|
|
|
|
|
|
|
মুখোমুখি... |
|
শাহ.ওয়ান |
‘ছোটখাটো খান’দের ধর্তব্যের মধ্যেই ধরেন না। তাঁর কাছে তিনিই নাম্বার ওয়ান। হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যৎ
যাঁকে দেখতে হবে। ১৫০ কোটির ঝুঁকি তো কী? হলিউডের টক্কর নেওয়া ছবি ‘রা-ওয়ান’ বলিউডে বসে একমাত্র
তিনিই বানাতে পারেন। শাহরুখ খান-এর সেই ‘খানদানি’ মেজাজটাই ধরা পড়ল ইন্দ্রনীল রায়-এর রেকর্ডারে |
পত্রিকা: আপনার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা বলছেন, মনসুর আলি খান পটৌডি মারা যাওয়ার পর আপনি নাকি ভীষণ ভাবে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন। অনেক দিন আপনাকে এতটা আবেগপ্রবণ হতে দেখা যায়নি...
শাহরুখ: ইয়েস ইয়ার। অনেক দিন পর সত্যি এমন হল। খবরটা পাওয়ার পর আমি যেন কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলাম। যখন দিল্লিতে বড় হয়ে উঠছি, সেই সময় কিংবদন্তি সুপারস্টার বলতে যা বোঝায় মনসুর আলি খান পটৌডি ছিলেন তাই। অত্যন্ত কেতাদুরস্ত। অসম্ভব রঙিন। ঝকঝকে বুদ্ধির দীপ্তিতে শাণিত এক ব্যক্তিত্ব। আমার বাবা মা-ও দারুণ ভাবে তাঁর অনুরাগী ছিলেন। স্বভাবতই ওঁর মৃত্যু আমাকে ভীষণ ভাবে নাড়া দিয়ে গেছে। মনে হচ্ছে পৃথিবী এক জন আপাদমস্তক ভদ্রলোককে হারাল।
পত্রিকা: স্যাফ আলি খানের সঙ্গে কথা হয়েছে?
শাহরুখ: হ্যাঁ কথা বলেছি। স্যাফ আর সোহা আমার খুব কাছের।
পত্রিকা: পটৌডির মৃত্যুর কয়েক দিন আগেই আপনার বন্ধু আজাহারউদ্দিন পুত্রহারা হলেন...
শাহরুখ: (নীরবতা) কী আর করা যাবে? আল্লা কি আগে কিসি কি নহি চলতি। আয়াজউদ্দিনের মৃত্যুতেও আমি বিপর্যস্ত। আজহার আমার খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এ বার ইডেন গার্ডেন্সে কে কে আর-এর ম্যাচের সময় আজহার ছিলেন। দুর্ঘটনার ঠিক পরেই আমি হায়দরাবাদে অ্যাপোলো হাসপাতালে যোগাযোগ করে ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। আয়াজউদ্দিন ইতনা সুলঝা হুয়া লড়কা থা...ঈশ্বরই জানেন কী যে হয়ে গেল! আজকালকার টিএনজারদের আমি শুধু একটা কথাই বলতে চাই-- প্লিজ, র্যাশ ড্রাইভ কোরো না। কারণ জীবন এখানেই শেষ নয়। বাড়িতে আরও দু’জন মানুষ আছেন। তাঁরা তোমার মা-বাবা। তোমার প্রতি যাঁদের অসীম ভালবাসা। অম্তত বাবা-মায়ের কথা ভেবে অত জোরে গাড়ি চালিও না প্লিজ।
পত্রিকা: আপনার সাম্প্রতিক ছবির কথায় ফিরে আসি। আগের বার যখন সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম আপনি বলেছিলেন ‘রা-ওয়ান’ হচ্ছে আপনার প্রযোজনায় সবচেয়ে ঝুঁকি নেওয়া ছবি। কেরিয়ারের এই প্রান্তে এসে এই বিরাট জুয়াটা কেন খেললেন?
শাহরুখ: (একটা সিগারেট ধরিয়ে)...কিন্তু আমি যদি ঝুঁকি না নিই তা হলে কে নেবে? আই অ্যাম শাহরুখ খান ইয়ার। কিছু দিন আগে গৌরীর সঙ্গে এই নিয়ে কথা হচ্ছিল। আমি ওকে বলছিলাম এটা এমন একটা ছবি যেখানে হয়তো আমার বিরাট টাকা লোকসানও হয়ে যেতে পারে। গৌরী জিজ্ঞেস করল, তুমি কত টাকা রোজগার করেছ এত দিনে? আমি বললাম কোটি কোটি টাকা রোজগার করেছি এবং এর জন্য আমি ফিল্ম-ইন্ডাস্ট্রির কাছে কৃতজ্ঞ। তখন গৌরী বলল, তা হলে এগিয়ে যাও। এ নিয়ে আর বেশি ভেবো না। গৌরী এই রকমই।
এবং আমার মনে হয়েছিল ও ঠিকই বলেছে। আমি ১৫০০ টাকা নিয়ে এক দিন মুম্বই শহরে এসেছিলাম। আজ ২০ বছর পর সেই আমি ভারতের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ছবি করছি। আর সে ছবিতে থাকছে আন্তর্জাতিক মানের অ্যানিমেশন আর স্পেশাল এফেক্টস।
পত্রিকা: এবং সেই ছবির বাজেট ১৫০ কোটি টাকা...
