বিদ্যুৎ মাসুল না বাড়ানোয় অনটন, মাসুল দিচ্ছে রাজ্য
য়লার দাম বেড়েছে। বেড়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি থেকে বাড়তি বিদ্যুৎ কেনার খরচও। কিন্তু বিদ্যুতের মাসুল বাড়ায়নি রাজ্য।
ফল? কয়লার দাম মেটাতে পারছে না বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম। যার ধাক্কায় কমেছে কয়লার জোগান এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন। রাজ্য জুড়ে ভয়াবহ আকার নিয়েছে লোডশেডিং। শুধু তা-ই নয়, ভবিষ্যতে বাড়তি চাহিদার কথা মাথায় রেখে সেই মতো নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হবে কি না, তা নিয়েও দেখা দিচ্ছে নানা সংশয়।
এই সমস্যাগুলির শিকড়ে রয়েছে সরকারের দু’টি নীতি। প্রথমটি অবশ্যই বিদ্যুতের দাম না-বাড়ানো। দ্বিতীয়টি হল, সরকারের জমি নীতি। যার মূল কথা, সরকার আর জমি অধিগ্রহণ করবে না। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্যও নয়।
এই নতুন জমি নীতির ফলে প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির ভবিষ্যৎ এখন বিশ বাঁও জলে। যার মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে কাটোয়ায় প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প। এই প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করেছে তৃণমূল-এসইউসি। এখন নতুন সরকারের জমি নীতির ফলে প্রকল্পটি থমকে গিয়েছে। তা ছাড়া, সাঁওতালডিহি কেন্দ্রেও যে দু’টি ৮০০ মেগাওয়াটের ইউনিট বসানোর কথা আছে, তার জন্যও জমি চাই। প্রশ্ন উঠেছে এর ভবিষ্যৎ নিয়েও।

দেশ জুড়ে যে বিদ্যুৎ ঘাটতি চলছে, তার পিছনেও সেই কয়লা-সঙ্কট। কিন্তু সঙ্কটের কারণ এ রাজ্যের থেকে একেবারেই আলাদা। তেলেঙ্গানা-সহ বিভিন্ন অঞ্চলের কয়লাখনিতে আন্দোলন-ধর্মঘটের জন্য ব্যাহত হয়েছে উৎপাদন। তাই ঠিক সময় পরিমাণ মতো কয়লা পৌঁছনো সম্ভব হচ্ছে না বিদ্যুৎ কেন্দ্রে।
এ রাজ্যের সমস্যা কিন্তু সম্পূর্ণ অন্য। এখানে কয়লার জোগান আছে। কিন্তু তা কেনার জন্য রাজ্য বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির হাতে পর্যাপ্ত টাকা নেই। কেন না, জ্বালানি সারচার্জ কিংবা মাসুল বাড়ানোর অনুমতিই সংস্থাগুলিকে দেয়নি রাজ্য সরকার।
পাশাপাশি জমি অধিগ্রহণ না করার নীতি নেওয়ায় আটকে রয়েছে চারটি সাবস্টেশন। বসানো যাচ্ছে না টাওয়ারও। ব্যতিক্রম অবশ্য নয়াচরের বিদ্যুৎ প্রকল্প।
সেখানে বিদ্যুৎ যেতেও চাই সাব-স্টেশন আর সংবহন লাইন। তবে ওখানকার জমি নিয়ে এখনও পর্যন্ত বিতর্ক নেই। অবশ্য নয়াচরে কবে কতটা বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে, তা এখনও স্থির হয়নি।
বিদ্যুৎ সঙ্কটের সমস্যাটা যে আশু মেটার নয়, তা বিদ্যুৎ দফতরের কর্তারা স্বীকারও করে নিয়েছেন। রাজ্য সরকারের কাছে এটা এই মুহূর্তে অন্যতম চ্যালেঞ্জ। বিদ্যুতের সমস্যাটা যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে চলেছে, তার ইঙ্গিত পেয়েছেন রাজ্যের শিল্পকর্তারা। তাঁদের প্রতিনিধিরা ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের কাছে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবি নিয়ে দরবার করে গিয়েছেন বিদ্যুৎ দফতরে। তাঁরা রাজ্যকে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘দরকার হলে বিদ্যুতের মাসুল বাড়ুক, কিন্তু বিদ্যুৎ যেন পাই।’ রাজ্যে যে ভাবে বিদ্যুৎ ঘাটতি দেখা দিয়েছে, তা নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন শিল্পমহল। শিল্পকর্তারা বলছেন, এখনও পর্যন্ত খুব বড় শিল্প সংস্থা সে ভাবে বিদ্যুৎ ছাঁটাইয়ের শিকার না হলেও ছোট ও মাঝারি সংস্থাগুলি নিয়মিত লোডশেডিং-এ নাকানিচোবানি খাচ্ছে।
