|
|
|
|
|
|
দক্ষিণ কলকাতা |
আটকাবে জল |
সংরক্ষণের প্রয়াস |
কৌশিক ঘোষ |
নিচু জমি। অল্প বৃষ্টিতেই এই জমিতে জল দাঁড়িয়ে যায়। কিন্তু সমস্যা হল, জল জমলেও তা আধ ঘণ্টার মধ্যেই নেমে যায়। টালিগঞ্জে গল্ফ ক্লাব রোডে এমনই হাল এই নিচু জমিটির। কলকাতা পুরসভার দাবি, এই নিচু জমিটি আসলে একটি পুকুর। মৎস্য দফতরের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে পুরসভা ওই পুকুরটি সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কলকাতা পুরসভার উদ্যান বিভাগের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, “এই নিচু জমিটি আসলে একটি পুকুর। এই পুকুরে যাতে জল থাকে সেই কারণে পুরসভা থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে, পুকুর সংরক্ষণ করার জন্য যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন তা এই মুহূর্তে নেই। মৎস্য দফতরের সঙ্গে যৌথ ভাবে এই প্রকল্পের পরিকল্পনা করলে অর্থের দিক থেকে কিছুটা সুরাহা হবে। এই ব্যাপারে মৎস্য দফতরের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করব।” |
|
কলকাতা পুরসভার ৯৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত প্রায় পাঁচ হাজার বর্গমিটার এলাকা জুড়ে এই নিচু জমিটি রয়েছে। এর পাশে রয়েছে একটি পুকুর। তার আয়তনও প্রায় তিন হাজার বর্গমিটার। বর্তমানে নিচু জমিটি এবং তার সংলগ্ন পুকুরের মাঝখান দিয়ে একটি রাস্তাও রয়েছে। বাসিন্দারা জানান, এই নিচু জমিটিতে আগে সারা বছরই জল থাকত। এই জমিটি এলাকায় পুকুর হিসেবেই চিহ্নিত ছিল। বর্তমানের নিচু জমি এবং পাশের পুকুর মিলিয়ে এলাকায় একটি বড় পুকুরই ছিল। এই বড় পুকুরের মাঝখান দিয়ে রাস্তা বের করে দু’টি পুকুর তৈরি করা হয়। বর্তমানে যে নিচু জমি পুকুর হিসেবে চিহ্নিত সেই পুকুরের জল শুকিয়ে গিয়েছে। কিন্তু তার পাশের পুকুরের জলে কোনও টান পড়েনি বলে বাসিন্দারা জানান।
স্থানীয় কাউন্সিলর সেতাবুদ্দিন খন্দকার বলেন, “ঠিক কী কারণে এই পুকুরে জল দাঁড়ায় না তা সঠিক জানা নেই। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে প্রাথমিক ভাবে কথা বলে জানা গিয়েছে, এই পুকুরে বালির স্তর পড়েছে। তা বৃষ্টির জল শুষে নেয়। ফলে জল দাঁড়ায় না। এই বালির স্তর সরিয়ে মাটির আস্তরণ তৈরি করলে তবেই ফের পুকুরে জল ধরে রাখা সম্ভব। তবে, তার জন্য প্রয়োজন অর্থ বরাদ্দের।”
গল্ফ ক্লাব রোডে এই নিচু জমি এবং তার সংলগ্ন পুকুর কলকাতা উন্নয়ন পর্যদের (কেআইটি) অধীনে ছিল। কিন্তু অনেক দিন ধরেই এখানে জঞ্জাল ফেলা হত। এলাকার বাসিন্দা অরুণ রায় বলেন, “আশপাশের এলাকা থেকে বেশ কিছু লোক এই পুকুরের ধারে জঞ্জাল ফেলে পুকুর ভরাট করছিল। এ ছাড়া, এই পুকুরের ধারে কিছু জনবসতিও ছিল। এর বিরুদ্ধেই বাসিন্দারা আন্দোলন গড়ে তোলেন। এর পরে কেআইটি পুকুর বাঁচিয়ে এখানে রাস্তা তৈরি করে। কিন্তু বর্তমানের নিচু জমিটিতে যেখানে আগে সারা বছর জল থাকত তা শুকিয়ে যায়। এখন তো জলই থাকে না।” |
|
পুরসভা সূত্রে জানানো হয়, ১৯৮০ সাল নাগাদ কেআইটি পুকুরের মাঝখান দিয়ে একটি রাস্তা তৈরি করে। ফলে, পুকুরটি দু’ভাগ হয়ে যায়। তারপর থেকেই নিচু জমিটি এই অবস্থায় পড়ে ছিল। এই নিচু জমিটির ধারে বেশ কিছু লোক বসবাস করতে শুরু করে। জায়গাটিও ক্রমশ নোংরা হয়। কিন্তু যেহেতু এই জায়গাটি কেআইটি-র সেই কারণে পুরসভার পক্ষে তখন কিছু করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে, ২০০৬ সালে কেআইটি কলকাতা পুরসভাকে এই জায়গাটি হস্তান্তর করে। বর্তমানে এই নিচু জমিটির এক দিকে পড়ে রয়েছে জঞ্জালের স্তূপ। ইতস্তত ছড়িয়ে রয়েছে প্লাস্টিকও।
সেতাবুদ্দিন খন্দকার বলেন, “পুকুরের ধারে যাঁরা বাস করছিলেন তাঁদেরকে সরিয়ে কলকাতা পুরসভা এবং স্থানীয় সাংসদ তহবিলের টাকায় এই পুকুরের ধার রেলিং দিয়ে সাজানো হয়। গাছও পোঁতা হয়। পুকুরের ধারে রাস্তা নির্মাণ হয়। কিন্তু অর্থাভাবে পুকুরটি সংস্কার করা সম্ভব হয়নি।” এই পুকুর সংস্কার করতে হলে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করতে হবে বলে তিনি জানান। গত পুরবোর্ডের আমলে সংস্কারের জন্য পুর-কর্তৃপক্ষ পুকুরটি পরিদর্শন করেছিলেন। বর্তমান পুরবোর্ডের আমলেও মেয়র পারিষদ পুকুরটি পরিদর্শন করেন। কিন্তু টাকার অভাবে প্রকল্পটির রূপায়ণ সম্ভব হয়নি। তবে, পুরসভার জঞ্জাল বিভাগকে দিয়ে এই পুকুরের আশপাশ পরিষ্কার রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
|
ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য |
|
|
|
|
|