শাহরুখ: বাজেট নিয়ে কথা বলতে চাই না। আমি মানুষের কাছ থেকে এত বেশি স্নেহ, ভালবাসা, শ্রদ্ধা পেয়েছি যে তার সঙ্গে টাকার মতো জিনিসের তুলনা করা যায় না। এ বার যেটা সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হল আজ থেকে কুড়ি বছর বাদে যখন আমি থাকব কি থাকব না, মানুষ যেন বলে “শাহরুখ বোলকে এক অ্যাক্টর থা। উসনে হি ইন্ডাস্ট্রিমে হলিউড স্টাইল অ্যানিমেশন অউর স্পেশাল এফেক্টস লায়া থা।” |
|
পত্রিকা: আপনি তো বরাবরই খুব গিজমো ফ্রিক। টেকনোলজিতে খুব কৌতূহল...
শাহরুখ: তার কারণ একটাই, একমাত্র প্রযুক্তিকেই আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। আজকালকার দিনে গল্পকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। শিল্পীদের বাগে রাখতে পারবেন না। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করতে পারা যায় একটা ব্যাপারই, সেটা প্রযুক্তি। সোজা কথায় এটাই একমাত্র বশে রাখার মতো জিনিস। এবং আমার যেটুকু দূরদর্শিতা আছে তাতে বুঝি ভারতীয় সিনেমার ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে আপন করে নেওয়ার এটাই সঠিক সময়।
আর সেই কারণেই আজ থেকে ন’বছর আগে মাত্র ১০ জন ছেলেকে নিয়ে স্পেশাল এফেক্টসের কোম্পানি খুলেছিলাম। আজ তিন হাজার কর্মী ‘রা-ওয়ান’-এর জন্য কাজ করছে। আমি এটা খুব গভীর ভাবে বিশ্বাস করি অ্যানিমেশন আর স্পেশাল এফেক্টসই সিনেমার একমাত্র ভবিষ্যৎ।
পত্রিকা: বলিউড কোনও দিনই সে ভাবে অ্যানিমেশনে আগ্রহ দেখায়নি। আর আপনি বলছেন অ্যানিমেশনই ভারতীয় সিনেমার ভবিষ্যৎ। ঠিক মিলছে না ব্যাপারটা...
শাহরুখ: জানি না মিলছে কি মিলছে না। তবে একটা ভবিষ্যদ্বাণী করতেই পারি। আর বছর দশেক বাদে ভারতীয় দর্শক আর ভারতীয় ছবি পছন্দ করবে না। ফরাসি, পোলিশ, জার্মান, ইতালিয়ান, দক্ষিণ আমেরিকান.....প্রত্যেকটা জাতই সিনেমার ইতিহাসে ঠাঁই পাওয়ার মতো সেরার সেরা কিছু ছবি বানিয়েছে। কিন্তু এই সব ছবি-করিয়েরা সকলেই হেরে গেছে হলিউডের চেকনাইয়ের কাছে।
আমি চাই আমাদের বেলায় এমনটা যেন না ঘটে। সারা পৃথিবীর হিসেবে ভারতেই বছর হিসেবে সব চেয়ে বেশি সংখ্যক ছবি তৈরি হয়। কিন্তু আমাদের এমন ছবি বানাতে হবে যেটা নিয়ে একটা ১৫ বছরের ছেলে গর্ব করবে।
এই বয়সী ছেলেমেয়েরা আজকাল বিশ্বচলচ্চিত্রের ব্যাপারে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। তারা নিচু মানের কিছু দেখা পছন্দ করবে না। এ ভাবে চলতে থাকলে এমনও হতে পারে আমরা কিছু টের পাওয়ার আগেই আন্তর্জাতিক সিনেমা ভারতীয় ছবির বাজারটাকে ছিনিয়ে নিল!
পত্রিকা: সিনেমার প্রসঙ্গ এলে প্রায়ই আপনি খুব দার্শনিকসুলভ কথাবার্তা বলেন। কিন্তু গত এক বছরে ব্যবসায়িক পরিসংখ্যান বলছে সলমন খানের ‘বডিগার্ড’ অন্য সব হিন্দি ছবির চেয়ে বেশি ব্যবসা করেছে। সলমন নিজেকে যে উচ্চতায় নিয়ে গেছেন সেটাই কি নতুন বেঞ্চমার্ক?
শাহরুখ: দেখুন সলমনের পরিবারের প্রতি অসম্ভব শ্রদ্ধা আছে। সেলিম আঙ্কেল আর হেলেন আন্টি দু’জনেই আমার খুব ঘনিষ্ঠ। সলমনের এই সাফল্যে সত্যি আমি খুব খুশি। আমার ব্যাপারটা কী জানেন, আমি যখন ছবি করি, সেটা করি হৃদয় থেকে। শাহরুখ খানের সেই হৃদয় কোনও ব্যবসায়িক অঙ্কটঙ্ক বোঝে না।
পত্রিকা: তার মানে আপনি সত্যিই ‘রা-ওয়ান’ ছবিটা বানিয়েছেন আরিয়ান আর সুহানার জন্য?