শিল্পমহল বলছে, কয়লার দাম বাড়লে সেই দাম আদায়ের সুযোগ দিতেই হবে বিদ্যুৎ উৎপাদকদের। সে জন্য বিদ্যুৎ মাসুল অতীতেও বেড়েছে, এখনও বাড়লে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই। মাসুল বৃদ্ধি যেন ন্যায্য হয়, তা দেখার জন্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশন রয়েছে। কিন্তু দাম বাড়লেও বিদ্যুতের নিয়মিত জোগান দরকার। না হলে শিল্পই বন্ধ হয়ে যাবে।
কয়লার বকেয়া মেটাতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমকে ৬০ কোটি টাকা দেওয়া হবে বলে বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেন বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত। নিগমের দেখাদেখি বৃহস্পতিবারই বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা এখনই ২০০ কোটি টাকা ভর্তুকির দাবি জানিয়েছে। বণ্টন সংস্থা সূত্রের খবর, ওই টাকা না পেলে নভেম্বর মাস থেকে অন্য রাজ্য থেকে বিদ্যুৎ কেনা তো দূরের কথা, নিগমকেই বিদ্যুতের দাম দিতে পারবে না তারা। টাকা না পেলে নিগম আরও সঙ্কটে পড়বে, আরও বাড়বে লোডশেডিং।
বিদ্যুৎমন্ত্রীর বৃহস্পতিবারের ঘোষণার পরে ইস্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেড (ইসিএল) কর্তারা শুক্রবার সকাল থেকেই নিগমের অফিসে ঘন ঘন খোঁজ নিতে থাকেন, টাকাটা কবে পাওয়া যাবে, তা জানতে চেয়ে। কিন্তু এই টাকা ইসিএল-এর হাতে পৌঁছনোর আগে বেশ কয়েকটি প্রশাসনিক স্তর অতিক্রম করতে হবে। প্রথমেই বিদ্যুৎ দফতরের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়ে তাদের ওই ফাইল ফেরত পাঠাবে অর্থ দফতর। এর পর তার ভিত্তিতে সরকারি নির্দেশ বের করবেন বিদ্যুৎসচিব। তার ভিত্তিতে দফতরের ‘ড্রয়িং অ্যান্ড ডিসবার্সিং অফিসার’ সরকারের ‘কলকাতা ট্রেজারি’-কে নির্দেশ পাঠাবেন, টাকাটা যেন নিগমের অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হয়। টাকা জমা পড়লে নিগম ওই টাকা নিজেদের কোনও ব্যাঙ্কে জমা দেবে। তবেই কয়লা সংস্থার নামে চেক কাটবে নিগম। বিদ্যুৎ দফতরে ফাইল ফেরত আসার পর ৪৮ ঘণ্টা লাগবে টাকাটা কয়লা সংস্থার হাতে আসতে।
কিন্তু এই ৬০ কোটি টাকা কি সত্যিই ইসিএল পাবে? নিগম কর্তারা বলেন, ওই মর্মে নির্দিষ্ট কোনও সরকারি নির্দেশ না থাকলে টাকাটা তাঁরা বিভিন্ন কয়লা সংস্থাকে ভাগ করে দিতে চান। কেন না, শুধু ইসিএল তো নয়, সব কয়লা সংস্থাই তাঁদের কাছে টাকা পায়। ইসিএল কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল বলে যদি শুধু তাদেরই পুরো ৬০ কোটি টাকা দিয়ে দেওয়া হয়, তা হলে অন্যান্য কয়লা সংস্থার কাছে বার্তা যাবে যে, বকেয়া আদায়ের ওটাই সহজ পথ।
শুক্রবার অবশ্য বিদ্যুৎ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। সিইএসসি এলাকায় এ দিন আর ঘাটতি হয়নি, বণ্টন কোম্পানির এলাকায় সান্ধ্যকালীন ঘাটতি ছিল ৩২৫ মেগাওয়াট। নিগমের হাতে কয়লার জোগান একটু বৃদ্ধি পাওয়ায় বৃহস্পতিবারের চেয়ে বিদ্যুতের উৎপাদনও ৩০০ মেগাওয়াট বাড়ে। বাইরের রাজ্য থেকেও আগের দিনের তুলনায় ১০০ মেগাওয়াট বেশি বিদ্যুৎ মিলেছে। উৎপাদন বেড়েছে ডিপিএল-এরও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.