এক আধিকারিকের কথায়, “দফতর তো খুলে রাখতেই হবে। নিলাম হচ্ছে না বলে যদিও দফতরেও তালা লাগিয়ে দেওয়া হয় তবে তো সরকারি ভাবেই নিলাম কেন্দ্র পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।” অথচ এই নিলাম কেন্দ্রের জন্যই দীর্ঘ বছর দশেক ধরে জলপাইগুড়িতে আন্দোলন হয়। অবরোধ, পথসভা থেকে শুরু করে জেলা শহরে চা নিলাম কেন্দ্রের দাবিতে বনধও হয়েছিল। দলমত নির্বিশেষে সাধারণ বাসিন্দাদের আন্দোলনের ফসল হিসেবে ২০০৫ সালে জলপাইগুড়িতে এই কেন্দ্র চালু হয়। কেন্দ্র চালুর পরেও চা পাতার অভাবে খুঁড়িয়ে চলতে থাকে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশ থেকে শুরু করে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি, রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত-সহ অনেকেই নিলাম কেন্দ্রে এসেছিলেন এবং হাল ফেরানোর জন্য আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিছুতেই কিছু হয়নি বলে অভিযোগ। |
|
|
|
|
|