শাহরুখ: হ্যাঁ। ওরা সাধারণত আমাকে খুব নরমসরম রোলে দেখে আসছে। ওদের এটাই দেখাতে চেয়েছি যে চাইলে আমিও মাচো হিরো হতে পারি! (হাসি) আমি সিরিয়াসলি চাই যে অ্যানিমেশন আর স্পেশাল এফেক্টসের এই ধারাটা খুব শিগগির আমাদের দেশে শুরু হোক। আমি চাই মানুষ বুঝুক আমরাও একেবারে চমৎকার নতুন কিছু করে দেখাতে পারি। এখানে বিশেষ কারও নাম করছি না তবে ইন্ডাস্ট্রির উঁচুতলার লোকজনেরা যদি ঝুঁকি না নেন, তা হলে কে ঝুঁকি নেবেন? যে সব পরিচালকের কিছুই নেই তাঁরা পর্যন্ত ইন্টারনেটের মাধ্যমে টাকা চেয়ে ছবি বানাচ্ছেন। সেটা কেন হবে? আমিই বা কেন ঝুঁকি নেব না! কাল আমি একটা নতুন প্রেমের গল্প নিয়ে ছবি বানাতে পারি। আমি ইচ্ছে করলে তা থেকে বিরাট অঙ্কের টাকা বানাতে পারি, যেটা লোকের ভাল লাগবে। কিন্তু আমি ঝুঁকি নিতে চাই। আমাকে সেটা নিতে দেওয়া হোক।
পত্রিকা: কিন্তু শাহরুখ, ১৫০ কোটি টাকার ছবিও তো বিরাট ঝুঁকি...
শাহরুখ: ব্যাপারটা এ ভাবে দেখলে কেমন হয়-- এই ইন্ডাস্ট্রিতে আমি ২০ বছর কাটিয়েছি। এর পর যদি আর ১০ বছর না টিকতে পারি তা হলে তার থেকে লজ্জার আর কী আছে? এ দেশে আমার বাড়িটা সব থেকে বড়, আমার খুব ভাল ভাল বন্ধু আছে, আমি হলাম সেই দুর্দান্ত শাহরুখ খান। সেই আমাকে আজ যদি আমার ছেলে এসে বলে যে, “বাবা, আমি তোমার ছবি দেখি না’, তা হলে আমার মুখটা কোথায় থাকবে? আমি চাই ও আমায় বলুক, “বাবা আমি আগে তোমার ছবি দেখব। তার পর হলিউডের ছবি।” আসলে আমাদের সিনেমাগুলো সব হঠাৎ করেই আর্ট-সিনেমা হয়ে গেছে। এটা একদম ঠিক হচ্ছে না। সারা পৃথিবী জুড়ে আমাদের বাণিজ্যিক ছবির রমরমা হোক এটাই তো চাইতে হবে। আরে বাবা পৃথিবীর জনসংখ্যার প্রতি পাঁচ জনের একজন ভারতীয়। তা হলে কেন আমরা দর্শক পাব না?
পত্রিকা: আপনার ছেলেমেয়েদের এ ছবি ভাল লেগেছে?
শাহরুখ: প্রথম স্ক্রিনিংয়ের সময়ই ওরা দেখেছিল। ওদের ছবি ভাল লেগেছে। তবে এটাও সেই সঙ্গে বলতে হয় ওরা কিন্তু খুব খুঁতখুঁতে। ছবি পুরোপুরি তৈরি হওয়ার আগে ওদের একদিন রাশ দেখিয়েছিলাম। ওরা বলল, “পাপা এগুলো ভাল লাগছে না।” তখন আমি বললাম চিন্তা কোরো না। বাবা এগুলো ঠিক করে দেবে। ‘রা-ওয়ান’-এ আরিয়ানের আমাকে ভাল লেগেছে। কিন্তু সুহানার ভাল লেগেছে করিনা কপূরকে।
পত্রিকা: করিনা ‘থ্রি ইডিয়টস’ করেছেন আমিরের সঙ্গে। সলমনের সঙ্গে ‘বডিগার্ড’ করেছেন। আর এ বার আপনার সঙ্গে ‘রা-ওয়ান’। উনি বলেছেন এ ছবিটি ওঁর কেরিয়ারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ছবি...
শাহরুখ: আরে আমি তো তাও বলব, আমার জন্য ওর সময় কোথায়? ও তো অন্য সব ছোটখাটো খানদের সঙ্গেই ছবি করতে ব্যস্ত। আমি ওকে সব সময় বলি তোমার উচিত সবচেয়ে বড় খানের সঙ্গে বেশি করে কাজ করা (খোলা হাসি)।
পত্রিকা: এর উত্তরে উনি কী বললেন?
শাহরুখ: (চোখ মেরে) ও বলে শাহরুখ আমি চিরকাল তোমার ‘ছম্মক ছল্লো’ হয়েই থাকব। |
|
|
|
|
|