চলতি মরসুমে গত বারের তুলনায় প্রায় ২৫% বেশি চাল সংগ্রহের নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মূলত জঙ্গলমহল ও পাহাড়ে বাড়তি চাল সরবরাহ সুনিশ্চিত করা এবং খাদ্য নিরাপত্তা আইনের কথা মাথায় রেখেই এই বাড়তি লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে।
মমতা মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের অল্পকালের মধ্যেই পাহাড়-জঙ্গলমহলে মাথাপিছু দু’কিলো চাল দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। রাজ্যের আবেদনে সাড়া দিয়ে কেন্দ্র চালের বাড়তি কোটার ব্যবস্থা করেছে। রাজ্য খাদ্য দফতরের উপ-অধিকর্তা জয়দেব জানা বলেন, “এর পাশাপাশি সরকারকে নয়া খাদ্য নিরাপত্তা আইনের কথাও মাথায় রাখতে হচ্ছে। মূলত এই কারণেই এ বার বেশি চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।” গত সেপ্টেম্বরে যে সংগ্রহবর্ষ বা মরসুম শেষ হয়েছে, তাতে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে ষোল লক্ষ মেট্রিক টন। সংগ্রহ হয়েছে ১৩ লক্ষ মেট্রিক টনের মতো। এ বার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছে ২০ লক্ষ মেট্রিক টন।
রাজ্যে বিপিএল-দের জন্য রেশনে সাপ্তাহিক চালের বরাদ্দ ছিল মাথাপিছু ৭৫০ গ্রাম। এ বাবদ কেন্দ্রীয় কোটা ছিল মাসে মোট ৭৯,৭০৭ মেট্রিক টন। সেপ্টেম্বর থেকে রেশনে বরাদ্দ বাড়িয়ে মাথাপিছু এক কিলো করা হয়েছে। এ জন্য কেন্দ্র এককালীন বাড়তি কোটা বরাদ্দ করেছে ২,৪৪,৫১২ মেট্রিক টন। রেশন দোকানে চাল জোগাতে রাজ্য সরকার ফি সংগ্রহ-অভিযানে নামে। অক্টোবরে শুরু হয় খারিফ বিপণন মরসুম (কেএমএফ)। যদিও সরকারি নির্দেশিকা জারির পরে অভিযান শুরু করতে করতে ডিসেম্বর পড়ে যায়।
কিন্তু এ বার বাড়তি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য মহাকরণের বৈঠকে অফিসারদের গোড়া থেকেই উদ্যোগী হতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই নভেম্বরেই খাদ্য দফতর চাল সংগ্রহে নামছে। এ ব্যাপারে বেনফেড, কনফেড, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহ নিগম (ইসিএসসি) এবং এফসিআই-কে প্রয়োজনীয় নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গে বার্ষিক চাল সংগ্রহের পরিমাণ রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছেছিল চার বছর আগে। সে বার ১৭ লক্ষ মেট্রিক টন চাল সংগৃহীত হয়েছিল।
খাদ্য দফতর-সূত্রের খবর: এ বার স্থির হয়েছে, ধার্য লক্ষ্যমাত্রার (২০ লক্ষ মেট্রিক টন) মধ্যে ১১ লক্ষ মেট্রিক টন চালকল মালিকদের থেকে লেভি হিসেবে আদায় করা হবে। সদ্যসমাপ্ত সংগ্রহবর্ষে লেভি বাবদ আদায় হয়েছিল এর অর্ধেকেরও কম। জেলাশাসকদের বলা হয়েছে বিষয়টি নিয়ে চালকল-মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করতে।
সংগৃহীত চাল রাখার জন্য রাজ্য সরকারের প্রায় ৫০টি গুদাম আছে। সেখানে প্রায় পাঁচ লক্ষ মেট্রিক টন চাল মজুত করা যায়। বাকিটা রাখা হয় স্টেট ওয়্যারহাউস কর্পোরেশন, সেন্ট্রাল ওয়্যারহাউস কর্পোরেশন এবং বেসরকারি নানা গুদামে। চাল সংগ্রহ সবচেয়ে বেশি হয় জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে। তার আগেই বিভিন্ন গুদামের প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের কাজ সেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
এ দিকে চালের ন্যূনতম সহায়কমূল্য কুইন্টালপিছু এক হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০৮০ টাকা করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। অন্য হিসেবে, ৬০ কিলোর প্রতিটি বস্তার সংগ্রহমূল্য ৬০০ টাকা থেকে বেড়ে হচ্ছে ৬৪৮ টাকা। রাজ্যের তরফে কুইন্টাল পিছু ৫০ টাকা বোনাস চাওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রীকে আর্জিও জানানো হয়েছে। |