এক বছর পরে ফের রাতে ট্রেন চলল জঙ্গলমহলে। আর সেটা কি না জ্ঞানেশ্বরী-নাশকতার স্মৃতি উস্কে দেওয়ার দিনেই! ঝাড়গ্রামের কাছে সর্ডিহায় রেললাইনে টিফিন কৌটো ঘিরে মাইন-আতঙ্কে কয়েক ঘণ্টা আটকে থাকার পরে বৃহস্পতিবার ফের ট্রেন চলল রাত ১১টা পেরিয়ে। ২০১০-এর ২৭ মে রাতে সর্ডিহার কাছেই রাজাবাঁধে হয়েছিল জ্ঞানেশ্বরী-কাণ্ড। তার পরে এই প্রথম রাত ১০টার পরে কোনও ট্রেন চলল জঙ্গলমহলের জঙ্গলপথে।
বৃহস্পতিবার রাত ১১টা। খড়্গপুর স্টেশনে ঘোষণা হল, ‘আপ স্টিল এক্সপ্রেস আর কিছু ক্ষণ পরেই ১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়বে’। যে ট্রেন অন্য দিন খড়্গপুর ছেড়ে যায় সন্ধ্যা ৭টা ১০-এ! ঘোষণা শুনে ফের ট্রেনে উঠলেন স্বরূপ পাল। গন্তব্য ঝাড়গ্রাম। কয়েক ঘণ্টা আটকে ছিলেন খড়্গপুরেই। স্বরূপবাবু বললেন, “জ্ঞানেশ্বরীর কথা কেউ ভুলিনি। যখন শুনলাম, ফের সেই সর্ডিহার কাছেই রেললাইনে কৌটো রয়েছে, বুক কেঁপে গেল। ভাগ্যিস আগেভাগেই খড়্গপুরে ট্রেন থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ভোগান্তি হল, এই যা।”
রেললাইনে টিফিন কৌটো পড়ে রয়েছে জানতে পারার পরেই রেল-কর্তৃপক্ষ সন্ধ্যা ৭টা থেকে খড়্গপুর-জামশেদপুর শাখায় আপ ও ডাউন লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেন। খড়্গপুরে থামিয়ে দেওয়া হয় স্টিল এক্সপ্রেস। চাকুলিয়া ও কলাইকুণ্ডায় দাঁড়িয়ে যায় ডাউন ও আপ দু’টি লোকাল। বম্ব স্কোয়াড ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে, কৌটোয় রয়েছে মাটি। পুলিশের তরফে সবুজ সঙ্কেত মেলে রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ। তার পরেই ফের বিভিন্ন স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনগুলিকে গন্তব্যে রওনা করানোর সিদ্ধান্ত নেন রেল কর্তৃপক্ষ। |
এই সিদ্ধান্ত ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন অনেকে। কারণ, জ্ঞানেশ্বরী-কাণ্ডের পর থেকেই রাতে জঙ্গলমহলে চলাচল বন্ধ রয়েছে হাওড়া-চক্রধরপুর-বোকারো প্যাসেঞ্জারের। তা নিয়ে বিস্তর ক্ষোভও রয়েছে কলকাতা-পুরুলিয়ার অনেক যাত্রীর। তবে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছনোর প্রয়োজন বিবেচনা করেই রাত হলেও বৃহস্পতিবার জঙ্গলপথে ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের এক আধিকারিক। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সৌমিত্র মজুমদার বলেন, “বম্ব স্কোয়াড পরিস্থিতির কথা জানানোর পরেই ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। রাত ১০ টা ৫০-এ আপ লাইনে প্রথমে একটি মালগাড়ি চালিয়ে দেখে নেওয়া হয়।”
তবে ছাড়লেও গতি খুব কম ছিল স্টিল এক্সপ্রেসের। ৪৫ মিনিটের পথ পেরোতে সময় নেয় ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট। রাত ১টা নাগাদ স্টিল এক্সপ্রেসে ঝাড়গ্রামে পৌঁছে (অন্য দিন পৌঁছয় রাত ৮টায়) স্থানীয় বাসিন্দা সুবিনয় ভুঁইয়া বলেন, “লাইনে মাইন-গোছের কিছু পড়ে রয়েছে জেনে কী ভাবেই বা ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চালাবে রেল! প্রাণ নিয়ে ফিরেছি, এই যথেষ্ট।” আর এক যাত্রী ঝাড়গ্রামেরই তপোব্রত চক্রবর্তীর বক্তব্য, “সবার আগে যাত্রী-সুরক্ষা। তবে রেলপথে এবং ট্রেনেও নিরাপত্তা বাড়ানো উচিত। ট্রেনের মধ্যে সে ভাবে নিরাপত্তাই ছিল না।”
ঝাড়গ্রামে বারে বারে মাইন-আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, ঝাড়গ্রামে আলাদা পুলিশ জেলাও হয়েছেকিন্তু বম্ব স্কোয়াডকে কেন মেদিনীপুর থেকে নিয়ে যেতে হয়সে প্রশ্নও তুলেছেন কিছু যাত্রী। তাঁদের বক্তব্য, মেদিনীপুর থেকে বম্ব স্কোয়াড যেতে অনেকটা সময় লেগেছে। না হলে হয়তো আরও আগেই ট্রেন ছাড়া যেত।
এ দিকে রাতের ট্রেন নিয়ে ভোগান্তির জেরে শুক্রবার সকালে টাটানগর স্টেশন থেকে হাওড়ামুখী স্টিল এক্সপ্রেস সাড়ে তিন ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ে। রেলের চক্রধরপুর ডিভিশনের মুখপাত্র অজিত হালদার বলেন, “গত কালের সর্ডিহার ঘটনায় এ দিন ট্রেন চলাচল কিছুটা ব্যাহত হয়েছে।” রেলের অন্য এক আধিকারিকের সংযোজন, “সর্ডিহা-কাণ্ডের জেরে জঙ্গলমহলে রাতে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করার চিন্তা-ভাবনাও ফের কিছুটা ধাক্কা খেল।” |