মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ
রাজ্যে কেরোসিন চুরি বন্ধে ট্যাঙ্কারে ‘ভিটিএস’
রেশনে দেওয়া কেরোসিন তেলের চুরি বন্ধ করতে প্রতিটি ট্যাঙ্কারে ‘ভেহিকেল ট্র্যাকিং সিস্টেম’ (ভিটিএস) লাগাচ্ছে খাদ্য দফতর। এর ফলে জিপিআরএস প্রযুক্তির মাধ্যমে খাদ্য দফতরের কর্মীরা খাদ্য ভবনে বসেই প্রতিটি কেরোসিন ট্যাঙ্কারের গতিবিধি নজরে রাখতে পারবেন। ডিপো থেকে তেল তোলার পরে কোনও ট্যাঙ্কার যদি নির্দিষ্ট যাত্রাপথ পরিবর্তন করে অন্যত্র যায়, তা হলে সংশ্লিষ্ট ডিলারকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। পাহাড়, ডুয়ার্স, জঙ্গলমহলের মানুষ এবং সুন্দরবনের আয়লা-দুর্গতদের কেরোসিন তেল বেশি প্রয়োজন। রেশনে তাঁদের আরও বেশি করে কেরোসিন তেল দিতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে জন্য মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে কেরোসিন তেলের ট্যাঙ্কারের ‘ভিটিএস’ যন্ত্র লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
খাদ্যমন্ত্রী জানান, খাদ্য দফতর প্রতিটি কেরোসিন ট্যাঙ্কারের গতিবিধির উপরে নজর রাখতে পারলে ডিপো থেকে ডিলারের কাছে তেল সরবরাহের পথে চুরি বন্ধ হবে। জ্যোতিপ্রিয়বাবুর হিসাব মতো, চুরি বন্ধ করতে পারলে রাজ্যে অন্তত ২০ লক্ষ মানুষকে অতিরিক্ত কেরোসিন দেওয়া যাবে। ৩৪ বছরের শাসন কালে কেরোসিন তেলের চুরি বন্ধ করতে বামফ্রন্ট কেন কোনও পদক্ষেপ করেনি, খাদ্যমন্ত্রী সে প্রশ্নও তুলেছেন। তিনি বলেন, “আমরা যত শীঘ্র সম্ভব এই পদ্ধতি চালু করছি। ডিলারেরা রাজি হয়েছেন। প্রয়োজনে তাঁদের কমিশন বাড়ানো হবে। কিন্তু রেশনের তেল চুরি করে কালো বাজারে বিক্রি করা যাবে না।”
রেশনে কোন রাজ্য কত কেরোসিন তেল দিতে পারবে, তা নির্ভর করে কেন্দ্রীয় সরকারের উপরে। রাজ্যের কোটা ঠিক করে কেন্দ্র। অতিরিক্ত তেল দিতে হলে কোটা বাড়ার প্রয়োজন। রেশনে কেরোসিন তেল দিতে হলে সরকারকে লিটার প্রতি প্রায় ২৩ টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। তাই বেশির ভাগ সময়েই কেন্দ্র কোটার বরাদ্দ বাড়াতে চায় না। বেহাল আর্থিক অবস্থায় রাজ্যের পক্ষেও অতিরিক্ত তেল কেনা সম্ভব নয়। কিন্তু খাদ্যমন্ত্রীর যুক্তি, “ডিপো থেকে ডিলার এবং সেখান থেকে গ্রাহক পর্যন্ত সরবরাহে তেল চুরি বন্ধ করা গেলেই নিয়মিত অতিরিক্ত তেল দেওয়া সম্ভব।” সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জ্যেতিপ্রিয়বাবু দিল্লিতে কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রীর জয়পাল রেড্ডির সঙ্গে দেখা করে রাজ্যের জন্য অতিরিক্ত ১০ হাজার কিলোলিটার কেরোসিনের ব্যবস্থা করেছেন।
এমনিতেই রাজ্যে জনসংখ্যার তুলনায় রেশন কার্ডের সংখ্যা বেশি। তা নিয়ে ইতিমধ্যেই খাদ্য দফতর ব্যবস্থা নিচ্ছে। জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “ভুয়ো রেশন কার্ড উদ্ধার করতে পারলে কিছুটা বাড়তি তেল পাওয়া যাবে। কিন্তু তেল মূলত চুরি হয় ডিপো থেকে উপভোক্তার কাছে যাওয়ার পথে। আমরা তা বন্ধ করতে চাই।” পেট্রোল-ডিজেল চুরি বন্ধ করতে ইতিমধ্যেই তেল কোম্পানিগুলি অয়েল ট্যাঙ্কারে ‘ভিটিএস’ লাগিয়েছে। তেল কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করেই রাজ্য সরকার এই ব্যবস্থা নিতে চলেছে। প্রতিটি ভিটিএসের দাম পড়বে ১৩ হাজার ৩০০ টাকা। এর জন্য কেন্দ্রীয় সরকার প্রয়োজনীয় অর্থ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দক্ষিণবঙ্গে হলদিয়া, মৌরীগ্রাম, বজবজ, দুর্গাপুর এবং উত্তরবঙ্গে মালদহ ও হাসিমারা ডিপো থেকে কেরোসিন সরবরাহ করা হয়। প্রতিদিন গড়ে দক্ষিণবঙ্গ থেকে ৩৫টি এবং উত্তরবঙ্গ থেকে ১৫টি ট্যাঙ্কার বিভিন্ন জায়গায় কেরোসিন তেল সরবরাহ করে। গড়ে মাসে ৮০ হাজার কিলোলিটার তেল দেওয়া হয় রেশন কার্ডধারীদের। খাদ্যমন্ত্রীর হিসাব চুরি বন্ধ করতে পারলে বেশ কয়েক হাজার কিলোলিটার তেল বাঁচানো যাবে, যা দার্জিলিং বা জঙ্গলমহলে দেওয়া সম্ভব। এর জন্য খাদ্য ভবনে কম্পিউটার মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, “প্রয়োজনে আমি ঘরে বসেই প্রতিটি ট্যাঙ্কারের গতিবিধি জানতে পারব।” কবে থেকে এই পদ্ধতি চালু হবে? জবাবে দফতরের যুগ্ম অধিকর্তা আর কে গিরি বলেন, “কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি, তিন-চার মাস লাগবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.